পালংশাক শীতকালীন শাক। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। এই ভিটামিন মানুষের দেহে জমা থাকে না বা তৈরিও হয় না। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হয়ে গেলে মূত্রের মাধ্যমে শরীরের বাইরে চলে যায়। ভিটামিন ‘সি’ প্রতিদিন খাওয়া উচিত। ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে এই শাকে, যা চোখের ভেতর ও বাইরের অংশগুলোতে পুষ্টি জোগায়। অকাল অন্ধত্ব থেকে রক্ষা করে চোখকে। মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন এ-এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য পালংশাক ভীষণ উপকারী। এতে নেই কোনো চিনির পরিমাণ। তাই মাতৃত্বকালীন ডায়াবেটিস বা ওজন খুব বেশি এমন ব্যক্তিদের জন্য এই শাক নিরাপদ। কচি পালংশাকের স্যুপ দেহে জোগায় অফুরন্ত শক্তি। শরীরের শিরা-উপশিরায় এই শাকের উপাদানগুলো মিশে ত্বকে পুষ্টি জোগায়। চুল পড়া রোধ করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। গর্ভস্থ শিশুর মেধা বিকাশে এই শাকের গুরুত্ব অপরিসীম।
পালংশাকের ডাঁটায় রয়েছে ডায়াটারি, ফাইবার বা আঁশ-জাতীয় উপাদান, যা খাবার হজমে সাহায্য করে, পেটে গ্যাসের পরিমাণ কমায়, রোধ করে পাকস্থলীসহ পেটের যাবতীয় অঙ্গের ক্যানসার। শীতকালের রোদে থাকে আলট্রাভায়োলেট রশ্মি, যা ত্বকের জন্য খুব ক্ষতিকর। এই ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায় পালংশাক।
এতে আয়রনও আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে, যা গর্ভবতী মা, বয়োবৃদ্ধসহ সবার জন্য যথেষ্ট উপকারী। খানিক লবণ আমাদের দাঁত, ঘাড়, চুলকে করে মজবুত। পালংশাকে খানিক লবণও রয়েছে কিন্তু কিছু পরিমাণে। তবে এই শাকের খনিজ লবণ উচ্চ রক্তচাপ বাড়ায় না। তাই হাই ব্লাড প্রেসারের রোগীরা খেতে পারেন এই শাক। যেসব শিশু খিচুড়ি খায়, তাদের খিচুড়িতে সামান্য পালং পাতা দিতে পারেন। এতে শিশুর শরীরে ভিটামিন ‘সি’ ও ‘এ’র ঘাটতি পূরণ হবে। টাটকা ও কম তেল, মসলা দিয়ে রান্না করে খাওয়াই উত্তম। শাক সবাই রাতে হজম করতে পারেন না। নিজের হজম ক্ষমতা বুঝে খাওয়াই ভালো। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে শাকের ভূমিকা অপরিসীম। তারুণ্য বজায় রাখতে এই শাক হোক আপনার শীতকালীন সঙ্গী। পালংশাকে রয়েছে অ্যান্টি এজিং ফ্যাক্টর, অর্থাৎ যে উপাদানটি বয়স বৃদ্ধিজনিত জটিলতাগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
ডা. ফারহানা মোবিন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ১৪, ২০১২
Leave a Reply