এখন প্রায়ই বৃষ্টি হচ্ছে। এখানে-সেখানে পানি জমছে। ঠিক এ সময়েই এই জমে থাকা পানিতে একধরনের মশা ডিম পাড়ার সুযোগ পাচ্ছে। দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটাচ্ছে। সেই মশার নাম হলো এডিস মশা। আর এই মশা থেকে ডেঙ্গু জ্বর নামক ভাইরাস জ্বর হয়ে থাকে।
এই এডিস মশা শুধু দিনের বেলায় কামড়ায়। ফলে দিনের বেলাতেই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। আর দশটা সাধারণ রোগের মতো ডেঙ্গু জ্বরেও ভয়ের কিছু নেই। এর সুচিকিৎসার সুযোগ যেমন আছে, তেমনি আছে প্রতিরোধের সব ধরনের ব্যবস্থা।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম মুজিবুর রহমান বলেন, ভাইরাসজনিত অন্যান্য রোগের মতো এরও কোনো প্রতিষেধক নেই, টিকাও নেই। লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হয়। অন্যান্য ভাইরাল জ্বরের মতো এটিও আপনা-আপনি সাধারণত পাঁচ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।
লক্ষণ
হঠাৎ উচ্চমাত্রার জ্বর, কাঁপুনি দিয়ে আসে এবং কখনো কখনো তা ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে
প্রচণ্ড মাথাব্যথা থাকে
সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়
চোখের পেছনের দিকে বেশ ব্যথা হয়
তিন-চার দিন পর শরীরে লালচে দাগ বা র্যাশ উঠতে পারে
এদের মধ্যে যাদের ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা জ্বর হয়, তাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তপাত হয়। যেমন ত্বকের নিচে কালচে চাকা চাকা দাগ, দাঁতের মাড়ি ও নাক দিয়ে রক্ত পড়া, চোখ লাল এবং রক্ত বমি বা কালো পায়খানা হতে পারে। মেয়েদের ক্ষেত্রে অসময়ে মাসিক হতে পারে।
এসব উপসর্গের পাশাপাশি প্রচণ্ড দুর্বলতা, অরুচি, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে ব্যথা ইত্যাদি থাকতে পারে।
লক্ষণ দেখে সহজেই ডেঙ্গু জ্বর নির্ণয় করা যায়। রক্তের অল্প কিছু পরীক্ষার দরকার হয়। অযথা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার হয় না।
চিকিৎসা
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা কেবল উপসর্গভিত্তিক। জ্বর হলে পূর্ণ বিশ্রামে থাকুন। বেশি করে পানি পান করুন। স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে বারবার শরীর মুছে দিতে পারেন। জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাওয়া যাবে। তবে কোনো অবস্থাতেই অ্যাসপিরিন বা এ-জাতীয় ব্যথার ওষুধ খাওয়া যাবে না। হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর বা শক সিনড্রোমের উপসর্গ দেখামাত্রই রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে।
প্রতিরোধ
যেহেতু এটি একটি মশাবাহিত রোগ, সেহেতু মশার বংশবৃদ্ধি রোধ, নিধন ও প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ঘরবাড়ি ও এর চারপাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ক্যান, টিনের কৌটা, মাটির পাত্র, বোতল, নারকেলের মালা ও এ-জাতীয় পানি ধারণ করতে পারে এমন পাত্র ধ্বংস করে ফেলতে হবে, যেন পানি জমতে না পারে। গোসলখানায় বালতি, ড্রাম, প্লাস্টিক ও সিমেন্টের ট্যাংক কিংবা মাটির গর্তে চার-পাঁচ দিনের বেশি কোনো অবস্থাতেই পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। ঘরের আঙিনা, ফুলের টব, বারান্দা, বাথরুম, ফ্রিজের নিচে ও এসির নিচে জমানো পানি নিয়মিত পরিষ্কার করা, যাতে বংশবৃদ্ধি করতে না পারে। দিনের বেলায় এডিস মশা কামড়ায় বলে দিনের বেলাতেও মশারির নিচে ঘুমানো। বাচ্চাদের হাফপ্যান্টের বদলে ফুলপ্যান্ট পরানো। আক্রান্ত রোগীকে পৃথক বিছানায় মশারির ভেতর রাখতে হবে। ঘরের দরজা, জানালা ও ভেন্টিলেটরে মশানিরোধক জাল ব্যবহার করুন।
শরিফুল ইসলাম
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৩
Leave a Reply