৪০ পেরিয়েছে? আপনাকে অভিনন্দন, তারুণ্যকে উপভোগ করার জন্য। আপনার শারীরিক সুস্থতা এই তারুণ্যকে আরও অনেক দিন ধরে রাখবে, যদি আপনি একটু সচেতন হোন। অনেকেই ভাবেন, ৪০ হয়ে গেল, এবার তো ‘বৃদ্ধে’র দলে নাম লেখালাম। মনের তারুণ্যের কোনো বয়স নেই, কিন্তু শরীরের তারুণ্যের আছে।
কাজেই শরীরের তারুণ্যকে ধরে রাখতে ৪০ পেরোলেই। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করা জরুরি।
শরীরের ভেতরে যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো আমরা বাইরে থেকে দেখি না—৪০ বছর নিরলসভাবে আপনাকে সচল রাখছে, রেখেছে তারা। কাজেই ওদের একটু-আধটু ক্লান্তি তো আসতেই পারে, লাগতে পারে কিছু ‘সার্ভিসিং’।
তাই শরীরের বাইরে-ভেতরে অন্তরে অন্তরে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে নেওয়া চাই সুস্থতার জন্য। ৪০ হচ্ছে বিভিন্ন রোগবালাইয়ের সতর্ক সংকেত-জ্ঞাপক বয়স। অনেক রোগবালাই আছে, যেগুলো এ বয়সে প্রাথমিকভাবে ধরা পড়লে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়। অনেক রোগ প্রতিরোধ করা যায় আগাম সতর্কতা নিয়ে।
বয়স যখন চল্লিশ
৪০ বছর বয়স হলে একটি রুটিন চেকআপ করিয়ে নেওয়া ভালো—গোটা শরীরের।
আজকাল অনেক এক্সিকিউটিভ চেকআপের প্যাকেজ বেরিয়েছে। আর্থিক সচ্ছলতা থাকলে সেগুলো করিয়ে নিতে পারেন। অথবা আপনার পারিবারিক রোগবালাইয়ের ইতিহাস জানা থাকলে সে অনুযায়ী কিছু বিশেষ রোগের পরীক্ষা করতে পারেন। সাত দিনের মধ্যে কয়েকবার রক্তচাপ মাপুন, লিখে রাখুন মাত্রা। রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করে নিন, স্থূলকায় হলে ওজন মাপুন, বিএমআই হিসাব করুন। দেখে নিন কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডের মোট পরিমাণ। শ্বাসকষ্টের ইতিহাস থাকলে একটু বুকের এক্স-রে, সঙ্গে স্পাইরোমেট্রি করে নিন। লিভার ঠিক আছে কি না, জানতে লিভার ফাংশন টেস্ট আর কিডনি ঠিক আছে কি না, জানার জন্য সিরাম ক্রিয়েটিনিন ও ইউরিয়া দেখে নিন। গিঁটে ব্যথা থাকলে জেনে নিন ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ। সম্ভব হলে রিপোর্টগুলো নিয়ে একজন চিকিৎসক অথবা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
চল্লিশোর্ধ্ব পুরুষ
৪০ পেরোলেই রক্তের কিছু পরীক্ষা করা জরুরি। ধরুন, আপনার পরিবারে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা হূদেরাগের ইতিহাস আছে। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের ক্রনিক রোগগুলো আপনারও হওয়ার সম্ভাবনা আছে। রক্তের গ্লুকোজ মাপার জন্য জিটিটি করিয়ে নিন। জেনে নিন আপনার প্রস্টেটের অবস্থাটা, বিশেষ করে বয়স ৫০ হয়ে গেলে। পিএসএ আজকাল সহজেই করা যায়। অনেক ক্যানসার স্ক্রিনিং টেস্ট বেরিয়েছে, একটা রুটিন স্ক্রিনিং করিয়ে নিতে পারলে নিশ্চিত থাকা যায়।
চল্লিশোর্ধ্ব নারী
পেপস্মেয়ার টেস্ট—জরায়ুমুখের পরীক্ষা। ৪০ পেরোলে সব নারীরই করা উচিত। জানা উচিত এবং নিজে নিজেই পরীক্ষা করা দরকার—স্তনে কোনো চাকা আছে কি না। মাসিক বন্ধ হওয়াকে মেনোপোজ বলে। ৪০ বছরের শেষে কিংবা ৫০ বছরের শুরুতে হয়। তখন একটা হরমোন অ্যাসেসমেন্ট করিয়ে নিলে ভালো। আর সঙ্গে রক্তের অন্য পরীক্ষাগুলো তো থাকবেই।
চল্লিশ পেরোলেই চালশে
৪০ হলে চোখের লেন্স বুড়ো হয়ে যায়, বিশেষ করে কাছের জিনিস দেখতে অসুবিধা হয়। তাই চোখ পরীক্ষা করিয়ে চশমা বা রিডিং গ্লাস নেওয়াটা জরুরি। যাঁরা পারফরমার, মানে শিল্পচর্চায় জড়িত, নাক-কান-গলাও একবার পরীক্ষা করিয়ে নিন।
খাবার আগে ভাবুন
৪০ পেরোলেই খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। বেশি খেলেই বিপদ। অবশ্যই রসনা-বিলাস চলবে, তবে পরিমিত। জিভের লোভ সামলাতে হবে এখন থেকেই। হিসাবটা খুব সোজা—এখন থেকে বেশি খাবেন তো বেশি ভুগবেন। অল্প খাবেন, পরিমিত খাবেন, ভালো থাকবেন, তারুণ্য থাকবে—আশিতেও।
ওষুধপত্র
ধরুন, চেকআপের ফলাফল থেকে কিছু রোগবালাইয়ের পূর্বাভাস পাওয়া গেল, কোনো দুশ্চিন্তা করবেন না। এটা বরং আপনার জন্য ভালোই হলো। নিয়ম মেনে ওষুধ খান, শরীরচর্চা করুন, করুন মেডিটেশন—একাগ্রচিত্তে ভাবুন, বলুন, করুন সঠিক কাজটি, ‘আমি ভালো আছি, সুস্থ আছি, সুস্থ থাকব।’
ইকবাল কবীর
সহকারী অধ্যাপক, ইপিডেমিওলজি বিভাগ, নিপসম
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১২
Leave a Reply