জল। নিখরচা পানীয়। আছে সর্বত্র। তবু যথেষ্ট পাই না আমরা এই পানীয়। তবু দিনের শেষে আমাদের বাঁচিয়ে রাখে এই পানীয়…কিন্তু যথেষ্ট আমরা পাচ্ছি কি? সারা দিন যদি কাপ কাপ চা ও কফি পান করি এবং জল পান করি সামান্য, কেউ আবার সুখের দোলায় মদ পানও করেন, শেষে পানিশূন্যতাই তো ঘটে শরীরে। আর শরীর পানিশূন্য হলে দেহের সৌন্দর্য থাকে কি?
দেহের বৃহত্তম অংশজুড়েই তো পানি, আর জন্মের সময় বস্তুত ৮৫ শতাংশই তো থাকে পানি। পুষ্টি উপকরণের পরিপাক ও শোষণ, খনিজ পদার্থের সমতা রক্ষা, দেহকোষের সুষ্ঠু কাজকর্ম পানি ছাড়া চলে না। খাদ্য ছাড়া বেশ কিছুদিন বাঁচা যায়, কিন্তু পানি ছাড়া অসম্ভব। তাই বেঁচে থাকতে হলে পানি চাই।
তবে পানির যে দেহের সৌন্দর্যে বড় অবদান আছে, তা কি ভেবেছি কখনো? কোনো শীতল শীতের দিনে বলেছি, ‘আমার ত্বকটি পিপাসিত হয়ে আছে আর্দ্রতার জন্য, একটু ভেজার জন্য…’ তাহলে তো পানির কদর বুঝেছি।
সজল শরীর মানে সজল, সুস্থ, সজীব ত্বক। ত্বক শুষ্ক হলে বড় বিপর্যয়—ত্বক পানিশূন্য হলে কেমন যেন শুকিয়ে যায়, হয়ে যায় মলিন, অনুজ্জ্বল ও নির্জীব।
সজল ত্বকে আছে জীবন, প্রাণবন্ত সে ত্বক, ভেজা ও উদ্দীপনাময়।
কতটুকু জল চাই আমাদের?
আমরা অনেকেই মনে করি, প্রতিদিন আট গ্লাস পানি চাই তবে নানা কারণে এতেও হতে পারে তারতম্য যদি
বসবাস করতে হয় সমুদ্রসীমা থেকে অনেক উঁচু কোনো স্থানে।
উড়াল দিতে হয় যদি উড়োজাহাজে।
জ্বর হয়।
উষ্ণ অথচ ভেজা আবহাওয়ায় যদি কাজ করতে হয়।
উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় যদি কাজ করতে হয় কর্মজীবীদের (নির্মাণকাজ বা আউটডোর কোনো কাজে)।
বয়স: বৃদ্ধ ও শিশুরা পানিশূন্যতায় বেশি কাতর হয়।
কঠোর অ্যাথলেটিক কাজে।
যদি ওপরের কোনো একটি উপাদান যুক্ত না থাকে জীবনে, তাহলে দিনে ৯-১৩ কাপ জলই যথেষ্ট। তবে স্বাস্থ্যকর অনেক খাদ্য রয়েছে, যেগুলো সজল, সরস জলে-রসে ভরা। লেটুস, শসা, তরমুজ, বাঙি, পানিফল, ব্রকোলি, পালংশাক, বাঁধাকপি এগুলোর মধ্যে ৯০ শতাংশ হলো পানি। এসব গ্রহণে দেহের সৌন্দর্য বাড়ে, পাওয়া যায় প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ।
আরও জল পাই কোথায়? কী করে জল পাই?
সঙ্গে থাক না একটি পানির বোতল সারাক্ষণ। ইতিমধ্যে কোলা, কোমল পানীয়ে অভ্যাসমুক্ত হতে থাকি। তাজা শসা, স্ট্রবেরি, পানিফল, আমলকী ও কমলা খাই। পানি পান করি সর্বদা। মূত্র হবে ফ্যাকাশে হলুদ বর্ণ। যদি কদলি বর্ণ হয় প্রস্রাবের, তাহলে পানির বোতলে পানি ভরি বারবার। আর চুমুকে চুমুকে পান করব পানি—সৌন্দর্যের জন্য, স্বাস্থ্যের জন্য।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
Leave a Reply