যখন কোন সক্ষম দম্পত্তি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার না করে একসাথে থাকার পরও একবছর এবং এর বেশি সময় সহবাস করা সত্ত্বেও সন্তান জন্মদানে ব্যর্থ হয়,তখন সেই দম্পত্তিকে ‘বন্ধ্যা’ এবং দম্পত্তির এই অবস্থাকে বন্ধ্যাত্ব বলে। বন্ধ্যাত্ব শুধুমাত্র সবসময় নারীদের সমস্যা নয়। নারী পুরুষ উভয়ের সমস্যাই বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। এই বন্ধ্যাত্ব পুরুষ অথবা মহিলা অথবা উভয়ের কারণে হতে পারে।
বন্ধ্যাত্বের প্রকারভেদ
১.প্রাথমিক বন্ধ্যাত্ব
যখন কোন মহিলার কখনই গর্ভসঞ্চার হয়নি
২.সেকেন্ডারী বা অর্জিত বন্ধ্যাত্ব
অতীতে কখনও গর্ভ সঞ্চার হয়েছিল কিন্তু পরে দম্পত্তি বিগত এক বছর জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার না করে এক সাথে থাকার পরও গর্ভ ধারণে সক্ষম হননি
পুরুষের ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের কারণসমূহ
- শুক্রাণু কম উৎপন্ন হলে
- শুক্রাণু পুরোমাত্রায় নির্দিষ্ট বেগে গতিশীল না হলে
- স্পার্ম বা শুক্রাণুর আকৃতি স্বাভাবিক না হলে
- শারীরিক মিলনবাহিত রোগের কারণে স্পার্ম বা শুক্রাণুর সংখ্যা ও গতিশীলতা কমে গেলে
- বয়সজনিত কারনে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে গেলে
- কিছু বিশেষ ঔষধ সেবন এবং রাসায়নিক দ্রব্যের প্রভাবে অন্ডকোষের কর্মক্ষমতা কমে গেলে
- অন্ডকোষে আঘাত লাগলে
- রেডিয়েশন বা বিকিরণের জন্যেও শুক্রাণুর উৎপাদন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলে
- পিটুইটারী গ্রন্থির কোন সমস্যা হলে
- থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য হলে
- বহুমূত্র রোগ বা উচ্চরক্তচাপ থাকলে
- অন্ডকোষের পুং হরমোন তৈরীর কোষ লেডিগ সেল এবং শুক্রাণু তৈরীর কোষ সারটোলি সেলের ত্রুটি থাকলে
- কোন সংক্রমণ বা আঘাতের ফলে শুক্রাণু বের হবার পথ বন্ধ হয়ে গেলে
- উশৃঙ্খল জীবনযাপন, ধূমপান, মদ্যপান করলে
- পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব হলে
- গরমে এক নাগাড়ে কাজ করলে, টাইট আন্ডারওয়্যার পড়লে
- মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা করলে
- নিয়মিত বিষন্নতার ঔষধ সেবন করলে
- অতিরিক্ত ওজন হলে
নারীর ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের কারণ সমূহ
- ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বের না হলে বা বের হলেও তাদের আকৃতি স্বাভাবিক না হলে
- ডিম্বাণু নি:সরণের আগে ও পরে কিছু কিছু হরমোন নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী নি:সৃত না হলে
- ডিম্বনালীর গঠনে সমস্যা থাকলে
- জরায়ুর মধ্যের আস্তরণ জরায়ুর ভিতরের অংশ ছেড়ে ডিম্বনালী, ডিম্বাশয় বা জরায়ুর পিছন দিকে ছড়িয়ে গেলে
- গোপনাঙ্গে যক্ষা হলে
- জরায়ুতে টিউমার হলে
- জন্মগতভাবে জরায়ুতে ত্রুটি থাকলে
- অকালে রজ:নিবৃত্তি বা মেনোপজ হলে
- জননাঙ্গর মুখপথে সমস্যা থাকলে
- ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ থাকলে
- পিটুইটারী গ্রন্থির কোন সমস্যা হলে
- থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য হলে
- বহুমূত্র রোগ বা উচ্চরক্তচাপ থাকলে
- কোন সংক্রমণ বা আঘাতের ফলে শুক্রাণু বের হবার পথ বন্ধ হয়ে গেলে
- উশৃঙ্খল জীবনযাপন, ধূমপান, মদ্যপান করলে
- পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব হলে
- নিয়মিত বিষন্নতার ঔষধ সেবন করলে
- অতিরিক্ত ওজন হলে
বন্ধ্যাত্বের যৌথকারণ
- সঠিক পদ্ধতিতে সহবাস এবং উর্বর সময়ে সহবাস করার জ্ঞানের অভাব
- মারাত্মক পুষ্টিহীণতার কারণে অনেক সময় গর্ভসঞ্চার হয় না
বন্ধ্যাত্বের কারণ নির্ণয়ে পরীক্ষা
- স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের রক্ত পরীক্ষা
- স্বামীর বীর্য পরীক্ষা করা
- স্ত্রী ডিম্বাণু তৈরী ও নি:সরণ হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করা
- জরায়ু এবং ডিম্বনালী পরীক্ষা করা
- জরায়ুর ভিতরের স্তরের ঝিল্লি পরীক্ষা করা
- স্বামী ও স্ত্রীর হরমোন পরীক্ষা করা
চিকিৎসার জন্য যোগাযোগ
- বিশেষায়িত সরকারী হাসপাতাল
- জেলা সদর হাসপাতাল
- মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
- বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
- বেসরকারী ক্লিনিক/হাসপাতাল
কি কি ধরণের চিকিৎসা আছে
বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার জন্য প্রথমে কি কারণে বন্ধ্যাত্ব হচ্ছে এবং কার কারণে (স্বামী/স্ত্রী) বন্ধ্যাত্বের সমস্যা হচ্ছে তা নির্ণয় করা হয়। কারণের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা শুরু করা হয়। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:
- ঔষধ প্রয়োগ
- শল্য চিকিৎসা
- কৃত্রিম উপায়ে শুক্রাণু স্থাপন
- অথবা উপরের পদ্ধতিগুলোর সমন্বিত চিকিৎসা।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন.১. নারীদেরই কি শুধু বন্ধ্যাত্ব হয়?
উত্তর.না, বন্ধ্যাত্ব শুধুমাত্র সবসময় নারীদের সমস্যা নয়। নারী পুরুষ উভয়ের সমস্যাই বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।
প্রশ্ন.৪. বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা আছে কি?
উত্তর.হ্যাঁ , আছে। বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা ঔষধ প্রয়োগ, শল্য চিকিৎসা, কৃত্রিম উপায়ে শুক্রাণু স্থাপন ইত্যাদি দ্বারা করা যেতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে একের অধিক পদ্ধতিও প্রয়োজন হতে পারে।
সূত্র: জাতীয় ই-তথ্যকোষ
Leave a Reply