সুন্দর ফুটফুটে শিশু, সুডোল নিখুঁত মুখাবয়ব, সবার অজস্র আদর আর সপ্রশংস দৃষ্টি, এভাবেই বেড়ে উঠছিল। ৬-৭ বছর বয়সের সময় দুধ দাঁত পড়ার পর প্রথম স্থায়ী দাঁত দেখা গেল আঁকাবাঁকা হয়ে উঠছে। এ ক্ষেত্রে হয়তো বা এগিয়ে এলেন মুরব্বিরা বা আত্মীয়স্বজন। শঙ্কিত বাবা-মাকে দিলেন অভয় ‘না, একসময় ঠিক হয়ে যাবে’। ঠিক হয়েও যায় কিছু ক্ষেত্রে, কিন্তু বিপত্তি ঘটে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। এর মধ্যে ব্যস্ত হয়ে যান বাবা-মা। শিশুর স্কুলে ভর্তি, পড়াশোনা ও পরীক্ষা নানান ঝামেলা। সময় হয়ে ওঠে না কোনো অভিজ্ঞ দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার।
এরপর দেখা গেল অবস্থা খারাপ। উঁচু অথবা আঁকাবাঁকা দাঁত, মোটা বা ঝুলে পড়া ঠোঁট, এর ফাঁক দিয়ে বের হয়ে আসা উঁচু দাত বা অন্য রকমের অসমাঞ্জস্যতা। ফলে মাথায় হাত বাবা মায়ের। দৌড়াও ডাক্তারের কাছে। এই অসামঞ্জস্যতা সম্পূর্ণ ঠিক করা অনেক ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ দন্ত চিকিৎসকের জন্যও কঠিন হয়ে পড়ে। এর ব্যয়বহুলতায় দ্বিতীয়বার মাথায় হাত উঠতে পারে অনেকের। অথচ সঠিক সময়ে সামান্য সচেতনতা রক্ষাকবচ হতে পারে মুখাবয়ব তথা দাঁতের সৌন্দর্যের।
হ্যাঁ, সে জন্য বলছি, দাঁত ওঠার আগে ও পরে কিছু সতর্ককতা, অভ্যাস ও নিয়ম কানুনসহ অভিজ্ঞ দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললেই আঁকাবাঁকা দাঁত ও মুখাবয়বের অসমাঞ্জস্যতা রোধ করা সম্ভব। গর্ভাবস্থায় স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে খাবার ও ওষুধ গ্রহণ করতে হবে অন্যথায় এর প্রভাবে শিশুর মুখ ও দাঁত তথা শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের গঠনগত বিকৃতি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে মায়েদের গর্ভকালীন পরিচর্যা ও পুষ্টিকর খাবার শিশুদের মুখের গঠনে হাড় ও অন্যান্য টিসু তথা দাঁতের স্বাভাবিক গঠনের নিয়ামক হয়ে যায়।
শিশু জন্মের পর যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবেঃ
০ পুষ্টিকর সুষম খাবার নিশ্চিত করা, যা স্থায়ী দাঁতসহ চোয়ালের হাড়ের সঠিক গঠনে সহায়ক।
০ কিছু অভ্যাস যেমন আঙুল, ঠোঁট ও কাঠি ইত্যাদি চোষা বন্ধ করা যা পরে চোয়াল, দাঁত উঁচু-নিচুসহ বিভিন্ন বিকৃতি ঘটাতে পারে।
০ শিশুর প্রথম দাঁত ওঠার পর থেকে এর পরিচর্যায় খেয়াল রাখতে হবে। প্রথম দিকে শিশুর খাবারের পর নরম ও পরিষ্কার ভেজা কাপড়ের সাহায্যে আলতো করে মুছে দিতে হবে, বিশেষ করে রাতের বেলা। পরে শিশু যখন নিজে ব্রাশ করা শিখবে তখন একজন অভিজ্ঞ দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক নিয়মে ব্রাশ করার পদ্ধতি জেনে নিতে হবে। অন্যথায় মুখের অপরিচ্ছন্নতার জন্য দন্তক্ষয় রোগে আক্রান্ত হয়ে দাঁত অকালে পড়ে গেলে, তা দুই ধরনের মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এক. চোয়ালের স্বাভাবিক গঠন ও বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে। দুই. উদীয়ামান স্থায়ী দাঁতের স্থান বিচ্যুতি করে আঁকাবাঁকা করে দেয়। এ জন্য দাঁত ওঠার পর থেকে নিয়মিত দন্ত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ জরুরি।
০ দাঁত ওঠার পর শিশুরা যাতে নিয়মিত ও সঠিক নিয়মে দাঁত পরিষ্কার করে এ ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। রাতের খাবারের পর ব্রাশ করা শিশুসহ সবার জন্যই জরুরি। শিশুরা তো চকোলেট-ক্যান্ডি নানা রকমের মিষ্টি হরহামেসা খাচ্ছে। খাবে, তবে একটু কম খাওয়া ভালো অন্য কারণে। তা হলো নিয়ন্ত্রণহীন চকোলেট, ক্যান্ডি, হালকা পানীয় শিশুদের অতিরিক্ত মোটা করে দেয় যা ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর একটা কথা সবসময় খেয়াল রাখতে হবে তা হলো যখনই যা কিছু খাবে অবশ্যই যেন ভালো করে কুলকুচা কুলি করা হয়। খাবারের পর ভালো করে কুলকুচা কুলি করা দাঁত ভালো রাখার মহা ওষুধ।
———————-
ডা. ইব্রাহীম খলিল
লেখকঃ সন্ধানী ডেন্টাল কেয়ার, উত্তর শাহজাহানপুর, ঢাকা।
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ০৪ মে ২০০৮
Leave a Reply