কুষ্ঠ রোগ একটি দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ হলেও এটা অতটা সংক্রমক রোগ নয়। কুষ্ঠ রোগের ফলে খুব কমই মৃত্যু হতে দেখা যায়। তবে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারকে অনেক মানসিক ও সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
কুষ্ঠ রোগ কি
মাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রি (Mycobacterium leprae ) নামক জীবাণুর সংক্রমণের কারণে কুষ্ঠ রোগ হয়। কুষ্ঠ রোগ মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডের বাইরের দিকের স্নায়ু (Peripheral Nerves), ত্বক, অন্ডকোষ (testes), চোখ এবং নাকের মিউকাস মেমব্রেনের ক্ষতি করে।
কুষ্ঠ রোগ কিভাবে ছড়ায়
- আক্রান্ত ব্যক্তির নাক-মুখ দিয়ে সর্দি (Droplet) ঝরলে এবং সুস্থ ব্যক্তির শ্বাস নেয়া ও স্পর্শের মাধ্যমে কুষ্ঠ রোগ ছড়াতে পারে
- জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হলেও অধিকাংশ ব্যক্তির কুষ্ঠরোগ হয় না। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ ও দীর্ঘস্থায়ী মেলামেশার ফলে কুষ্ঠ রোগ হতে পারে। ক্ষণস্থায়ী মেলামেশার কারণে এটি ছড়ায় না।
- আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাধারণত স্পর্শের মাধ্যমে এটি ছড়ায় না।
- কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জীন অনেক সময় সংক্রমণের জন্য দায়ী থাকে। ফলে জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হলে তাদের কুষ্ঠ রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে।
কুষ্ঠ রোগ হয়েছে কি করে বুঝবেন
সংক্রমিত হওয়ার অন্তত এক বছর আগ পর্যন্ত কোন লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যায় না। সাধারণত: সংক্রমণের ৫-৭ বছর পর কুষ্ঠ রোগের উপসর্গ গুলো দেখা যায়। উপসর্গগুলো ধীরে ধীরে বাড়ে।
কুষ্ঠ রোগ হলে সাধারণত: যেসব লক্ষণ ও উপসর্গ গুলো দেখা দেয়:
- টিউবারকিউলয়েড কুষ্ঠ (Tuberculoid leprosy) : ত্বকে লালচে দাগের পাশাপাশি কিছু কিছু জায়গায় মসৃণ সাদাটে দাগ দেখা যায়। আক্রান্ত স্থান অসাড় (Numb) হয়ে যায়।
- লেপরোমেটাস কুষ্ঠ (Lepromatous leprosy) : ত্বকে অনেক ক্ষুদ্র পিন্ড অথবা অনেকখানি স্থান জুড়ে বিভিন্ন আকারের লালচে দাগ দেখা যায়। শরীরের বেশিরভাগ স্থান অসাড় হয়ে যায় এবং মাংসপেশী দূর্বল হয়ে পড়ে। ত্বকের বেশির ভাগ অংশ এবং শরীরের বেশিরভাগ অঙ্গ যেমন-কিডনী, নাক, অন্ডকোষ আক্রান্ত হতে পারে।
- বর্ডারলাইন কুষ্ঠ (Borderline leprosy) : এক্ষেত্রে টিউবারকিউলয়েড কুষ্ঠ এবং লেপ্রোমেটাস কুষ্ঠের বৈশিষ্ট্য গুলো বিদ্যমান থাকে। চিকিৎসা না করানো হলে এটি অনেকটা টিউবারকিউলয়েড কুষ্ঠের মত বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। যদি আরো খারাপ আকার ধারণ করে তাহলে লেপ্রোমেটাস কুষ্ঠের মত হতে পারে।
অন্যান্য উপসর্গ
- স্পর্শ, ব্যথা ও তাপমাত্রার অনুভূতি হ্রাস পায়
- যাদের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তারা মনের অজান্তেই নিজের ক্ষতি করতে পারে যেমন: শরীরের কোন জায়গায় পুড়ে যেতে পারে, কাটা অথবা অন্যভাবে বার বার ক্ষয়ের ফলে হাত ও পায়ের আঙ্গুল হারাতে পারে।
- ত্বকের যেসব স্থান সংক্রমিত হয় সেসব জায়গায় পিন্ড দেখা যায় বা ফুলে যায় ।
কখন ডাক্তার দেখাবেন
উপরোক্ত লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
কোথায় চিকিৎসা করাবেন
- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
- জেলা সদর হাসপাতাল
- মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
- বেসরকারী হাসপাতাল
কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে
কুষ্ঠ রোগের উপসর্গ দেখেই ডাক্তার বুঝতে পারেন যে কুষ্ঠ হয়েছে। তবে রোগ নিশ্চিত করার জন্য নিচের পরীক্ষাগুলো করানো হয় :
- আক্রান্ত স্থানের ত্বকের কলা (Skin tissue) পরীক্ষা
- রক্তের পরীক্ষা
কি ধরণের চিকিৎসা আছে
রোগের ধরণ, মাত্রা এবং রুগীর বয়সের উপর কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:
- দীর্ঘ সময় ব্যাপী এন্টিবায়োটিক সেবন
- ড্যাপসোন (Dapsone ) দিয়ে জীবনব্যাপী চিকিৎসা
কিভাবে কুষ্ঠ রোগ প্রতিরোধ করা যায়
- আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে নিঃসৃত তরল (bodily fluid) এবং তাদের ত্বকের যে ফুসকুড়ি তার সংস্পর্শে আসা যাবে না
- বিসিজি টিকা নেবার মাধ্যমে কুষ্ঠ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। তবে এটা অতটা প্রচলিত নয়।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন .১ .কাদের কুষ্ঠ রোগ হবার ঝুঁকি বেশি ?
উত্তর. কুষ্ঠ রোগ যে কোন বয়সেই হতে পারে। তবে ৫-১৫ বছর বয়সী অথবা ৩০ এর বেশি বয়সীদের এই সমস্যা দেখা দেয়।
প্রশ্ন .২ .কুষ্ঠ রোগ কয় ধরণের হয় ?
উত্তর . শরীরের যেসব জায়গায় ত্বক আক্রান্ত হয়েছে তার উপর নির্ভর করে কুষ্ঠ রোগকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
- পসিব্যাসিলারী (Paucibacillary) : ত্বকের পাঁচটি জায়গায় বা এর চেয়ে কম জায়গা আক্রান্ত হয়।
- মাল্টিব্যাসিলারী (Multibaicllary) : ত্বকের ছয়টি বা এর চেয়ে বেশি জায়গা আক্রান্ত হয়।
রোগের উপসর্গের উপর নির্ভর করে কুষ্ঠ রোগকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
- টিউবারকিউলয়েড কুষ্ঠ (Tuberculoid Leprosy)
- লেপ্রোমেটাস কুষ্ঠ (Lepromatous Leprosy
- বর্ডারলাইন কুষ্ঠ (Borderline Leprosy)
প্রশ্ন.৩. কুষ্ঠ রোগের ফলে কি কি জটিলতা দেখা দিতে পারে?
উত্তর. কুষ্ঠ রোগের ফলে নিচের জটিলতাগুলো দেখা দেয় :
- পায়ের নিচে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে যার ফলে হাঁটতে গেলে পায়ে ব্যথা করে
- নাসিকাতে ক্ষতের কারণে নাকে সমস্যা হতে পারে এবং নাক থেকে রক্তপাত হতে পারে এমনকি নাক ক্ষয়ে যেতে পারে
- চোখের ক্ষতির কারণে গ্লুকোমা অথবা অন্ধত্ব হতে পারে
- পুরুষদের লেপ্রোমেটাস কুষ্ঠ হলে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে ব্যর্থ (Erectile dysfunction/Impotence) এবং সন্তান জন্মদানে তারা অক্ষম (Infertile) হন
- কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট হয় যায়
সূত্র: জাতীয় ই-তথ্যকোষ
আমার বাবার কুষ্ঠ রোগ আছে ।যখন ধরা পরে তখন আমার বাবার জীবানু ছিল R-Ear=5+L-Ear=5+ Lesion=Nodiul =6+ result=BI হাসপাতাল থেকে ১বছর ঔষধ খাই তার পর জীবানু পরীক্ষা করে R-EAR-2+ L-Ear- 3+ ।আমার বাবার কোন উপকার পায় নি ।cortanখেলে ভাল থাকে না খেলে ভাল থাকেনা হাত পা ব্যাথা করে জ্বর আসে শরীল দূবল হয়ে পরে ।cortanখেলে সম্পূন ভাল হয়ে যায় ।এখন Lampring ঔষধ চলছে ।আমার বাবা কী এই রোগ থেকে কোন দিন মুক্তি পাবে না ।
রোগের চিকিৎসা আছে তবে দীর্ঘদিন ধরে এন্টিবায়োটিক সেবন করে যেতে হবে।
শরীর এ জ্বালাপোড়া,চামড়ায় সাদা সাদা দাগ, সাদা জায়গা থেকেই চামড়া উঠা ,
এ গুলো কোন রোগ আর বৈশিষ্ট ?
শ্বেতী রোগ হতে পারে। ডাক্তার দেখাবেন।