প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার ঠোঁটকাটা ও তালুকাটা শিশু জন্মগ্রহণ করে। প্রতি ৭০০ জন শিশুর মধ্যে একজনের এমন ত্রুটি থাকে। মায়ের গর্ভে বৃদ্ধির সময় এই শিশুদের মুখমণ্ডলের দুটি অংশ সঠিকভাবে যুক্ত হয় না। এই অসংগতির প্রকৃত কারণ এখনো অজানা। অনেক সময় পারিবারিক ইতিহাস থাকে। তবে এটা একটি ভ্রান্ত ধারণা বা কুসংস্কার যে সূর্যগ্রহণ বা কোনো পাপের ফল এ জন্য দায়ী।
এমন সমস্যার প্রকৃত কারণ অজানা থাকলেও কিছু যোগসূত্র রয়েছে। জাতিগত ও জিনগত প্রভাব ছাড়াও কয়েকটি বিষয় ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেমন—
—গর্ভাবস্থায় ফলিক অ্যাসিডের অভাব
—রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিয়ে
—গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ধূমপান
—মায়ের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
—গর্ভাবস্থায় ভাইরাস-জীবাণুর সংক্রমণ
চেহারার সৌন্দর্যহানি ছাড়াও এসব শিশুর স্পষ্ট কথা বলতে, দাঁত উঠতে, খাবার চুষে খেতে সমস্যা হয়, নাকে কথা বলা এবং শ্বাসনালিতে খাদ্য ঢুকে পড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এমন শিশুর জন্মের পরপরই খাবার ও পরিচর্যা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দরকার। ঠোঁটকাটা ও নাকের ত্রুটির অস্ত্রোপচার তিন থেকে ছয় মাস এবং তালুকাটার ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার ১০ থেকে ১২ মাসের মধ্যে করা হয়। কোনো ত্রুটি অবশিষ্ট থাকলে তিন থেকে চার বছর বয়সে পুনরায় সংশোধন করা হয়। এ ছাড়া বাক্শক্তি উন্নয়নের জন্য পরিচর্যা দরকার। জন্মগত এসব ত্রুটির সফল ও আধুনিক চিকিৎসা বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের হাসপাতালে কম খরচে সম্ভব।
ডা. মো. আইয়ুব আলী
প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ.
নিটোর (পঙ্গু হাসপাতাল)
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ১২, ২০১৩
Leave a Reply