খাব বেশি বেশি ফল ও সবজি
প্রতি বেলার খাবারে একটা করে ফল বা সবজি গ্রহণ করব। ফ্রিজ খুললেই দেখব কাটা তাজা সবজি, পাশের তাকে সাজানো থাকবে ফল, যা নজরে পড়বে আমার। আরও আছে দধি। স্যান্ডউইচে বেশি বেশি সবজি দেব। সালাদ ও স্যুপে সবজি দেব বেশি করে। অমলেটেও দেব। ভাপে সেদ্ধ সবজি কী মজা! আর গোটা ফল। মৌসুমি ফল। আলু সেদ্ধ সবজিটা ভালো। কী মজা!
ফাস্টফুড খাব না, অগত্যা কোনো দিন উপরোধে খেতে হলেও খাব রয়ে সয়ে
ফাস্টফুড খাওয়ার লোভ সংবরণ করা হবে বড় সংকল্প। বাসায় ফেরার সময় ফাস্টফুড রেস্তোরাঁ যেসব রাস্তায়, সেসব রাস্তা পরিহার করে অন্য রাস্তা দিয়ে ঘরে ফিরব। সঙ্গে বাদাম বা ফল রাখব ভ্রমণের সময়। যানজটে বসে সেগুলো খাব। যদি একান্তই একে সংবরণ করা না যায়, তাহলে লো-ক্যালরি বিকল্প খুঁজব; গ্রিল করা চিকেন নয়তো লো-ফ্যাট চিলি। খুঁজে নেব সবজির কোনো আইটেম বা দধি। সালাদ। খেলেও পরিমাণ যেন ছোট হয়, কম হয়। ভ্যালু মিল পরিহার করব। সোডা পান না করে শুধু জল পান করব। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই তো খাবই না।
স্বাস্থ্যকর নাশতা করার চেষ্টা করব
প্রতিদিন একটি করে বেশি স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খাব। কুকিস বা চিপস উপভোগ না করে একমুঠ বাদাম বা এক কাপ লো-ফ্যাট দধি। মৌসুমি ফল। কমলা, আম, জাম, জাম্বুরা, পেয়ারা, কুল, আমলকী—কত ফল! গমের ক্যাকারস, কুকরি-মুকরি, মুড়ি, খই, লো-ফ্যাট পনির বা দধি। খিদে পেলেই স্ন্যাকস খাব, নইলে নয়।
রাতে খাব কম
এমনভাবে পরিকল্পনা করব, যেন রেস্তোরাঁয় বেশি খেতে না হয়। কম জ্বালে বা স্লো কুকারে গরম স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করব। স্লো কুকারে দিয়ে রাখব। খাবার রান্না হয়ে থাকবে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার সময়। যতটুকু খাব এর চেয়ে বেশি রান্না করব, অর্ধেক ফ্রিজে রাখব। তাই প্রয়োজনে এই হিমায়িত খাবার বের করে প্রস্তুত করব আহারের জন্য। সকালে সহজ প্রাতরাশ তৈরি করব: ওটমিল ও ফল। লাঞ্চেও খাওয়া যায় স্যান্ডউইচ, ফল ও দধি।
অমনোযোগী হয়ে আহার পরিহার করব যতটা সম্ভব
সত্যিকার খিদে পেলে তবেই খাওয়া উচিত। পেট ভরাট হওয়ার আগেই, মাত্র তৃপ্তি হলো, তখনই খাওয়া বন্ধ করব, আর খাব না। প্লেটে খাবার থাকলেও খাব না। খাওয়ার সময় টিভি বা কম্পিউটারের সামনে বসে খাব না। নানা রকম কাজ ও খাওয়া একসঙ্গে করলে অতিভোজন হয়। খাবারের দিকে নজর দেব। ক্ষুধার সংকেতের দিকে খেয়াল করব, বেশি খাওয়া হবে না। মনোযোগী হয়ে খাব।
কাজের সময় ও কর্মক্ষেত্রে স্ন্যাকস কম
অফিস থেকে অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস তো বের করতে হবে, অন্তত দৃষ্টির আড়ালে তো থাকবেই। হাতের আওতার মধ্যে খাবার না থাকলে খাওয়াও কম হয়। কাজের সময় যদি অমনোযোগী হয়ে চিবাতে থাকি, তেমন অভ্যাস যদি হয়, তাহলে ডেস্কে বা আশপাশে খাবার রাখব না। অন্তত বসার জায়গা থেকে ছয় ফুট দূরে যেন থাকে খাবার। এই দূরত্ব প্রতিবার মনে করিয়ে দেবে যে এখন নয় খাওয়া, বরং সত্যিকার লাঞ্চ ব্রেক নেব। লাঞ্চ খাব মন লাগিয়ে। সব সময় খাই-খাই বড় বাজে অভ্যাস।
রেস্তোরাঁয় খেলেও স্মার্টলি খাব
বাসায় যেমন প্ল্যান করে খাই, তেমনি রেস্তোরাঁয় বসেও প্ল্যান করা চাই। তখন স্মার্ট চয়েস করা সম্ভব হবে। কম খাবার খেতে হবে। পরিমাণে কম। বাচ্চাদের যে পরিমাণ খাবার দেয়, ততটুকু। এত ক্ষুধার্ত হয়ে রেস্তোরাঁয় ঢুকব না, যাতে অতিভোজন হয়।
এর আগেই স্বাস্থ্যকর নাশতা খেয়ে তবে রেস্তোরাঁয় ঢুকুন। কম খাওয়া হবে।
শুরু করব ক্লিয়ার স্যুপ বা সালাদ দিয়ে। ক্রিম স্যুপ নয়। যে পরিমাণ দেবে, এর অর্ধেক ধীরে ধীরে খাব, বাকিটা বক্সে করে বাড়িতে নিয়ে যাব। নয়তো বন্ধুর সঙ্গে ভাগ করে খাব।
কম চিনি খাব অবশ্য
কোমল পানীয়, চিনির শরবত, চিনিজল ও সোডা পান করব না।
এসব পানের অভ্যাস ত্যাগ করতে তাই প্রথমে কষ্ট হবে। তবে প্রতিদিন একটি সোডার ক্যান পান না করলে ৩০ গ্রাম চিনি কম খাওয়া হবে মানে খাবার থেকে আট চামচ চিনি বাদ যাবে। সোডা বা কোমল পানীয়ের বদলে শুধু জল খাব বা লাল চা। সবুজ চা। তাজা ফল খাব। ফলের রস ঘরে বানিয়ে খাব।
প্রতিদিন প্রাতরাশ খাব, কোনো দিন বাদ দেব না
সকালে প্রাতরাশ খাবই। যদি কোনো দিন খুব তাড়া থাকে, তাহলে সঙ্গে করে নিয়ে যাব কর্মস্থলে, সেখানে বসে খাব। বহনযোগ্য প্রাতরাশ: টোস্ট করা রুটি, ফল, দধির কাপ, মুড়ি, চিড়া, খই ও কলা। এ রকম সবজি ভাজি, সেদ্ধ ডিম।
ঠিকমতো খাওয়াদাওয়ার পরিকল্পনা করব
সময় নেই, ফুরসত নেই—এসব মিথ্যা অজুহাত তুলে স্বাস্থ্যকর আহার থেকে বিরত থাকব না। কোনো দিন বেশ বেলা করে কাজ শেষ করা হলো বা কোনো দিন খুব ছোটাছুটি হলো, সেসব দিনেও ঠিক রাখব স্বাস্থ্যকর খাওয়া। সঙ্গে পুষ্টিকর খাবার রাখা ভালো: আটার রুটি, সবজি ভাজি, ডিম সেদ্ধ, দই, ফল। ফ্রিজেও রাখব স্বাস্থ্যকর খাবার। যেসব রেস্তোরাঁয় সবজি, শাক, সালাদ, স্যুপ ও গ্রিল করা চিকেন পাওয়া যায়, সেসব রেস্তোরাঁয় ঢুঁ মারা ভালো।
পার্টিতে গেলেও স্মার্টলি খাব
পার্টিতে, দাওয়াতে যাওয়ার আগে স্বাস্থ্যকর নাশতা খেয়ে যাব; খিদে পেটে কখনো নয়, তাহলে বেশি খাওয়া হবে না। সেখানে ছোট একটি প্লেট নেব আর এর অর্ধেক ভর্তি করব ফল ও সবজি দিয়ে। মিষ্টি, পায়েস বা হাই ক্যালরি ডিশ কেবল স্বাদ নেব, খাব না। একবার দু-এক কামড় খাওয়ার পর খাবার থেকে দূরে সরে যাব। বুফে টেবিলের পাশে আলাপচারিতায় যোগ দিলে খাবার খাওয়ার লোভ থাকে, খাওয়া চলতে থাকে। পানীয়র মধ্যে ক্যালরি থাকে বেশি, তাই জল খাব; নয়তো পানীয় পান করলেও খুব কম করব।
কী খাচ্ছি এর একটি রোজনামচা রাখব
খাওয়ার অভ্যাস দেখে অবাক হয়ে যাব? তবে প্রতিদিন এটা লেখার দরকার নেই। সপ্তাহে এক দিন বা পর পর কয়েক দিন।
‘না’ বলা শিখতে হবে
স্বাস্থ্যকর আহার বিষয়ে নিয়মসিদ্ধ ও কঠোর থাকব। রেস্তোরাঁয় ওয়েটার বলবে, প্লেটের পাশে সস নেননি, স্যার। সহকর্মী বলবেন, আমার ঘরে বানানো তেলেভাজা, পায়েস—এসব খেলেন না, ভাই? কঠোর হব। প্রতিটি কামড়ে ক্যালরির হিসাব মনে রাখব। তাই বারবার লোভনীয় খাবারের কাছে আত্মসমর্পণ করব কেন?
বন্ধুরা খুব অনুরোধ করলে কেন আমি খেতে চাইছি না, বিনয়ের সঙ্গে বোঝাব তাদের। আমি তো সবার কাছে আমার কাজের ব্যাখ্যা দিতে দায়বদ্ধ নই, কিন্তু সুস্বাস্থ্যের কাছে আমার দায় আছে, অস্বাস্থ্যকর কাজ করলে এর ব্যাখ্যা তো দিতে হবে। নিজের ওপর উপরোধে অযথা অত্যাচার করার অধিকার নেই আমার।
আমি অতিভোজন করতে চাইব না
কম করে খাব, এমন চিন্তা মাথায় থাকবে। খাই-খাই কখনো নয়। মাইন্ডলেস ইটিং গ্রন্থের লেখক ব্রায়ান ওয়ানসিংক বলেন, ১২ ইঞ্চি প্লেটে না খেয়ে ১০ ইঞ্চি প্লেটে খেলে ২১ শতাংশ কম খাওয়া হয়। পরিবেশনের যে বড় হাতা, তা ব্যবহার না করে ব্যবহার করব টেবিল চামচ। তাই ডিনার প্লেট ও বড় চামচ বদলে নেব কোয়াটার প্লেট ও টেবিল চামচ। প্লেটে যা রাখব, পরিমাণমতো রাখব, কম করে রাখব। টেবিলে খাবার থেকে পরিবেশন না করে চুলার ওপর ডেকচি থেকে খাবার নেব। তাই দ্বিতীয়বার নেওয়ার জন্য খাবার টেবিলে থাকবে না, কম নেওয়া হবে। ধীরে ধীরে খাব, ২০ মিনিট লাগিয়ে। পেট ভরাটের সংকেত আসবে মগজে, তৃপ্তি হবে, খাবও না আর।
আমার পাশে পেতে চাই পরিবারকে, বন্ধুবান্ধবদের
পরিবার ও বন্ধুদের পাশে পেলে নিজে শক্তিশালী হতে পারা সহজ। পরিবারের কোনো সদস্য বা বন্ধুকে বলব স্বাস্থ্যকর আহারের সংকল্পে যোগ দিতে আমার সঙ্গে। স্বাস্থ্যকর আহার কেবল নিজের জন্য তেরি করব কেন? পরিবারের অন্যদের জন্যও করব। দেখব, প্রত্যেকের যেন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস হয়।
আমি সফল হতে চাই
একসঙ্গে বেশি নয়, ছোট্ট একটি স্বাস্থ্যকর আহারের লক্ষ্য নির্ণয় করব, সাফল্য এলে নিজেকে ধন্যবাদ দেব। নিজের পিঠ নিজে চাপড়াব। একই সঙ্গে অনেকগুলো পরিবর্তন ঘটাতে চেয়ে নিজেকে ভারাক্রান্ত করব না। স্বাস্থ্যকর আহারের অভ্যাসকে নষ্ট করব, এমন খাবার খাওয়ার পর নিজেকে প্রশংসা করব না, বরং অন্য কোনো উপায় খুঁজব। হার্বাল টি বা ম্যাসেজ।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস,
বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ২৬, ২০১২
Leave a Reply