ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রজননক্ষম রোগীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক হচ্ছেন নারী। গর্ভকালীন ২ থেকে ৫ শতাংশ নারী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। এঁদের মধ্যে ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ মা গর্ভজনিত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন এবং ১২ দশমিক ৫ শতাংশ মা গর্ভধারণের আগে থেকেই ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন।
যেসব ডায়াবেটিক নারী সন্তান ধারণ করতে ইচ্ছুক, তাঁদের জন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত সতর্কতা ও সঠিক পূর্বপ্রস্তুতি। কেননা, ডায়াবেটিসজনিত বিভিন্ন জটিলতা যেমন রেটিনা-কিডনি-স্নায়ু-রক্তনালির রোগ গর্ভকালীন জটিলতর হতে পারে। যাঁদের শর্করা নিয়ন্ত্রিত নয়, তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন গর্ভকালীন জটিলতার ঝুঁকি বেশি। যেমন: গর্ভপাত, প্রি-একলাম্পসিয়া, মেয়াদের আগেই প্রসব ইত্যাদি। মায়ের রক্তে উচ্চ শর্করা গর্ভের শিশুর বিভিন্ন ক্ষতি ঘটাতে পারে, যেমন: গর্ভে মৃত্যু, বিকলাঙ্গতা, স্থূলতা, প্রসবকালীন বিভিন্ন আঘাত ইত্যাদি।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীর গর্ভধারণের প্রস্তুতি কমপক্ষে তিন মাস আগে শুরু করা জরুরি।
মানসিক প্রস্তুতি
সন্তান ধারণের পরিকল্পনার সময়ই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রত্যেক মা এবং তাঁর পরিবারের সবার বিস্তারিত ও সঠিকভাবে জেনে নেওয়া উচিত যে কীভাবে ডায়াবেটিস ও গর্ভধারণ একে অপরকে প্রভাবিত করে, কী কী জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে এবং তা প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায় কী।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস
সন্তান ধারণের আগে থেকেই শর্করা নিয়ন্ত্রণে সুষম কিন্তু পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের সাহায্য নিন। গর্ভধারণ পরিকল্পনা শুরু থেকে গর্ভকালীন ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিদিন ৫ মিলিগ্রাম ফলিত অ্যাসিড ট্যাবলেট সেবন করুন, যা শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতা প্রতিরোধে উপকারী। রক্তশূন্যতা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সঠিক ওজন
গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতা এড়াতে সঠিক ওজনে আসুন। যাঁদের বিএমআই ২৭ বা তার বেশি, তাঁদের ওজন কমানো জরুরি।
শর্করা নিয়ন্ত্রণ
বাড়িতে নিয়মিত খাওয়ার আগে ও দুই ঘণ্টা পর রক্তের শর্করা মাপুন এবং এগুলো যথাক্রমে ৬ দশমিক ৫ এবং ৮ দশমিক ৫-এর নিচে রাখুন। গড় এইচবিএ১সি ৬ দশমিক ৫-এর নিচে অর্জন করুন। শর্করার সঠিক মাত্রা অর্জন করতে গর্ভধারণের তিন মাস আগে থেকে মুখে খাওয়ার ওষুধ পরিবর্তন করে ইনসুলিন ব্যবহার শুরু করুন।
আনুষঙ্গিক ওষুধ
যাঁরা উচ্চরক্তচাপের জন্য থায়াজিড এআরবি-জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করছেন, তাঁরা গর্ভধারণের আগেই এগুলো পাল্টে নিন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অন্য ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করুন।
গর্ভধারণের সময় রক্তে চর্বি বা কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ খাওয়া যাবে না।
ডায়াবেটিসজনিত বিভিন্ন জটিলতা
গর্ভধারণের আগে ডায়াবেটিসজনিত রেটিনার জটিলতা, কিডনি জটিলতা, বিভিন্ন রক্তনালির রোগ আছে কি না, তা শনাক্ত করে প্রয়োজনে চিকিৎসা নিন। কেননা, গর্ভকালীন এসব বেড়ে যেতে পারে। ধূমপান বা অ্যালকহল অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ
কিডনির জটিলতা অর্থাৎ রক্তে ক্রিয়েটিনিন ২ মিলিগ্রাম বা তার বেশি, সিসিআর ৪৫ মিলি/মিনিট-এর কম, প্রস্রাবে আমিষের পরিমাণ দিনে ২ গ্রাম বা তার বেশি, রেটিনা জটিলতার সর্বোচ্চ ধাপ, রক্তনালিজনিত হূদেরাগ, এইচবিএ১সি ১০ শতাংশ বা তার বেশি—এই সব ক্ষেত্রে গর্ভধারণ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
ডা. নাজমুল কবীর কোরেশী
মেডিসিন বিভাগ, ইউনাইটেড হাসপাতাল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ১০, ২০১৩
Leave a Reply