অক্টোবর দুনিয়াজুড়ে স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাস হিসেবে পরিচিত। স্তন ক্যানসার নির্ণয়ে ম্যামোগ্রামের গুরুত্ব অনেক। লক্ষণ প্রকাশের বেশ আগেই স্তন ক্যানসার নির্ণয় করা যায় বলেই ‘স্ক্রিনিং ম্যামোগ্রাম’ বর্তমান সময়ের আলোচিত পরীক্ষা। কারণ, দ্রুত শনাক্ত করা গেলেই উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করে দ্রুত স্তন ক্যানসার নিরাময় করাও সম্ভব।
স্তনের একটি বিশেষ ধরনের স্বল্পমাত্রার এক্স-রেকে বলা হয় ম্যামোগ্রাম। ক্যানসারসহ নানা রোগ নির্ণয় করতে এ পরীক্ষা করা হয়। দুই ধরনের ম্যামোগ্রাম প্রচলিত। যেমন প্রচলিত (কনভেনশনাল) ফিল্ম স্ক্রিন ও ডিজিটাল ম্যামোগ্রাম, যার মধ্যে ডিজিটাল ম্যামোগ্রামই দ্রুত এবং প্রাথমিক পর্যায়ের স্তন ক্যানসার নির্ণয়ে বেশ কার্যকর। হাত দিয়ে অনুভব করা যায় না এমন প্রাথমিক ক্যানসারও ম্যামোগ্রামের মাধ্যমে নির্ণয় করা সম্ভব।
আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির নির্দেশনা অনুযায়ী ৪০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারী, যাঁদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, তাঁদের বছরে একবার ম্যামোগ্রাম করানো দরকার। এমনটাই মত দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। ৫০ থেকে ৫৯ বছর বয়সী সব নারীর প্রতি দুই বছরে অন্তত একবার ম্যামোগ্রাম করা উচিত। ৭০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের জন্যও চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী এ পরীক্ষা করা যেতে পারে।
ম্যামোগ্রাম করার সময় স্তনকে একটি প্লাস্টিক প্লেটের ওপর রাখা হয়। স্তনের উচ্চতা ও গঠন অনুযায়ী এই প্লেটের ওপরে স্তনকে বসানো হয়। দ্বিতীয় একটি প্লেটের মাধ্যমে ওপর থেকে স্তনকে চাপ দেওয়া হয়। এই চাপ প্রয়োগের কারণে স্তনকোষ প্লেট দুটির মাঝখানে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে স্তনে সামান্যতম সমস্যা থাকলে সেটিও এক্স-রেতে ধরা পড়ে। প্রতিটি স্তনের জন্য ওপর থেকে দুটি এবং পাশ থেকে দুটি করে মোট চারটি এক্স-রে নেওয়া হয়। পুরো পরীক্ষায় প্রায় ১০ মিনিট সময় লাগে। পরীক্ষাটি রোগীর জন্য খানিকটা অস্বস্তিকর। এতে সামান্য ব্যথা অনুভূত হতে পারে। তবে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করলে এবং পিরিয়ড শেষ হওয়ার ঠিক পরপরই এ পরীক্ষা করলে মোটামুটি ব্যথা ছাড়াই ম্যামোগ্রাম করা সম্ভব।
খুব স্বল্পসংখ্যক নারীর ম্যামোগ্রামের ফলাফল খারাপ হতে পারে। তবে যেকোনো সমস্যা চিহ্নিত হলেই তাৎক্ষণিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, ধারাবাহিক ম্যামোগ্রাম প্রথম পরীক্ষার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান ও আগের ম্যামোগ্রামের সঙ্গে তুলনা করে স্তন ক্যানসারের সামান্যতম লক্ষণও দ্রুত চিহ্নিত করা সম্ভব হতে পারে।
শাহনাজ চৌধুরী
লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও অনকো-রেডিওলজিস্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ০৯, ২০১৩
Leave a Reply