প্রোস্টেট গস্ন্যান্ড পুরুষেরই একান্ত। বয়স হলে অনেক সময় এই গস্ন্যান্ড বেড়ে যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই বৃদ্ধি নিরীহ। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধি হতে পারে অস্বাভাবিক, রূপ নিতে পারে ক্যান্সারে। একে আগাম নির্ণয়ের জন্য প্রচলিত রয়েছে রক্তের একটি পরীক্ষাঃ প্রোস্টেট স্পেসিফিক এন্টিজেন বা পি.এস.এ। রোগ নির্ণয় কৌশল হিসেবে এর প্রসিদ্ধি ছিলো। কিন্তু ইদানীং গবেষকরা বলছেন প্রোস্টেটের ক্যান্সার সোসাইটির পরামর্শঃ পঞ্চাশ উর্ধ্ব প্রতিটি পুরুষের বছরে একবার প্রোস্টেট ক্যান্সারের স্কিনিং করানো উচিত।
স্কিনিং করানো উচিত দুটো ধাপেঃ
(১) ডিজিটাল রেকটাল এক্সাম মলদ্বারে অঙ্গুলি প্রবেশ করিয়ে প্রোস্টেটের পৃষ্ঠদেশ অনুভব করে পরীক্ষা করা।
(২) এরপর পিএসএ নামে একটি রক্ত পরীক্ষা । প্রেস্টেট গস্ন্যান্ত থেকে নিঃসৃত হয় এই প্রেটিন-প্রোস্টেট স্পেসিফিক এন্টিজেন।
নিউইয়র্ক সিটি ওয়েল কর্ণেল মেডিক্যাল সেন্টারে ইউরোলজিক্যাল অন্কোলজি বিভাগের ক্লিনিক্যাল ডিরেকটর এবং মুখ্য গবেষক ডাঃ ডগলাস. এস. শের বলেন, ‘যাদের ডিআরএ পরীক্ষা করে অস্বাভাবিক ফল পাওয়া যায়, তাদের জন্য পি.এস. এ. টেস্ট পূবর্ সংকেত দেওয়ার জন্য সফল টেস্ট হতে পারে।’ তবে ডি.আর.এ টেস্টে ফলাফল যাদের স্বাভাবিক, তাঁদের জন্য পিএস এর তেমন মূল্য নেই।’ এদের জন্য পিএসএ টেস্টের মূল্য কম। কারণ চিকিৎসকরা এখন অনেক বেশি বায়োপসি করছেন আর বয়োপসি কৌশলও এখন অনেক উন্নত।
১৬০৭ জন পুরুষের প্রোস্টেট বয়োপসির অতীত রেকর্ড পর্যালোচনা করে বেশকিছু তথ্য পেয়েছেন। ওয়েল কর্ণেল সেন্টারে ১৯৯৩-২০০৫ সালে এসব বায়োপ্সি হয়েছিলো।
১৯৯০ সালের দিকে যেসব পুরুষের রক্তে প্রতি মিলিলিটারে ৪ নেনোগ্রামের বেশি ছিলো পিএসএ, তাদের বায়োপসি করা হয়োছিলো। পরবর্তী সময়ে যাদের পিএসএ ২.৫-৪ নেনোগ্রামের মধ্যে ছিলো, তাদেরও বায়োপসি অনেক সময় করা হয়েছিলো।
আগ-নব্বই এবং মধ্য নব্বই এ বায়োপ্সির সময় ছয়টি সূঁচ ব্যবহার করা হয়েছিলো। এখন ব্যবহ্নত হচ্ছে চৌদ্দটি। পিএসএ মান ৪ এর কম থাকলেও বয়োপ্সি করাতে ক্যান্সারের আগাম নির্ণয় সহজ হয়েছে বলে অনুমান।
পিএসএ মান ২.৫-এর বদলে ৪ করলে ক্যান্সার আগাম নির্ণয়ের হার, দ্রুত পতন ঘটতে পারে।” ডাঃ ডগলাস আরো বলেন, “প্রোস্টেট ক্যান্সারের সম্বন্ধে মানুষের সচেতনতা ক্রমেই বাড়ছে এবং স্কিনিং-এর ব্যাপারটাও বদলে যাচ্ছে। আজকাল ডিআরই করে আস্বাভাবিক ফল কদাচিৎই পাওয়া যায়।”
ডাঃ ডগলাসের বক্তব্যঃ “ পিএসএ ছাড়া প্রোস্টেট ক্যান্সারের আরো নতুন বায়োমার্কার বা জৈবসূচক আবিষ্কারের প্রয়োজন রয়েছে। পুরুষের বয়স পঞ্চাশ হলেই কি তার প্রোস্টেট বায়োপ্সি করতে হবে? এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি খতিয়ে দেখার দরকার রয়েছে।”
নিউইয়র্কের মেমোরিয়েল োয়ান ক্যাটারিং ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যানবিদ এন্ড্র ভিকার্স বলেন, যাদের নিয়মিত স্কিনিং তাদের জন্য একে প্রয়োগ করা যেতে পারে। যাদের স্কিনিং হয়নি এদের গবেষণাটি সম্পূর্ণ নয় কারণ যেসব লোকের বায়োপ্সি হয়েছে তাদের তথ্যই কেবল সংগ্রহ করা হয়েছে।
এই গবেষণায় প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি উপাদান যেমন গোত্র, বয়স, পারিবারিক ইতিহাস এসব উল্লেখ করা হয়নি। যাদের বয়োপ্সি করা হয়নি এদের তথ্যও পাওয়া যায়নি।
পিএসএ টেস্টের ভালো-মন্দও রয়েছে। লক্ষ্যণীয় হলো, যেসব প্রোস্টেট ক্যান্সার এত ধীরে বাড়ে যে জীবন বিপদসংকুল হয় না এবং যেসব প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রাণঘাতী এ দু’ধরনের মধ্যে পার্থক্য চিহ্নিত করতে পারে না পিএসএ টেস্ট। তবে এ পর্যন্ত যত রোগনির্ণয় কৌশল রয়েছে, এসব বিবেচনায় পিএসএ টেস্ট এখনও অনেক মূল্যবান।
————————-
অধ্যাপক ডাঃ শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস বারডেম, ঢাকা
দৈনিক ইত্তেফাক, ২৬ এপ্রিল ২০০৮
Leave a Reply