কোনো কোনো সার্জনের ভুল ধারণা রয়েছে যে, জটিল ফিস্টুলা অপারেশন করতে পেটে কৃত্রিম মলদ্বার (colostomy) করতে হবে। আমি মনে করি কোনো জটিল ফিস্টুলার অপারেশনে (colostomy) করার প্রয়োজন নেই। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে আমি কয়েকটি রোগীর অপারেশন করেছি যাদের ইতোমধ্যে ১ বা ৩ বার অপারেশন হয়েছিল এবং এর মধ্যে দু-একবার (colostomy) করেও অপারেশন করা হয়েছিল; কিন্তু অপারেশন ব্যর্থ হয়েছে। এদেরকে আমি (colostomy) না করেই অপারেশন করেছি এবং তারা ভালো হয়েছেন। তবে ব্যতিক্রমী কিছু ফিস্টুলা আছে যার জন্য কলোস্টমি করতে হয় যার সংখ্যা অত্যন্ত কম। গত নয় বছরে এরূপ কয়েকটি ফিস্টুলার জন্য আমি কলোস্টমি করেছি।
জটিল ফিস্টুলা অপারেশন সিটন প্রযুক্তি?
আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে হিপোক্রেটিস এই প্রযুক্তির ধারণার জন্মদাতা। এ প্রযুক্তিতে মলদ্বারের মাংসপেশিকে অত্যন্ত ধীরে ধীরে কাটার ব্যবস্থা করা হয়। ২-৩ সপ্তাহে কাটা সম্পন্ন হয়। রাবার ব্যান্ড অথবা পেনরোজ ড্রেইন টিউবের সাহায্যে মাংসপেশিকে বেঁধে দেয়া হয়।
এ প্রযুক্তির কারণে স্থানীয়ভাবে প্রদাহের সৃষ্টি হয় যার কারণে মাংসপেশি দূরে সরে যায় না। এটি কত দিন পরপর ব্যবহার করতে হবে এবং কী কৌশল অবলম্বন করতে হবে তা বেশ বৈচিত্র্যময়। এটি নির্ভর করছে যে সার্জন অপারেশন করবেন তার ওপর। ইতোমধ্যে আমি চট্টগ্রামের একজন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের অত্যন্ত জটিল একটি ফিস্টুলা অপারেশন করেছি। এর আগে তিনি ১৯৯৪ সালে একজন অভিজ্ঞ সার্জন দ্বারা অপারেশন করান; কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সফল হননি। এরপর তিনি অপারেশনের জন্য আমেরিকা যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। পরে সিদ্ধান্ত পাল্টিয়ে আমাকে দিয়ে অপারেশন করান। তার তিনটি ফিস্টুলার মধ্যে দু’টি অত্যন্ত জটিল ছিল। প্রথম দিন অপারেশনে আমি সিটন প্রয়োগ করি। ৭ দিন পর এটি অপসারণ করে অন্যটিতে সিটন প্রয়োগ করি এবং এর ১৪ দিন পর দ্বিতীয় সিটনটি অপসারণ করে আবার প্রয়োগ করি যা ৭ দিন পর আবার অপসারণ করি। তিনি সম্পূর্ণ ভালো হয়েছেন।
অপারেশনের সাফল্য
অপারেশনের কথা শুনলে রোগীরা বলেন স্যার, শুনেছি অপারেশন করলে আবার হয় তাই অপারেশন করে আর লাভ কী? কিন্তু আমি বলব, অপারেশনের সাফল্য চমৎকার। কিন্তু এক কথায় এর উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। কারণ ফিস্টুলার প্রকার ভেদের কারণে এর সাফল্য তুলনা করা কষ্টসাধ্য। এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন সার্জনের বিভিন্ন অপারেশন কৌশল। কী কারণে ফিস্টুলা হয়েছিল তার ওপরও ফলাফল নির্ভর করে। সাফল্য ও ব্যর্থতার মাপকাঠি হচ্ছে তিনটিঃ
(ক) পুনরায় ফিস্টুলা হওয়া;
(খ) ক্ষত শুকাতে অতিরিক্ত দেরি হওয়া;
(গ) মল ও বায়ু ধরে রাখার অক্ষমতা।
অপারেশনের ব্যর্থতার মূল কারণ হচ্ছে যদি সার্জন ফিস্টুলার ভেতরের মুখটি শনাক্ত করতে ব্যর্থ হন এবং এটি সম্পূর্ণ কেটে ফেলতে না পারেন। আমি এটি শনাক্ত করার চেষ্টা করি যখন রোগী আমাকে চেম্বারে দেখায় তখনই। এবং অপারেশনের সময় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আমি এটিকে শনাক্ত করতে চেষ্টা করি। তবে জটিল ফিস্টুলা আবার হওয়ার সম্ভাবনা সাধারণতঃ ৭-১৫ শতাংশ।
কম জটিল ফিস্টুলার অপারেশন
অপারেশনের পর ৪-৯ শতাংশ আবার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ক্ষত শুকাতে দেরি হয়ঃ ৭ শতাংশ ক্ষেত্রে। বায়ু এবং মল নিয়ন্ত্রণের সামান্য অক্ষমতা ৭-১২ শতাংশ।
—————————-
অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক
লেখকঃ বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান, কলোরেকটাল সার্জারি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
চেম্বারঃ জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ৫৫, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা।
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১৩ এপ্রিল ২০০৮
Leave a Reply