পেট নিয়ে যেন ভোগান্তির শেষ নেই। প্রায়ই পেট মোচড় দিয়ে বা কামড়ে ধরে দিনে দু-তিনবার নরম-পিচ্ছিল আমযুক্ত মল হয়। কখনো আবার কয়েক দিন হয়-ই না—কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে যায়। প্রায়ই পেটে শব্দ হয়, বদহজম হয়, কিছু খেলে অস্বস্তি হয়। খাবার পরই প্রচণ্ড মলের বেগ হয়, পেট কামড়ায় আবার মলত্যাগের পর ব্যথা সেরেও যায়।
একের পর এক ডাক্তার দেখিয়েছেন, হরেক রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করিয়েছেন অনেক। কিন্তু কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি। এদিকে ভোগান্তিও তো কমছে না। এমন যদি হয়, তবে আপনি ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএসে ভুগছেন। আইবিএসকে আমাদের দেশে অনেকে পুরোনো আমাশয় বলেন।
আইবিএসে আক্রান্ত হলে সাধারণত পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কোনো সমস্যা পাওয়া যায় না। দীর্ঘদিনের বদহজম ও পেটের সমস্যা থাকলেও এ কারণে ওজন হ্রাস, রক্তশূন্যতা, ভিটামিনের অভাবজনিত মুখে ঘা বা অন্যান্য উপসর্গও থাকে না। তবে চল্লিশোর্ধ নারী-পুরুষের এসব সমস্যা দেখা দিলে অন্ত্রের কোনো জটিল রোগ আছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যেতে পারে। কিন্তু বারবার একই পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি করা বা বারবার অকারণে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া ঠিক নয়।
আইবিএসের স্থায়ী কোনো সমাধান নেই, উপসর্গ বুঝে চিকিৎসা। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে আঁশযুক্ত খাবার খান, ইসবগুল খেতে পারেন। মল নরম হলে দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য, শাক ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে চিকিৎসক কিছু উপসর্গ দূর করার ওষুধ দিতে পারেন। এর চিকিৎসায় মানসিক উদ্বেগ বা বিষণ্নতা দূর করে এমন ওষুধ, সাইকোথেরাপি, শিথিলায়ন, যোগব্যায়াম ইত্যাদি পদ্ধতিরও ভূমিকা আছে। সুনিয়ন্ত্রিত ও সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করুন, সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন ও মানসিক চাপ কমান।
১. শরীরের সঙ্গে মন ও স্নায়ুর যে সম্পর্ক রয়েছে, তাতে সমস্যা হলে এ রোগের উৎপত্তি
২. অন্ত্রের পেশি, মানসিক চাপ, জীবাণুজনিত প্রদাহ ইত্যাদির সমন্বয়ে এ সমস্যা দেখা দেয়
৩. নির্ঘুম, বিষণ্নতা ও উদ্বেগ এ রোগের ঝুঁকি বাড়ায়
৪. উপমহাদেশে পুরুষেরাই এ রোগে বেশি ভুগছেন
ডা. আ ফ ম হেলালউদ্দিন
মেডিসিন বিভাগ, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৩
Leave a Reply