ঈদে সব বাড়িতেই কম-বেশি মজার মজার রান্না হয়। শুধু নিজের বাড়িতে নয়, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের বাড়িতেও খেতে হয় নানা পদের খাবার। তবে এই আনন্দের মধ্যেও আমাদের একটু নজর দেওয়া দরকার, আমরা কী খাচ্ছি, কতটুকু খাচ্ছি। ঈদ হলেও খাবার খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে, ক্যালরি মেপে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এম আখতারুজ্জামান বলেন, আনন্দের এই দিনে খাবারটা আসলে পরিমাণে বেশি খাওয়া হয়। এর চাপ পড়ে পেটের ওপর। অনেকেই একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণ তৈলাক্ত বা চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে তা হজম করতে পারেন না। ফলে পেট ফাঁপে, জ্বালাপোড়া করে, ব্যথা করে, বারবার পায়খানা হয়। যদিও সাধারণভাবে কোনো নির্দিষ্ট খাবার খেতে মানা নেই, কিন্তু পরিমাণ বজায় রাখাটা খুবই জরুরি। ভাজাপোড়া ও চর্বিজাতীয় খাবারের পাশাপাশি ফলমূল বা ফলের রসজাতীয় খাবার বেশি করে খাবেন। ঈদের দিনে খাবারের তালিকায় স্বাভাবিকভাবেই মিষ্টিজাতীয় খাবার বেশি থাকে। এ ছাড়া পোলাও, মুরগি, গরু বা খাসির মাংস, কাবাব ইত্যাদি ঝাল খাবারও থাকে। এ ছাড়া আছে চটপটি, দইবড়া কিংবা বোরহানির মতো খাবারও। যাদের বয়স কম এবং শারীরিক কোনো সমস্যা নেই, তাঁরা নিজের পছন্দমতো সবই খেতে পারেন।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্ট্রালজি বিভাগের অধ্যাপক এ এইচ এম রওশন বলেন, রোজায় এক মাসের অনভ্যাসের কারণে হঠাৎ খুব বেশি ঝাল বা তৈলাক্ত বা ভাজাপোড়া খেলে অসুস্থতা বোধ হতে পারে। তাই সবার উচিত কম মসলাযুক্ত, কম তৈলাক্ত ও ভালোভাবে রান্না করা খাবার হওয়া। যাদের পেটের সমস্যা আছে, তাদের অতিরিক্ত ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করা উচিত।
ডায়াবেটিক রোগীকে অবশ্যই মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। খাবারের পরিমাণটা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে বড় কথা, এসব খাবার এক বেলাই খাওয়া উচিত, অন্য বেলা স্বাভাবিক খেতে হবে। রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এদিন একটু বেশি হাঁটাহাঁটি করতে পারেন, প্রয়োজনে ডায়াবেটিসের ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা একটু বাড়াতে হতে পারে। এ ব্যাপারে ঈদের আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কিডনির সমস্যা থাকলে আমিষজাতীয় খাদ্য, যেমন মাছ-মাংস অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দিনে দুই টুকরার বেশি নয়।
যাঁদের রক্তে কোলেস্টেরল বেশি বা উচ্চ রক্তচাপ আছে, অথবা হার্টের সমস্যা আছে অথবা যাঁরা মুটিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের অবশ্যই তেল ও চর্বি এড়িয়ে যেতে হবে। ভাজাপোড়া খাবেন না, বিশেষ করে ঘরের বাইরে। মিষ্টিও পরিমাণের বেশি খাওয়া যাবে না। পোলাও কম খাবেন, ভাত হলেই ভালো। ফল, ফলের রস, সালাদ ইত্যাদি বেশি করে খাবেন।
অনেকে সালাদ খেলে সমস্যায় পড়েন, তাঁদের তা এড়াতে হবে। প্রচুর পানি পান করতে হবে, যাতে কোষ্ঠকাঠিন্য না হয়। পেট ভরে খাবেন না, গোগ্রাসে না খেয়ে সময় নিয়ে চিবিয়ে খাবেন, খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি না খেয়ে একটু পরে খাবেন, রাতে খাওয়ার পর পরই ঘুমাতে যাবেন না, কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করতে পারেন, দু-তিন ঘণ্টা পরে ঘুমাবেন।
ঈদের আগের রাতে বা ঈদের সকালে ইসবগুলের ভুসি পানিতে মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। সকালে ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে সেমাই-পায়েসের সঙ্গে ফলের রস খেতে পারেন। সঙ্গে প্রচুর পানি পান করবেন, যাতে কোষ্ঠকাঠিন্য না হয়। ঈদের দিন দুপুর ও রাতে অবশ্যই সবজির একটি পদ রাখবেন।
ঈদের আনন্দের আর খাবারের তৃপ্তি না থাকলে এ আনন্দ যেন পূর্ণতা পায় না। খান, তবে পরিমিত ও পরিকল্পিতভাবে খান।
শরিফুলইসলাম, জুলাই ৩১, ২০১৩
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো
Leave a Reply