হার্টের ভাল্ব সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা পরিষ্কার নয়। অনেকে মনে করেন ভাল্ব হার্টের শক্তির উৎস, এটা হার্টকে শক্তি জোগায়। কাজেই ভাল্ব দুর্বল হলে তা পরিবর্তন করে নিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আসলে হার্টের ভাল্ব ব্যাটারি বা আলো জাতীয় কিছু নয়, এগুলো অনেকটা একমুখী দরজার মতো যা এক দিকে খোলে এবং বিপরীত দিকে বন্ধ হয়। আপনারা পানির লাইনে ভাল্ব দেখেছেন যা পানির চলার দিক নিয়ন্ত্রণ করে। এই ভাল্বগুলো পানি চলতে সাহায্য করে কিন্তু ফিরে আসতে বাধা দেয়। হার্টের ভাল্বগুলো ঠিক একইভাবে হার্টের ভেতরে রক্ত চলার দিক নিয়ন্ত্রণ করে।
হার্টের ৪টি ভাল্ব
হার্টে ৪টি ভাল্ব বা দরজা থাকে এবং এর ২টি ভাল্ব বেশির ভাগ সময় অসুস্থ হয়। ভাল্বে সাধারনত দুুই ধরণের অসুস্থতা দেখা যায়- (১) ভাল্ব সরু হওয়ার- ফলে সরু দরজা দিয়ে রক্তের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং প্রয়ে্্াজনীয় পরিমাণ রক্ত সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। (২) ভাল্ব ষবধশ করা- কিছু রক্ত পেছনের দিকে চলে যায় এবং সন্মুখ দিকের রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এই দুই ধরনের অসুখই সঠিকভাবে প্রয়োজনীয় পরিমাণ রক্তপ্রবাহের ক্ষমতা হ্রাস করে এবং হার্ট অতিরিক্ত কাজের মাধ্যমে শরীরের চাহিদা মোতাবেক রক্তপ্রবাহের চেষ্টা করে। এই অতিরিক্ত কাজ করতে করতে এক সময় হার্ট দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সমস্ত শরীরের সঠিক রক্তপ্রবাহ বিঘ্নিত হয়। এ অবস্থায় রোগীর শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে, বুক ধড়ফড় করা, কাশি, বুকে ব্যথা, শরীরে পানি জমাসহ নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়।
এখন প্রশ্ন হলো কেন ভাল্ব অসুস্থ হয়? অনেক কারণে এই রোগ হতে পারে তবে আমাদের দেশে প্রধানতঃ
বাত জ্বরের জটিলতা থেকে এই রোগ বেশি হয়। বাত জ্বর যদি প্রাথমিক অবস্থায় সঠিকভাবে চিহ্নিত না হয় অথবা চিহ্নিত হওয়ার পরেও যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা করা না হয় তখন অনেক দিন পরে হার্ট ভাল্বের অসুখ শুরু হয়। অথচ সঠিকভাবে বাত জ্বরের চিকিৎসা করা হলে ভাল্বের অসুখ পুরোপুরি ফেরানো সম্ভব। সুখবর হলো মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন হয়েছে এবং ভাল্বের অসুখ আগের চেয়ে অনেকাংশে কমে এসেছে।
জন্মগত ত্রুটির কারণে কখনো ভাল্বের অসুখ হতে পারে। এই্ ক্ষেত্রে পূর্বসতর্কতা রোগ প্রতিরোধে তেমন সহায়ক হয় না বরং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থতা রক্ষা করাই মুখ্য উদ্দেশ্য।
বেশি বয়সে ভাল্বে ক্যালসিয়াম জমে কখনো কখনো ভাল্ব শক্ত হয়ে যায় তখন ভাল্বের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হয়। এই ক্ষেত্রেও সঠিক চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে রোগী সুস্থ থাকতে পারেন কিন্তু পূর্বসতর্কতা রোগ প্রতিরোধে তেমন কার্যকরী হয় না।
ভাল্বের অসুখ হলে একজন ভালো হার্টের চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আপনার রোগের গুরুত্ব অনুসারে সঠিক এবং সময়োপযোগী চিকিৎসা নির্ধারণ করবেন। ভাল্বের অসুখ শুনেই ভীত হবেন না, বর্তমানে এই রোগের অত্যন্ত কার্যকরী, গ্রহণযোগ্য সুচিকিৎসা আছে, যার মাধ্যমে পুরোপুরি সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব। অযথা বিভ্রান্ত হবেন না, হার্টের অসুখ মনে হলে একজন দক্ষ হার্টের চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
——————————
ডা. এম. আখতার হোসেন
লেখকঃ কনসালট্যান্ট-কার্ডিয়াক সার্জন, স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ২০ এপ্রিল ২০০৮
Leave a Reply