অস্থিক্ষয় বা অস্টিও পোরেসিস হচ্ছে এমন একটি অসুখ যার ফলে অস্থি বা হাড়ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। হাড়ের শক্তি কমে যায়, ফলে প্রবণতা তৈরি হয় হাড় ভাঙ্গার। অস্টিও পোরোসিসের দ্বারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় যে হাড়গুলি তারা হচ্ছে মেরুদন্ডের ছোট ছোট হাড় (কশেরুকা), কবজি, বাহু এবং বস্থি প্রদেশের হাড়গুলি।
অস্থিক্ষয় বা অস্টিও পোরেসিস হচ্ছে এমন একটি অসুখ যার ফলে অস্থি বা হাড়ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। হাড়ের শক্তি কমে যায়, ফলে প্রবণতা তৈরি হয় হাড় ভাঙ্গার। অস্টিও পোরোসিসের দ্বারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় যে হাড়গুলি তারা হচ্ছে মেরুদন্ডের ছোট ছোট হাড় (কশেরুকা), কবজি, বাহু এবং বস্থি প্রদেশের হাড়গুলি। একবার ভেঙ্গে গেলে আবার আশংকা থাকে, সঙ্গে থাকে তীব্র ব্যথা, ফলে চলাফেরায় অক্ষমতা। সেই কারণেই রোগীর প্রয়োজন হয় অপারেশনের।
অস্টিও পোরেসিস কাদের হয়?
আমেরিকাতে ২৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। বয়স্ক মানুষ, বিশেষত মহিলা, যাদের মেনোপজ (ঋতুবন্ধ) হয়ে গেছে তারাই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী। অন্য যে সব বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে, সেগুলো হচ্ছে-
> পারিবারিক ইতিহাস।
> জাতি। শ্বেতাঙ্গ এবং এশীয়দের মধ্যে এই রোগ বেশি হয়। আফ্রিকানদের মধ্যে কম।
> খাদ্যে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি কম থাকা।
> শরীর চর্চার অভাব।
> ধুমপান। অতিরিক্ত মদ্যপান।
> ওজনহীনতা।
> মহিলাদের কিছু মাসিকের ত্রম্নটি, সেগুলোর ফলে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাপ কমে যায়।
> কিছু ঔষধ যেমন-গস্নুকোকর্টিকোস্টেরয়েড, খিচুঁনি রোধী ঔষধ।
এ্যাজমার সঙ্গে অস্টিও পোরোসিসের সম্পর্কঃ যেহেতু এ্যাজমা হচ্ছে ফুসফুসের প্রদাহজনিত একটি রোগ, তাই এ্যাজমা রোগীকে প্রচুর প্রদাহরোধী ঔষধ খেতে হয়। এদের মধ্যে গস্নুকোকর্টিকোস্টেরয়েড হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী সিম্পেসিক এবং নিঃশ্বাসের সঙ্গে নেবার বা স্থানীয়।
দীর্ঘদিন ধরে কোনো এ্যাজমা রোগী যদি মুখে খাওয়ার গস্নুকোকর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করেন (যেমন প্রেডনিসোলোন টেবলেট) তাহলে তিনি যতগুলি ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হবেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অস্টিও পোরোসিস। অন্যদিকে ইনহেলার হিসাবে যে গস্নুকোকর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করা হয় সেগুলি এ্যাজমা প্রশমনে যেমন কার্যকরী, তেমনই সেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম। আপনার ডাক্তার তাই আপনাকে সেই ওষুধ ব্যবহার করতে বলবেন, যেগুলোর ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম।
অস্টিও পোরোসিস বা অস্থিক্ষয় কীভাবে রোধ করবেন?
বেশি ক্যালশিয়াম গ্রহণঃ ক্যালসিয়াম শরীরের সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে যখন এটি খাদ্যের সাথে অল্প পরিমাণে সারা দিন ধরে খাওয়া হয়। সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম থাকে দুগ্ধজাত খাদ্যে। এসব খাবারে ভিটামিন ডি থাকে কিছু পরিমাণে। যেমন এক গস্নাস স্কিমড মিল্কে থাকে ৩০২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৮৫ ক্যালরি। কম স্নেহজাতীয় ইফোগার্টে থাকে ৪১৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ১৪৫ ক্যালোরি শক্তি।
শরীরে প্রতিদিন ক্যালসিয়াম চাহিদা নিম্নরূপ-
> ১ থেকে ১০ বৎসর পর্যন্ত প্রতিদিন ৮০০ মিলিগ্রাম।
> ১১ থেকে ২৪ বৎসর পর্যন্ত প্রতিদিন ১২০০ মিলিগ্রাম। গর্ভবতী এবং স্তন্যদানরত মায়ের জন্য প্রতিদিন ১২০০ মিলিগ্রাম।
> ২৪ বৎসরের বেশি বয়স্ক পুরুষ প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম। ঋতুবন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে মহিলাদের জন্য প্রতিদিন ১৫০০ মিলিগ্রাম।
> যাদের অস্টিও পোরেসিস এর ঝুঁকি আছে এমন পুরুষ/মহিলা প্রতিদিন ১৫০০ মিলিগ্রাম।
কিছু মানুষের শরীরে ল্যাকটেজ নামক এনজাইমের ঘাটতি থাকে। এই এনজাইম ল্যাকটোজ নামক দুগ্ধ শর্করা হজমে সাহায্য করে থাকে। এই এনজাইমের অভাব ঘটলে মানুষ দুধ খেয়ে হজম করতে পারে না। তবে কেউ কেউ ইফোগার্ট এবং মাখন কিছুটা হজম করতে পারে। অন্যদের জন্য ল্যাকটেজ মিশ্রিত দুধ ব্যবহার কম সহজ। দুধ ছাড়া অন্য যে সব খাদ্যে ক্যাসিয়াম ভালো পরিমাণে থাকে, সেগুলোর মধ্যে টফু (প্রতি ৪ আউন্সে ১৫০ মিলিগ্রাম), বাঁধাকপি, (সেদ্ধ এক কাপে ১৩৬ মিলিগ্রাম), কলার্ড (প্রতিকাপে ১৫০ মিলিগ্রাম), শালগম (প্রতিকাপে ২০০ মিলিগ্রাম) এবং সার্ডিন মাছ (প্রতি ৩ আউন্সে ৩৭৫ মিলিগ্রাম) অন্যতম।
যারা খাদ্যর সাথে ঠিকমতো ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে পারে না, তাদের ক্যাসিয়াম সরবরাহ করতে হবে। তবে নিশ্চিত করতে হবে ঔষধের মধ্যে প্রকৃত ক্যালসিয়ামের পরিমাণ। দিনে একসঙ্গে ৫০০ বা ৬০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা চলবে না। কিংবা ক্যাসিয়ামের সঙ্গে আঁশ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা উচিত নয়। এতে সীসা বা অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ থাকতে পারে। এ ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে।
ভিটামিন ডি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, তবে তা যেন অতিরিক্ত না হয়ঃ প্রতিদিন ভিটামিন ডি গ্রহণের স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে ৪০০ আন্তর্জাতিক একক (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট)। বেশিরভাগ মাল্টিভিটামিন ঔষুধে এই পরিমাণেই ভিটামিন ডি থাকে। দেখা গেছে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১৫০০ আন্তর্জাতিক একক পর্যন্ত ভিটামিন ডি খেলে ক্যালসিয়াম বিশোষণ ও অস্থির বিপাক ক্রিয়ায় তা সহায়তা করে। এই ভিটামিন পাওয়া যায় ডিমে, লোনা পানির মাছে, গরুর কলিজায়। ইদানিং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ প্রকিয়াকৃত দুধ বাজারে পাওয়া যায়।
ব্যায়ামঃ হাঁটা, উপরের দিকে ওঠা বা জগিং জাতীয় ব্যায়াম করতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ব্যায়াম করতে হবে একদিন পর পর কিংবা সপ্তাহে চার দিন। প্রতিদিন কতক্ষণ ধরে ব্যায়াম করতে হবে তা নির্ভর করে ব্যায়ামের ধরনের ওপর। ৪০ থেকে ৬০ মিনিট হাঁটার কথা বলা হয়েছে। তবে ব্যায়াম শুরুর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ধূমপান ত্যাগ করতে হবে এবং বেশ পরিমাণে অ্যালকোহল সেবন করা যাবে নাঃ ধূমপান এবং অতিরিক্ত এলকোহল শরীরের অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি অস্টিও পোরোসিসের আশংকা বাড়িয়ে দেয়।
রক্তের এস্ট্রাজেনের পরিমাণ মনিটর করুনঃ আপনি নারী হলে এবং আপনার মেনোপজ শুরু হলে ইস্ট্রোজেন প্রতিস্থাপন চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
মহিলাদের হরমোন রিপ্লেসমেন্টঃ মেনোপজের পর ইস্ট্রোজেন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি মহিলাদের অস্টিও পোরেসিসের আশংকা কমায় তবে অন্য ক্ষতির সম্মুখিনও করে। কাজেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবার ভার আপনার চিচিৎসকের ওপর ছেড়ে দিন।
টেস্টোস্টেবস্নন মনিটর করুনঃ পুরুষ রোগীরা গস্নুকোকর্টিকোস্টেরয়েড (প্রেডলিসালোন) খেলে রক্তের টেস্টোস্টেরণের পরিমাণ কমে যেতে পারে। তাই এটি মনিটর করতে হবে।
চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন নিয়মিতঃ যদি আপনার অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি থাকে বা আপনাকে যদি এ্যাজমার জন্য প্রেডনিসলোন খেতে হয়, তাহলে হয়তো আপনার চিকিৎসক আপনার অস্থির ঘনত্ব পরীক্ষা করে দেখবেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন।
—————————-
ডাঃ গোবিন্দ চন্দ্র দাস
এলার্জি ও এ্যাজমা রোগ বিষেশজ্ঞ
সিনিয়র কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান
এলার্জি এন্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলোজী বিভাগ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ঢাকা
দি এলার্জি এন্ড এ্যাজমা সেন্টার
৫৭/১৫ পশ্চিম পান্থপথ, ঢাকা
দৈনিক ইত্তেফাক, ২৬ এপ্রিল ২০০৮
Leave a Reply