যাপিত জীবনে মানুষের অসুখের কথাই বেশি শোনা হয়। সুখের ঘটনা অবশ্য ঘটেও কম এবং আমার যে পেশা এতে মানুষ অসুখের কথা শোনানোই বেশি যৌক্তিক মনে করেন। কথাটি ঠিকও।
সেদিন জনৈক ব্যক্তি বললেন, তাঁর প্রিয় এক বন্ধুর মারাত্ম হার্টএটাকের কথা- তাঁর মনে বিস্ময়ের কথাওসেসঙ্গে জানালেন-ঠিব এক হপ্ত আগে তাঁর লিপিড প্রোফাইল করা হলো- সব ঠিক্ ঠাক্ তাহলে কেনো এই হার্ট এটাক?
আমার তাৎক্ষনিক উত্তর হলোঃ কোলেস্টেরোল মান গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই তবে এটি নিয়ে তো পুরোকাহিনীটি রচিত হয় না, বিশেষকরে হ্নদরোগের ব্যাপারটি যখন আসে। বরং এমন তথ্যপ্রমাণও আছে যে প্রথম হার্ট এটাক হয়েছে এমন লোকদের, অর্ধেকের রক্তে পাওয়াগেছে স্বাভাবিক কোলেস্টেরোল মান। কিছু কিছু ঘটনা ঘটেছে করোনারী ধমনীর স্প্যাজমের জন্য- হয়ত মানসিক চাপও পীড়ন ছিলো মূল কারণ।
অনেকে মনে করেন, বিশেষ করে প্রখ্যাত চিকিৎসক এনড্র ওয়েলের ধারণা, রক্তের ক্ষতিকর কোলেষ্টেরোল এল ডি এল এর মান কমানোর জন্য স্ট্যাটিন ওষুধের প্রয়োগের যে বিপুল উদ্যোগ আমাদের মধ্যে, এর আড়ালে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে হার্টএটাকের অন্যান্য ঝুকিগুলো।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে শিকাগোর হ্নদরোগ বিশেষজ্ঞ স্টিফেন আর ডেভ্রিস-ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ডাক্তারের লেখা গ্রন্থ ডযধঃ ুড়ঁৎ ফড়পঃড়ৎ সধু হড়ঃঃরষষ ুড়ঁ ধনড়ঁঃ পযড়ষবংঃবৎড়ষ” যাতে হ্নদরোগের ঝুঁকিগুলো সম্বদ্ধে স্পষ্ট জানা যায়। হয়ত অনেকে জানেন না ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরোল হয় দু’ধরনের ছোট ঘন এলডিল, এবং বড়,নরম এলডিএল। ডাঃ ডেভ্রিস ব্যাখ্যা করেছেনঃ ছোট ঘন এলডিএল কণাগুলো হল বিপজ্জনক, এদের আয়তনের জন্য করোনারী ধমনীর ভেতর এদের আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর বড় আকারের নরম ফুলানো এলডিল কণা গড়িয়ে চলে ধমণীর ভেতর।
এলডিল কণাদের আকার আয়তনের রয়েছে জোরালো জীনগত ভিত্তি। শিকাগোর ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টিগ্রেটিভ প্রোগ্রাম ফর হার্ট ডিজিজ-এর ডিরেক্টর স্টিফেন আর ডেভ্রিস আরো বলেন, রক্তের এলডিএল কণাগুলো ছোট আকারের যদি হয়, তাহলে সেই আয়তন ও সংখ্যা কিন্তু পরিবর্তন করা সম্ভব জীবন-যাপনের ধরনকে পাল্টিয়ে। যেমন, বাড়তি ওজন কমানো, যেসব খাবার সহজে রক্তে শর্করা মান বাড়ায় না এমন খাবার খেয়ে, মাছের তেল খেয়ে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করে। হ্নদরোগের জন্য উপযোগী ল্যাবটেস্ট, স্ক্যান এসব সম্বন্ধে আলোচনা আছে সেগ্রন্থে। রক্তে এলডিএল বেশি থাকলে, এইচডিএল কম থাকলে, ট্রাইগিস্নসাবাইড উঁচুতে থাকলে যে সব সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যায় এরও উল্লেখ আছে গ্রন্থটিতে।
মন ও শরীর কিন্তু একাট্টা করে মানসিক চাপকে হ্রাস করা যায়। মানসিক চাপ হ্নদরোগের পেছনে যে বড়ো কারণ, এতো প্রমাণিত সত্য।
মানসিক চাপে আচ্ছন্ন অবস্থা থেকে শিথিল, শান্ত অবস্থায় আসতে পারলে এবং এই পরিবর্তনের কৌশল শিখলে এর জোরালো প্রভাব পড়ে হ্নদছন্দের উপর, করোনারী ধমনীর ্যাজম্কে উল্টানো যায়, এই মানসিক কৌশলের সাহায্যে।
রক্তের কোলেস্টেরোল ছাড়াও হ্নদরোগের অন্য যেসব ঝুঁকি আছে, এদের প্রভাব রক্ত জমাট বাধার প্রবণতার উপর অবশ্যই পড়ে।
ধমনীর ভেতরে চর্বির জমাট পুরু ধমনীপথকে যতই সরু করুক না কেন ধমনীর ভেতরে রক্ত জমাট শুরু না হলে হার্টএটাক সূচিত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। রক্তের কোলেস্টেরোল কমানোর সঙ্গে সঙ্গে, ধমনীর রক্তকে পাতলা করার কৌশল প্রয়োগ করা এবং মানসিক চাপ হ্রাস করার চেষ্টাও করা উচিত, হার্টএটাক এড়াতে গেলে। হার্টকে সরবরাহ করে রক্ত যে করোনারী ধমনী, আমাদের দেশে যে এগুলো পশ্চিমা দেশের লোকদের তুলনায় সরু, এ ব্যাপারটিও কি কোনভাবে আমাদের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে?
————————–
অধ্যাপক ডাঃ শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস বারডেম, ঢাকা
দৈনিক ইত্তেফাক, ০৩ মে ২০০৮
Leave a Reply