ছুটিতে বেড়াতে যান অনেকেই। অনেকে কর্মস্থল থেকে ফিরে যান নিজের বাড়িতেও। কিন্তু অনেকের জন্য তা বড় চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরিবারের সবার জন্য উপহার, সঙ্গে ভারী লাগেজ, পরিবহনের সমস্যা, ফ্লাইট শিডিউল, সঙ্গে ছোট বাচ্চা—সবকিছু চাপ হয়ে দেখা দেয় জীবনে। কিছুটা রেহাই কি পাওয়া যায়? যাঁরা বাইরে বেড়াতে যান, বিশেষ করে দেশের বাইরে, তাঁরা যত আগে সম্ভব ভ্রমণের পরিকল্পনাটি করে ফেলবেন। বাজেট ট্র্যাভেল, বাজেট হোটেল, ভ্রমণসূচিতে থাকবে নানা অপশন। ব্যস্ত দিনগুলোর আগে বা পর পর ভ্রমণ করা ঠিক নয়, ভিড়ভাট্টা যাতে এড়ানো যায়।
ডিজিটাল হতে আপত্তি কী?
ঘর থেকে বের হওয়ার আগে বিনোদনের কিছু মালমসলা নিন সঙ্গে। স্মার্টফোন, পারলে ল্যাপটপ কম্পিউটার। পোর্টেবল ডিভিডি প্লেয়ার, ইয়ারফোন, ক্যামেরা, মুভি ক্যামেরা, ব্যাটারি, চার্জার প্রভৃতিও সঙ্গে নিতে পারেন।
ঘর থেকে বেরোবেন আগেভাগে: যাতে বিলম্ব না হয়, সে জন্য বেরোতে হবে আগেভাগে। ধীরেসুস্থে ট্রেনের নির্দিষ্ট কামরা খুঁজে ফেরা বা ধীরস্থিরে প্লেনে ওঠা, শিথিল ভঙ্গিতে—কত স্বস্তির ব্যাপার, নয় কি? অনেকে স্টেশনে বা এয়ারপোর্টে পৌঁছান শশব্যস্ত হয়ে, এরপর দৌড়ঝাঁপ, উদ্বেগ, স্ট্রেস—প্রয়োজন আছে এর?
ভ্রমণ করবেন হালকা: ট্র্যাভেল লাইট। জ্ঞানী লোকদের কথা। তাহলে আনন্দ হবে ভ্রমণে। উপহারসামগ্রী সেল করতে পারেন বা ডাকে পাঠাতে পারেন। নিজের মালপত্র যেন কম থাকে।
নিরাপত্তা চেকিংয়ের জন্য প্রস্তুতি নিন: যদি আকাশপথে ভ্রমণ করেন, তাহলে সিকিউরিটি চেকিংয়ের আগে নিজেকে ঠিকঠাক করে নিন। কয়েন, চাবি, মুঠোফোন, বেল্ট, গয়নাপত্র হাতের ছোট ব্যাগে রাখুন, লাইনে দাঁড়িয়ে যেন পকেট খালি করার ঝক্কি না পোহাতে হয়।
ফ্লাইট দেরি হলেও মানসিক প্রস্তুতি রাখুন: ফ্লাইট দেরি হলে বা রুট পরিবর্তন হলেও মন খারাপ যেন না হয়। মনকে প্রস্তুত রাখুন। মনে করুন, এমন হতেই পারে। তাহলে প্ল্যান ‘১’ বাতিল হলে প্ল্যান ‘২’ বিবেচনা করতে পারেন।
হয়তো সারা রাত আটকে আছেন এয়ারপোর্টে, হতেও পারে এমন। সে জন্য স্ন্যাকস থাকে যেন সঙ্গে, সবার জন্য বাড়তি কাপড়, বাচ্চাদের জন্য ছোট খেলনা।
খাবেন ঠিকমতো: খালি পেটে নিরানন্দ। ফ্লাইটে বা ট্রেনে খাবার দেয়। তবে ব্যতিক্রমও হতে পারে। তাই সঙ্গে খাবার নেওয়া ভালো। আঠালো নয় এমন স্ন্যাকস। প্রোটিন ও আঁশসমৃদ্ধ খাবার। বাদাম, শুকনো ফল, পনির ও সেদ্ধ ডিম। মুড়ি, বিস্কুট ও চকলেটও রাখা যেতে পারে। পপকর্নও মন্দ নয়। সিকিউরিটি চেকিংয়ের পর বোর্ডিংয়ের আগের সময়টিতে অনেকে আহার সেরে নেন।
মনে রাখবেন, অন্যরাও চাপে আছেন: হলিডে ট্র্যাভেল সঙ্গী-সাথিদের জন্যও চাপের বটে। তাই অন্যরা যেন আপনাকে দেখে চাপে না পড়েন। গভীর শ্বাস নিন। ঠোঁটে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে রাখুন। ইতিবাচক হোক সবকিছু। বাড়ি থেকে বেরোনো, দৈনন্দিন কর্মসূচি থেকে বেরোনো, পরিচিত পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসা, শিশুরাও এতে চাপে পড়ে। তাই ভ্রমণ প্ল্যান করার সময় শিশুদেরও সঙ্গে নেওয়া ভালো। প্রিয় কোনো খেলনা, বই তারা সঙ্গে নিতে পারে।
সুস্থ থাকুন: ঘর থেকে দূরে কোথাও অসুস্থ হলে বড়ই নিরানন্দের কথা, ভ্রমণ এতে হয় কষ্টের, যন্ত্রণার। বেড়ানোর চাপ আরও বাড়ে। শীতে ভ্রমণ করলে ঠান্ডা-সর্দি ও ফ্লুর ঝুঁকি বাড়ে। সে জন্য ফুল শট নেওয়া যেতে পারে। বারবারই হাত ধোবেন, সঙ্গে রাখবেন জীবাণুরোধী হ্যান্ড জেল। হালকা ঢোলা পোশাক। সুতির পোশাক ভালো। শীতকালে শীতের পোশাক। সঙ্গে থাকবে ফার্স্টএইড কিট।
পথের ঝক্কিঝামেলা দূর করতে, এড়াতে চেষ্টা করুন: পথের যানজট এড়াতে আগেভাগেই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ুন—ড্রাইভিংটা যেন মজার হয়, চাপের ব্যাপার না হয়। শিশুরা গান করুক, গেম খেলুক। মাঝেমধ্যে সামান্য থামুন, হাত-পা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নিন, আবার লক্ষ্য স্থির করুন। সবাই যেন একটু নড়েচড়ে বসে। একঘেয়ে যেন না হয় সবকিছু। বেরোনোর আগে গাড়ির ব্রেক, ব্যাটারি, ফ্লুইড, টায়ারের চাপ পরীক্ষা করে নিন। সঙ্গে থাকুক ফার্স্টএইড কিট, ফ্ল্যাশলাইট, ব্ল্যাঙ্কেট, ফ্লেয়ার, জাম্পার কেব্লস।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারি ০২, ২০১৩
Leave a Reply