ভিটামিন হলো খাদ্যের একটি অত্যাবশ্যকীয় জৈব রাসায়নিক উপাদান, যা শরীরের ভেতরে তৈরি হয় না এবং অবশ্যই খাবার থেকে গ্রহণ করতে হয়।আমাদের ধারণা, ভিটামিন শরীরে শক্তি জোগায়, ভিটামিন খেলে দুর্বলতা কমবে বা খারাপ স্বাস্থ্য ভালো হবে। আসলে ধারণাটা ঠিক নয়।
ভিটামিন থেকে শরীরে সরাসরি কোনো শক্তি উৎপন্ন হয় না। তবে বিভিন্ন প্রকার খাদ্য, যেমন শর্করা, আমিষ ও স্নেহজাতীয় খাবারের বিপাক-প্রক্রিয়ায় ভিটামিন অংশ নেয়। ফলে দেহে কোনো একটি ভিটামিনের অভাব হলে সেই নির্দিষ্ট উপাদানের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়।জৈব রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ভিটামিনকে সাধারণত পানিতে ও চর্বিতে দ্রবণীয় এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন হচ্ছে এ, ডি, ই, কে। পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন বি এবং সি।পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন শরীরে বেশি জমা থাকে না। ফলে কিছুদিন এই ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ না করলে দ্রুত এর অভাব দেখা দেয়। চর্বিজাতীয় ভিটামিন শরীরে বেশি দিন বেশি পরিমাণে জমা থাকে বলে কিছুদিন এটি খাবারে না গ্রহণ করলেও সহজে সমস্যা হয় না।
ভিটামিন এ-এর অভাবে রাতকানা, খসখসে ত্বক, রোগপ্রতিরোধক্ষমতা হ্রাস হতে পারে। ভিটামিন ডি-এর অভাবে শিশুদের পা বাঁকা বা রিকেটস এবং বড়দের হাড় ক্ষয় বা অস্টিওমেলেশিয়া রোগ হয়। ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিনের মধ্যে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স নানা ভিটামিনের সমন্বয়। এদের অভাবে বেরিবেরি রোগ, ঠোঁটের কোণে ঘা, অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি হতে পারে। আবার ভিটামিন সি-এর অভাবে হতে পারে স্কার্ভি।
প্রয়োজনীয় ভিটামিনের সব কটিই সুষম খাদ্যের মাধ্যমে পাওয়া যাবে। একই খাবারে সব ধরনের ভিটামিন পাওয়া যায় না। তাই সব ধরনের খাবারই খেতে হবে। বিভিন্ন ধরনের রঙিন শাকসবজি, যেমন গাজর, লালশাক, মিষ্টি কুমড়া, মাছের তেল, অঙ্কুরিত ছোলা, বাঁধাকপি, পালংশাক, ফুলকপি ইত্যাদিতে চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন বেশি পাওয়া যায়। সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-এর অন্যতম উৎস। আর তাজা ফলমূল, শাকসবজি, ঢেঁকিছাঁটা চাল ছাড়াও দুধ, ডিম, কলিজা, অর্থাৎ প্রাণিজ আমিষ ইত্যাদিতে পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। টক ফলে আছে প্রচুর ভিটামিন সি। আর ভিটামিন ই-এর উৎস বিভিন্ন ধরনের ভোজ্য তেল। তাই শাকসবজি সামান্য তেল দিয়ে রান্না করা উচিত। সঠিক খাদ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ভিটামিন গ্রহণ করলে বাড়তি ভিটামিন বড়ির কোনো প্রয়োজন হবে না।
অধ্যাপক এ এইচ এম রওশন
গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগ,
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৩
Leave a Reply