প্রিয়জনকে ডায়াবেটিস সামলাতে সাহায্য করুন। যুক্তরাষ্ট্রে দুই কোটি ৬০ লাখ লোকের ডায়াবেটিস। বাংলাদেশে প্রায় ৮০ লাখ। তবে অনেকেরই ডায়াবেটিস চিহ্নিত হয় না। প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি হবে। ডায়াবেটিস কারও হলে তা তার পরিবারের অনেককে, বন্ধুদেরও স্পর্শ করে নানাভাবে। আর প্রিয়জন, যিনি ডায়াবেটিস রোগী, তাঁকে অবলম্বন দিতে হলে যিনি পরিচর্যা দেবেন এবং যিনি নেবেন দুজনের জন্যই এটি চ্যালেঞ্জিং।
মনে তো রাখতেই হবে, যেকোনো ক্রনিক রোগ নিয়ে বসবাস করতে হলে, তা টাইপ১ ডায়াবেটিস হোক বা টাইপ২ ডায়াবেটিস হোক, তা বিধ্বস্ত করতে পারে জীবনকে। প্রিয়জনের যখন ডায়াবেটিস, তখন তাঁর পরিচর্যাদানকারী হিসেবে জানতে হয় ডায়াবেটিস সম্পর্কে, সবকিছু। তাই জানতে হয়—
কী করে রোগ এল শরীরে
কীভাবে হবে এ চিকিৎসা
নিজে একে মোকাবিলা করার জন্য কী কী প্রয়োজনীয় খাদ্যবিধি ও লাইফস্টাইল মেনে চলতে হবে। জানতে হবে রক্তের সুগার খুব বেড়ে গেলে বা খুব কমে গেলে এর বিপদসংকেতগুলো কী কী? তখন কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে।
তা করলে রোগী থাকবে নিরাপদ এবং জটিলতা থেকে থাকবে মুক্ত।
ডায়াবেটিস পরিচর্যাকারী হিসেবে রোগীর কোনো আবেগের ঘটনাকে সামাল দেওয়ার জন্য তৈরি থাকতে হবে। যেমন ডায়াবেটিস রোগীর মনে হতে পারে ভয়, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ বা বিষণ্নতা।
সমান গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের দিকে খেয়াল রাখা। পরিচর্যা করতে করতে শরীর ও মনের ওপর বেশ চাপ পড়তে পারে। আর সেই চাপ যদি প্রলম্বিত হয় তাহলে পরিচর্যাকারীর ব্যক্তিগত উদ্বেগ, চাপ ও একাকিত্বের বোধ নিজের জীবনে বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ডায়াবেটিস হয়েছে, এমন প্রিয়জনকে সাহায্য করার উপায়গুলো কী
ডায়াবেটিসের মতো ক্রনিক রোগ শরীরে বয়ে নিয়েও কাউকে না জানিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে পারেন কেউ কেউ। এমনকি অনেক পরিচর্যাকারীরও সতর্কসংকেতগুলো আমলে আনা কঠিন হতে পারে। ডায়াবেটিস জরুরি অবস্থা বা জটিলতা না দেখা যাওয়া পর্যন্ত রোগীও উপসর্গ লুকিয়ে রাখতে পারে। ডায়াবেটিস আছে এমন কাউকে সফলভাবে সহায়তা করার চাবিকাঠি হলো পারস্পরিক যোগাযোগ। পরিচর্যা দেওয়ার জন্য তৈরি হওয়ার আগে প্রিয়জনের সঙ্গে ডায়াবেটিস সম্পর্কে আলাপ করা উচিত, কীভাবে সহায়তা দেওয়া যায় এ সম্বন্ধে খোলাখুলি আলাপ করা ভালো।
নিয়মিত রক্তের সুগার চেক করা।
প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ করা।
সুষম আহার করা।
নিয়মিত ব্যায়াম করা।
চেকআপের জন্য স্বাস্থ্যপরিচর্যাকারী দলের নানা সদস্যের সঙ্গে দেখা করা।
প্রিয়জনের সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা করা কঠিন হলে ডাক্তারের সঙ্গে পরবর্তী ভিজিটের সময় তাঁর সঙ্গে গেলে ভালো হবে। হয়তো ডাক্তার বলে দেবেন কীভাবে পরিচর্যাকারী তাঁকে সহায়তা করতে পারেন।
সাহায্য করার জন্য যা যা করা যেতে পারে—
সময়সূচি অনুযায়ী নিয়মিত রক্তের সুগার চেক করার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া।
বিভিন্ন ডাক্তার দেখানোর জন্য সময়সূচি নির্ধারণ করে দিতে সাহায্য করা এবং সেখানে যাওয়া-আসার জন্য পরিবহনও নিশ্চিত করা।
রোগের লক্ষণ, উপসর্গ বা এ সম্বন্ধে কোনো প্রশ্ন তাঁর মনে উঠলে, এগুলো চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে রোগীকে সহায়তা করা যায় এবং এসব বিষয় ডাক্তারের সঙ্গে আলাপ করার সময় সহায়ক হতে পারে।
ডায়াবেটিক জরুরি অবস্থা বা জটিলতা হলে কী করা যাবে, এ নিয়ে একটি যৌথ পরিকল্পনা করা যেতে পারে।
প্রিয়জনকে সান্ত্বনা ও উৎসাহ দিতে হবে, রক্তের সুগার খুব উঁচুতে উঠলে বা নিচুতে নামলে দরদ ও সহায়তা দিতে হবে। রক্তের সুগারের এমন উত্থান-পতনকে অতিক্রম করতে কাউকে সাহায্য করলে তা তার জীবনও বাঁচাতে পারে।
ঠিক ঠিক খাবার বেছে নিতেও তাঁকে সাহায্য করা যায়।
খাবার তৈরিতেও সহায়তা দেওয়া যায়।
প্রিয়জনের সঙ্গে ডায়াবেটিস সাপোর্ট গ্রুপের কাছে যাওয়া যায়।
শহরের বাইরে গেলে বা প্রিয়জন থেকে দূরে থাকলে কীভাবে সাহায্য চালিয়ে যাওয়া যায়
দূরপাল্লা পরিচর্যা দেওয়া সহজ নয়। তবে একজন গৃহস্বাস্থ্যসেবিকা পেলে তিনি প্রিয়জনের মাঝেমধ্যে দেখভাল করতে পারেন।
গৃহস্বাস্থ্যসেবিকা একজন রেজিস্টার্ড নার্স। সেই সেবিকা রোগীর গৃহে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দেবেন চিকিৎসক, সমাজকর্মী বা হাসপাতাল টিমের পরামর্শে।
ক্রনিক রোগে আক্রান্ত লোককে এভাবে সাহায্য করতে পারেন সেই সেবিকা:
দেহের প্রধান লক্ষণসংকেত যাচাই করা।
রক্তচাপ মেপে দেখা।
রক্তের সুগার মনিটর করা।
ক্ষত ড্রেসিং বা ক্যাথেটার ব্যবহারে সহায়তা করা।
ডায়াবেটিস পথ্যবিধি সম্বন্ধে জানার জন্য প্রিয়জনকে সহায়তা করা
প্রিয়জনের চিকিৎসক বা গৃহস্বাস্থ্যসেবিকা তাঁকে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়ার জন্য বলতে পারেন। পুষ্টিবিদ যথাযথ ডায়াবেটিক খাদ্য ও বিশেষ চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যবিধি বাতলে দিতে পারেন। যথাযথ খাদ্যবিধি রোগীর স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের ওপর বেশ প্রভাব ফেলে। যথাযথ খাদ্য এবং শর্করা ও আমিষের মধ্যে সমতাবিধান রোগের চিকিৎসায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য সুষম না হলে ব্যক্তির স্বাস্থ্য ভেঙে যেতে পারে।
পুষ্টিবিদের দেওয়া নমুনা খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করা উচিত।
বারডেমের স্বাস্থ্যপরিচর্যা বিভাগ এ ক্ষেত্রে রোগীকে অনেক সহায়তা দিতে পারে।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
(পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।)
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ১৪, ২০১২
Leave a Reply