হেপাটাইটিস-বি রোগ নির্ণয় করার জন্য রক্তের HBsAg পরীক্ষাটি করানো হয়। HBsAg পরীক্ষা পজিটিভ হলে ধরতে হবে ব্যক্তিটি হেপাটাইটিস-বি রোগে আক্রান্ত। এরূপ আক্রান্ত ব্যক্তিকে রোগ নির্ণয়ের পর অবশ্যই লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। অন্যথায় রোগী প্রথম HBsAg+Positive রিপোর্টের ছয় মাস পর পুনরায় ওই পরীক্ষাটি করিয়ে নেবেন। এ ক্ষেত্রে রোগী যদি স্বল্পমেয়াদি (একিউট) হেপাটাইটিস-বি রোগে প্রথমবার আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে প্রাপ্তবয়স্কদের ৯০-৯৫% রোগীর HBsAg পরীক্ষাটি Nagative হয়ে যাবে। ছয় মাস পর যদি HBsAg পরীক্ষাটি Nagative না হয় তাহলে ধরে নিতে হবে রোগীর প্রথম রোগ নির্ণয়ের সময় সম্ভবত HBsAg দীর্ঘমেয়াদিভাবে বহন করেছিল অথবা একিউট হেপাটাইটিস-বি দীর্ঘমেয়াদি (ক্রনিক)-এ রূপ ধারণ করেছে। এ ক্ষেত্রে টানা ছয় মাস জন্ডিসের উপস্থিতি কোনো শর্ত নয় বরং বাস্তব ক্ষেত্রে তা-ও থাকে না। লিভারের ট্রান্সএমাইনেজ এনজামাইটি স্বাভাবিক থাকতেও পারে আবার বাড়তেও পারে। পরীক্ষাগুলো অবশ্য ভালো ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরিতে করিয়ে নেয়া উচিত। বাংলাদেশে অন্তত ১ কোটি লোক দীর্ঘমেয়াদিভাবে HBsAg বহন করে বেড়াচ্ছে। এসব রোগীর দীর্ঘমেয়াদি লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে এসব রোগীর একটা বড় অংশকে সুস্থ বলে মনে হয় (অর্থাৎ রোগ লক্ষণ ও উপসর্গহীন) তবুও তাদের লিভারও ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। উপযুক্ত চিকিৎসা ছাড়া ক্রনিক হেপাটাইটিস রোগীদের ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অথবা রোগের ক্রমবিকাশকে ধীরগতিসম্পন্ন করা বলতে গেলে একেবারেই অসম্ভব। এ জন্য যারা রক্তে HBsAg বহন করে বেড়াচ্ছেন তাদের প্রত্যেকেই লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শের প্রয়োজন। রোগী শারীরিকভাবে সুস্থ থাকুক আর না-ই থাকুক তার রোগের বিশ্লেষণ প্রয়োজন। যারা রোগ বিশ্লেষণের পর চিকিৎসা নেয়ার উপযুক্ত বলে প্রমাণিত হবেন তাদের অচিরেই চিকিৎসা শুরু করতে হবে। যারা চিকিৎসার জন্য সাময়িকভাবে অনুপযুক্ত হবেন অথবা যারা চিকিৎসা নিতে আর্থিক ও শারীরিকভাবে অসমর্থ তাদেরকেও সময় সময় অবশ্য লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসক ক্রনিক হেপাটাইটিস-বি রোগের ধরন, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে তিন মাস থেকে এক বছর পরপর পরামর্শের জন্য বলতে পারেন। সুতরাং পজিটিভ HBsAg পরীক্ষা রিপোর্টকেও লিভার রোগের একটা বড় বিপদ সঙ্কেত হিসেবে গ্রহণ করুন। আর আপনি কতটুকু বিপদযুক্ত অথবা বিপদমুক্ত তা নির্ণয় করিয়ে লিভার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন।
———————————
ডা. মাহবুব এইচ খান
লেখকঃ লিভার বিশেষজ্ঞ, সিটি হসপিটাল লি.
১/৮, ব্লক-ই, লালমাটিয়া, সাত মসজিদ রোড, ঢাকা,
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ২৭ এপ্রিল ২০০৮
Leave a Reply