অনেকে বলেন, গান শুনলে, গান গাইলে মেজাজ ভালো হয়। সত্যিই তো, সংগীত মন ভালো করে বটে। তবে কী শুনছেন, তা-ও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। গর্দভরাগিণী শুনলে বা হেঁড়ে গলার গান শুনলে হবে না। অথবা বেসুরে গাওয়া রবীন্দ্রসংগীত। মেজাজ উল্টো খারাপ হবে। তাই সব সময় গান হলেই মেজাজ ভালো হবে, তা নয়। কিছু কিছু খাবার আছে, যাদের প্রভাব মেজাজের ওপর ইতিবাচক বটে।
একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রচুর জলপাই তেল যারা গ্রহণ করে, তাদের বিষণ্নতা হয় কম। স্যামন মাছ ও ওয়ালনাট (আখরোট) হলো ওমেগা-৩ মেদাম্লের উৎস। গবেষণায় দেখা গেছে, এসব মেদাম্ল মেজাজ চনমনে করে।
অপরিচিত লোকের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় কি মেজাজ ভালো করে?
ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা যায়, আগন্তুক অপরিচিত লোকের সঙ্গে আলাপ অনেক সময় মেজাজ ভালো করে। আগন্তুকের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে গিয়ে, তাদের প্রফুল্ল করতে গিয়ে নিজেদের মেজাজ ভালো হয়ে যায়।
কেউ মিথ্যা বলছে বা মিথ্যাচার করছে, তা ধরতে হলে তাকে বদমেজাজে পেলে ভালো।
মেজাজ বেশ সংক্রামক, জানেন?
মানুষ তার পাশের লোক সুখে-আহ্লাদে থাকলে, এই সুখবোধ সংক্রামিত হয়, সঞ্চারিত হয়। ব্যায়াম করলেও মেজাজ ভালো হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যায়াম করলে মগজে নতুন স্নায়ুকোষ গজায়, মগজে বাড়ে রক্তপ্রবাহ, আর মগজে মনমেজাজ নিয়ন্ত্রক হরমোনগুলোর মাত্রা বাড়ায়। যেমন—ডোপামিন ও সেরোটনিন। মানুষ বুড়ো হলেই বদমেজাজি হয়, তা-ও ঠিক নয়।
অনেকে দেখেছেন, মানুষ যত বুড়ো হয়, তত ইতিবাচকভাবে দেখে সবকিছু। মানুষ যখন বুঝতে পারে যে আয়ুষ্কাল কমে আসছে, তখন চেতন মনে হোক বা অচেতনে হোক, ইতিবাচক চিন্তা বেশি করতে থাকে।
আরেকটি সম্ভাবনা শারীরবৃত্তিক। মানুষের বয়স যত বাড়ে, আবেগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মগজের একটি অংশ ইতিবাচক চিন্তায় তত সক্রিয় হয়, আর নেতিবাচক ভাবনায় নিষ্ক্রিয় হয়।
ধূমপায়ীরা ধূমপান ছাড়লে বদমেজাজি হয়ে যায়, এ-ও ঠিক নয়। সফলভাবে ধূমপান বর্জন করতে পারলে বরং মেজাজ ভালো হয়।
ভালো মেজাজে থাকলে বরং কিছুটা সংস্কারের বশবর্তী হয় মানুষ। সুখী মানুষেরা বরং ইনটিউশন মানুষকে চালিত করে বেশি, যথাযথ হোক বা না হোক। যা এত দিন তাকে সুখী রেখেছিল, সেদিকেই মন যায়।
আবহাওয়া বদলালে মেজাজও বদলায়।
যেমন: রৌদ্রালোকিত দিনে মন কেমন ফুরফুরে হয়ে উঠে না? বৃষ্টির দিনে, মেঘলা দিনে মনে কেমন কেমন করে না?
আরেকটি সমস্যা সিজনাল অ্যাফেকটিভ ডিজ-অর্ডার; হয় সব ঋতুতেই।
এ-ও মেজাজের সমস্যা—ঘটে বেশি শীতকালে। তবে হতে পারে যেকোনো ঋতুতে, বছরের যেকোনো সময়। সূর্যের আলোর তারতম্যে শরীর সাড়া দেয় নানাভাবে। তাই শীতকালে দিন যখন ছোট হয়, তখন তা বেশি, নয়তো বছরের মেঘলা দিনগুলোতে। ‘এই মেঘলা দিনে একলা…।’
পূর্ণবয়স্কদের মধ্যে কত শতাংশ মেজাজ সমস্যায় ভোগে, তা জানা গেল?
এ দেশের খবর জানি না, তবে যুক্তরাষ্ট্রে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ।
বিষণ্নতা ও সাধারণ মন খারাপ—এদের পার্থক্য চিহ্নিত করা যায়। কতখানি গুরুতর এ সমস্যা, উপসর্গ, স্থিতিকাল—এসব পার্থক্য থাকে। উপসর্গ দুই সপ্তার বেশি একনাগাড়ে থাকলে বা এতে স্বাভাবিক কাজকর্ম বিঘ্নিত হলে ডাক্তার দেখাতে হবে।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ২৮, ২০১২
Leave a Reply