বিজ্ঞজনের বক্তব্য দিয়ে শুরু করি, লুইজিয়ানার ত্বকবিশেষজ্ঞ প্যাট্রিসিয়া ফ্যারিস। ‘আমাদের ভুললে চলবে না যে ত্বক হলো জীবন্ত অঙ্গ, শরীরের। সুস্থ থাকার জন্য দেহের অন্যান্য অঙ্গের যেমন পুষ্টি প্রয়োজন, ত্বকেরও চাই তেমন পুষ্টি।’
ভেতর থেকেই দেহের লালন-পালন চাই—স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে এবং সজল থেকে।
শুধু তা-ই নয়, বাইরেও চাই ত্বকের পুষ্টি। ময়েশ্চারাইজিং ত্বক পরিচর্যার দ্রব্য ব্যবহারও প্রয়োজন সে জন্য। সারা দিনমান ত্বকের প্রকৃতিজাত লিপিডস যা ক্ষয় হয়, সেই ক্ষয় পূরণ হয়।
ত্বক দেহের বৃহত্তম অঙ্গ বটে। কমবেশি ১ দশমিক ৭ বর্গমিটার বিস্তৃত এই ত্বক, বহিরঙ্গের পরিচর্যায় ত্বক প্রসাধনী তো ব্যবহার করছেন অনেকে, জগৎজুড়েই। কিন্তু প্রতিদিন দুটি বা তিনটির চেয়ে বেশি প্রসাধনী ব্যবহার অপ্রয়োজনীয়, অনেক সময় ক্ষতিকরও বটে।
ত্বক তো দেহের আবরণী, লোশন, ক্রিম, টোনার, স্ক্রাব ও ক্লিনজার—প্রয়োগ হয় দেহপটের এই আবরণে। ত্বকের তিনটি স্তরের বহিঃস্তর হলো উপত্বক বা ইপিডারমিস।
পরিবেশের প্রভাব বেশি পড়ে উপত্বকে, যেমন অতিবেগুনি রশ্মি, ত্বক হয়ে যায় বিবর্ণ ও জীর্ণ। ত্বক জরাগ্রস্ত হতে থাকে, হয়ে পড়ে ফ্যাকাশে, কোঁচকানো ও শুষ্ক।
ত্বকের জন্য চাই কম খরচের সহজ-সরল কিছু পরিচর্যা, ত্বক থাকবে সুস্থ ও উজ্জ্বল।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
ত্বক পরিচর্যাসূচির সবচেয়ে মৌলিক উপাদান হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা। এতে ত্বকের ময়লা দূর হয়, দূষণের বস্তুগুলো পরিষ্কার হয়, লোমকূপের মুখ বন্ধ করে আছে যে তেল, তা সরে যায়।
সব ক্লিনজার এক রকম নয়। মুখে দেওয়ার ক্লিনজার হতে হয় সাবানমুক্ত, শরীরের অন্যত্র যে সাবান আমরা ব্যবহার করি, তা ত্বকের জন্য মসৃণ নয়। শুষ্ক ত্বকের জন্য চাই ক্রিমি ক্লিনজার। শুষ্ক বা সংবেদনশীল ত্বক হওয়া উচিত অ্যালকোহলমুক্ত, ক্রিমযুক্ত হোক বা না হোক। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অ্যাসিডিক ক্লিনজার আলফা-হাইড্রোক্সি পণ্য ভালো হবে। সঠিক ক্লিনজার মুখে অন্তত ২০ সেকেন্ড মালিশ করা উচিত।
পানি
মানব শরীর ৫৫ থেকে ৭৫ শতাংশ জলে পরিপূর্ণ। শরীরের দূষিত পদার্থ, বিষ—সব নিষ্কাশন করে পানি, দেহকোষগুলোকে পুষ্টিকণা শুষে নিতে সাহায্য করে। পরিপাক কাজ সাবলীলভাবে হতেও সাহায্য করে।
তাই প্রচুর পানি পান করা উচিত আমাদের প্রতিদিন। কোষের কাজকর্ম ঠিকঠাক থাকে তা হলে। শরীরে যেমন পানিশূন্যতা হয়, ত্বকেও হয় তেমন পানিশূন্যতা। ত্বকের ময়লা সরিয়ে নিতে সাহায্য করে পানি এবং এসব সরে না গেলে ত্বকে দেখা দেয় ব্রণ। ত্বক সজল থাকলে কোমল, পেলব ও মসৃণ হয় এর অবয়ব। ত্বককে সজল রাখার জন্য প্রতিদিন পান করা উচিত দুই লিটার পানি।
আবশ্যকীয় মেদ অম্ল
এই মেদ অম্ল হলো যেকোনো স্বাস্থ্যকর খাদ্যের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। মেদযুক্ত কোষ ঝিল্লি যা ধরে রাখে পানি ও পুষ্টি সেই কোষপ্রাচীর গঠনে সাহায্য করে এই মেদ অম্ল। ত্বকের ক্ষেত্রে এই লিপিডগুলো একটি তৈল দেয়াল সৃষ্ট করে, যা ত্বককে অতিবেগুনি রশ্মি ও দূষণ থেকে রক্ষা করে।
আবশ্যকীয় মেদ অম্ল (এসেনশিয়াল ফ্যাটিঅ্যাসিডস) ছাড়া ত্বক কোষপ্রাচীর, এর পুরো সুরক্ষাব্যূহ কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে না। ত্বক উন্মোচিত, শুষ্ক ও পানিশূন্য হয়ে যায়। আবশ্যকীয় মেদ অম্ল হলো ওমেগা-৩, মেদ অম্ল এবং ওমেগা-৬ মেদ অম্ল। ওমেগা-৬ রয়েছে পোলট্রি, শস্য ও রান্নার তেলে। ওমেগা-৩ রয়েছে শীতল পানির মাছে, তিসি বীজ ও সূর্যমুখীর তেলে, কিডনিবিনস, আখরোট ও পালংশাকে। অনেক ত্বকবিজ্ঞানী অন্য এক আবশ্যকীয় মেদ অম্লের কথা বলেন। গামা লিনোলিক অ্যাসিড। প্রদাহরোধী। উদ্ভিদ তেলে বেশি। আছে মেদ অম্ল সাপ্লিমেন্টও। ত্বকের জেল্লার জন্য এই মেদ অম্ল বড় বেশি চাই।
কড়া রোদ থেকে সুরক্ষা
সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। এতে কেবল ত্বককে ক্যানসার থেকে রক্ষাই করেনি, ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছে সানস্ক্রিন ব্যবহার।
কড়া রোদে উন্মুক্ত বেশিক্ষণ থাকলে ত্বক হয় বিবর্ণ, জেল্লাহীন, কোঁচকানো, কম স্থিতিস্থাপক। কেমিক্যাল সানস্ক্রিন যেমন অ্যাভোবেনজোন বা অক্সিজেনজোন। সঙ্গে যেন সূর্যালোক সুরক্ষা উপাদান (এসপিএফ) ১৫ থেকে বেশি: রোদে যাওয়ার ২০ মিনিট আগে প্রয়োগ করা উচিত।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো হূৎস্বাস্থ্য রক্ষা ও ক্যানসার সুরক্ষার জন্য আলোচিত। আছে ফল, সি-ফুড, সবজি ও তেলে। ফ্রি মেডিকেল-বিধ্বংসী এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বড় হিতকর। ভিটামিন সি ও ই হলো ত্বকবান্ধব অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। আছে মেলেনিয়াম, বিটাক্যারোটিন, দস্তা, থিয়ামিন।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ১৭, ২০১২
Leave a Reply