রক্তে সুগার বেড়ে গেলে মন-মেজাজে কী রকম প্রভাব পড়ে—তা নিয়ে কথা হচ্ছিল। রমনা পার্কে হাঁটা সেরে বকুলতলায় জমায়েত হয়েছিলেন তাঁরা। হাঁটার সঙ্গীদের সঙ্গ কী করে ছাড়ি? যোগ তো দিতেই হয়।
ডায়াবেটিসের রোগী প্রায় সবাই। তাই এসব নিয়ে কথাবার্তা। হাঁটার সঙ্গীদের নাম সব কাল্পনিক। নাম উল্লেখ প্রয়োজন নেই। বঙ্কুবাবু বলছিলেন, ‘ডায়াবেটিস নিয়ে কত জটিলতাই হয়। আমারও যে মাঝেমধ্যে হয় না, তা-ও নয়। তবে আমার রক্তের সুগার যখন টালমাটাল করে, আমি বেশ বুঝি, কেমন যেন বিষণ্ন হয়ে যায় মন। কারও হয় এমন সমস্যা?’
মহিউদ্দিন সাহেব মুখ খুললেন, ‘কিছুটা আমি জানি সমস্যা সম্বন্ধে।’ বারডেমে ক্লাস করে বেশ জ্ঞানী তিনি। পুরোনো রোগীও। বেশ অভিজ্ঞতা। রক্তের গ্লুকোজের ওঠানামা অবশ্যই পরিবর্তন আনে মন-মেজাজে। রক্তে সুগার কমে গেলে অনেকে যুদ্ধংদেহী হয়ে ওঠেন; লড়াকু ভাব মনে: আবার উচ্চে উঠে গেলে কেমন যেন মিইয়ে যান: অবসন্ন মন। স্বাভাবিক মানে গ্লুকোজ রাখতে পারলে ভালো লাগে শরীর-মন। সমস্যা বেশি হলে চিকিৎসককে দেখাবেন, হয়তো ওষুধের কোনো পরিবর্তন সুফল আনবে।
জন বললেন এবার, ‘দেখুন, আমি এমন একজনকে জানি, তাঁর রক্তের সুগার খুব নেমে গেলে কেমন হীনম্মন্য হয়ে পড়েন। ছোট বাচ্চাদের প্রতি এমন দুর্ব্যবহার করেন, আমি অবাক হয়ে যাই!’ কেমন পাল্টে যান সে ভদ্রলোক! আশ্চর্য! বিরাজবাবু বয়স্ক। ভারিক্কি চালে চলেন। বলেন, তিন বেলার খাবারের আগে আমাদের পরিবারে মেজাজ পরিবর্তন বেশ দেখা যায়। আবার বৃদ্ধ বাবাও আছেন, তাঁর জন্য, আমার জন্য ও পরিবারের অন্যদের জন্য নিয়মিত আহার অবশ্য চাই, তা না হলে মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে যায় সবারই! এই যে যখন বাইরে আছি, নিয়মিত না খেলে কেমন উত্তেজিত হয়ে যাই আমি। তাই বাইরে যখন যাই, সব সময় পকেটে বা ঝোলায় খাবার নিয়ে বের হই। আর জলের বোতল। আমি শরীরচর্চা কতটুকু করব, ব্যায়াম কতটুকু, শ্রমের কাজ কী পরিমাণ করব, তা বুঝে-শুনে স্ন্যাকস সঙ্গে নিই। যখন দেখি আজ বেশ হাঁটব বা দৌড়াব, পাহাড় বেয়ে উঠব (যদিও তা হয় কদাচিৎ), সঙ্গে নিই প্রোটিন ও কিছু শর্করা খাবার। যখন গাড়ি চালাই, স্ন্যাকস খাই না, গাড়ি থামাই, তারপর খাওয়া। অন্য সময় আমি ঠিক করে রাখি, সময়মতো কিছু একটা খাব। কখনো এক মুঠো ভাজা বাদাম হলেও খাই।’ জন বলেন, ‘ঠিক। আমারও রক্তের সুগার একটু বেড়ে গেলে কেমন বিগড়ে যায় মেজাজ।’
সরোজবাবুর অভিজ্ঞতা অন্য রকম। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তাঁরও। বিচিত্রও বটে, ‘সেই ১৯৯৯ সাল থেকে আমার ডায়াবেটিস।
মেজাজের চড়াই-উতরাই, শরীরের কম্পন, কুলকুল ঘাম ঝরা, উষ্ণ মেজাজ—সবই আমার অভিজ্ঞতার অংশ। আমি আগে যেসব জঞ্জাল খাবার খেতাম, ফাস্টফুড, সেসব ছেড়েছি, এখন ফল ও সবজি আমার মূল খাদ্য। মাছ ও কচি মোরগ, লাল মাংস ছেড়েছি। ভিটামিন আমার প্রিয়। আমার ভেতর-বাইরে খুব জোরালো অনুভব, আমার মেজাজ তখন চনমনে। আমি ঈশ্বরের প্রার্থনা করি নিয়মিত। হাঁটি। যোগব্যায়াম করি। আমি খুব ভালো। আজ এত বছর আমি বেশ ভালো…।’
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১২
Leave a Reply