বাংলাদেশে এই প্রথম মানবদেহে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লুর সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। রাজধানীর কমলাপুর এলাকার ১৬ মাস বয়সী এক ছেলেশিশুর শরীরে এই জীবাণু সংক্রমণের নিশ্চিত তথ্য দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল-সিডিসি। তবে শিশুটি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। প্রায় চার মাস আগে গত ২৯ জানুয়ারি তার ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক খবর পাওয়া গিয়েছিল।
গত বুধবার সিডিসির প্রতিবেদন দেশে এসে পৌঁছায়। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা· মোয়াজ্জেম হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আটলান্টার সিডিসির প্রতিবেদন পাওয়ার পর গতকাল এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জাসংক্রান্ত জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সভায় বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়। সভায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে বার্ড ফ্লু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বার্ড ফ্লু আক্রান্ত শিশুটি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। যে সময় সে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়, তার কিছুদিন আগে তার বাবা বাড়িতে একটি মুরগি কিনে আনেন। সে সময় মুরগিটি জবাই না করে কয়েক দিন বাড়িতে রেখে দেওয়া হয়েছিল। এ সময় শিশুটি মুরগির সংস্পর্শ পায়।
আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ১২টি হাসপাতালে আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবির যৌথ উদ্যোগে পরীবীক্ষণ ব্যবস্থা চালু আছে। কমলাপুরের একটি হাসপাতালে চালু হওয়া পরীবীক্ষণ কেন্দ্রে ওই শিশুটিকে তার বাবা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত অবস্থায় নিয়ে আসে। সে সময় তার নমুনা পরীক্ষা করে শরীরে ‘এ পজিটিভ’ ধরনের এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু তা বিপজ্জনক ‘এইচ৫ নেগেটিভ’ বলে পরীক্ষায় বেরিয়ে আসে। এরপর আইইডিসিআরের তত্ত্বাবধানে ১৪ দিন চিকিৎসার পর শিশুটি সুস্থ হয়ে ওঠে।
গত এপ্রিল মাসে সরকার কমলাপুর পরীবীক্ষণ কেন্দ্রের ১০টি নমুনা যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় সিডিসিতে পাঠালে সেখানকার পরীক্ষায় শিশুটির ‘এইচ৫এন১’ ধরনের ভাইরাস সংক্রমণের ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক ড· মোয়াজ্জেম হোসেন বিবিসিকে জানান, ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩২৬টি নমুনা যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসিতে পাঠানো হয়েছে।
এর চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ড· মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ঢাকার জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে সরকার একটি এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ইউনিট চালু করবে। এ ছাড়া ৩০টি জেলায় এ ধরনের রোগীদের জন্য পৃথক ইউনিট স্থাপন করা হবে। আগামী মাসে এ কাজ শেষ হবে। এর বাইরে জুলাইয়ে আরও ২৫ থেকে ৩০টি জেলায় এ ধরনের পৃথক ইউনিট চালুর কাজ শুরু হবে।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শিশুটি এখন কারও জন্য ভয়ের কারণ নয়। তবে হাঁস-মুরগি থেকে যেন বার্ড ফ্লু জীবাণু মানবদেহে না আসতে পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে তিনি অসুস্থ হাঁস-মুরগির কাছে না যাওয়া, কাঁচা ডিম ও আধাসিদ্ধ ডিম না খাওয়া, হাঁস-মুরগি জবাই ও কাটার সময় মুখে কাপড় বেঁধে নেওয়া, পরে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো।
Leave a Reply