প্রকাশক হ্যারি পটার ছাপতে রাজি হননি। কিন্তু লেখক জে কে রাউলিং ভেঙে পড়েননি তাতে। এক প্রকাশক থেকে অন্য প্রকাশকের কাছে ধরনা দিয়েছেন। আর তা যদি না করতেন তবে চোখের আলোয় আমরা হ্যারি পটার অ্যাডভেঞ্চার পড়তে পারতাম না। জীবন এ রকমই। প্রত্যাখ্যান-ব্যর্থতার ঢেউ আসতে পারে যেকোনো সময়।
যেকোনো ব্যর্থতা হূদয় স্পর্শ করে
বড় হোক বা ছোট হোক, কারও কাছে ‘না’ শোনাটা বেদনাদায়ক। সেরা কলেজে ভর্তি হতে না পারা, স্কুলের ফুটবল দলে ঢুকতে না পারা, তোমার মন বিষণ্নতায় ছেয়ে দিতে পারে।
তুমি জোক বলার শেষে কেউ হেসে উঠল না, তুমি দেরি করে স্কুলে এলে তোমার কোনো বন্ধু তোমার জন্য সিট রেখে দেয়নি কিংবা কেউ একজন তুমি ছাড়া আর সবার সঙ্গে কথা বললে, এতে তোমার সুকোমল মন কষ্ট কাঁটায় বিদ্ধ হতে পারে।
কেউ যখন ফিরিয়ে দেয় বা কেউ যখন গ্রহণ করে নেয়, তার বিপরীত আবহাওয়া তৈরি করে। কিন্তু এটা এমন না যে তোমাকে পছন্দ করা হয়নি, তোমাকে মূল্য দেওয়া হয়নি। এটা হলো এক বিশেষ ক্ষণের, বিশেষ পরিস্থিতির বিশেষ একজনের কাছে আটকে যাওয়া এক পশলা সিদ্ধান্ত, যা সময়ে কাজ করেনি।
যেকোনো প্রত্যাখ্যান দুঃখ উৎপাদন করে। কিন্তু তা সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে জীবন চলে না। তুমি যদি ব্যর্থ হবে এ ধারণা নিয়ে কোথাও না যাও, তবে কখনো তুমি যা পাওয়ার আশায় উদ্গ্রীব, তা কখনো অর্জন করতে পারবে না।
আবেগের ধরন কী প্রকারের লিখে নাও
আঘাত দিয়েছে
ক্রোধ উৎপন্ন করেছে আপসেট হতাশা তৈরি করেছে মূল্য দেয়নি বেদনা জাগিয়ে দিয়েছে অপমানজনক আশাভঙ্গ পরিত্যক্ত হিসেবে ফেলে গেছে অগ্রহণযোগ্য মনে করেছে ক্ষত সৃষ্টি করেছে
না পাওয়ার বেদনা কীভাবে সামলাবে
সততা ধরে রাখো—পুরো ঘটনা বিশ্লেষণ করো। মনঃকষ্টের ওপর আরও বেশি ব্যথা রঙের প্রলেপ লাগাবে না।
প্রত্যাখ্যাত হওয়ার চাপ কতটা মেপে নাও—এটা কি সাধারণ পরিমিতির, না বেশ ভারী মেঘদল মন আকাশে জড়ো হয়েছে? যদি চাও তো ঝরো ঝরো মুখর কেঁদে ফেলো। তার লাঘব হয়ে যাবে।
অন্য কারও সঙ্গে কথামালা গেঁথে নাও। ‘হ্যাঁ ওরে, আমি স্কুল ফুটবল দলে খেলতে চেয়ে ছিলেম। পরিশ্রমও অনেক করেছি কিন্তু পারিনি। কেননা আমার অন্য বন্ধুরা আরও ভালো করেছে।’ এতে অন্য জন তোমার সঙ্গে সহমর্মিতা দেখাবে। সমর্থন পাবে আর তোমার মর্মবেদনা ভাষা খুঁজে পেয়ে বাষ্প হয়ে উড়ে যেতে পারে।
পজিটিভ হও—
বেশি বেদনায় আক্রান্ত হলে কোনো সফলতা আসে না। উদ্যম অব্যাহত রাখো।
ব্যর্থতার ইতিহাস সর্বদা স্মরণ করতে নেই।
নিজের ওপর বেশি দোষ চাপাবে না। ‘আমি পারিনি। কারণ, তিনি আমার সঙ্গে চলতে চাননি।’ ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা জ্বালিয়ে ফেলো। কখনো এ রকম চিন্তা কোরো না—‘আমি তাঁকে আকর্ষণ করতে পারিনি বলে তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন।’ তা হলে তোমার আত্মবিশ্বাস তলানিতে নেমে যাবে।
দূরদর্শিতা দেখাও
এবার পারিনি, সামনের বার হতে পারে। তবে এগিয়ে যেতে হবে।’
তুমি যেসব ক্ষেত্রে পারদর্শী, সেসব নিয়ে যত্ন করো।
তুমি যে উদ্যম বজায় রেখে চলেছ, সে জন্য নিজেকে ধন্যবাদ দাও। যাঁরা তোমার প্রশংসা করেছেন, তাঁদের কথাগুলো গুনগুনিয়ে নাও।
প্রত্যাখ্যানকে সুযোগ মনে করো
না পাওয়ার বেদনা একটা জ্বালা, তবে তা চিরস্থায়ী নয়।
এটা তোমার জন্য নবসুযোগের সোনার বিন্দু হতে পারে। নিজেকে আরও উন্নতির পথে পরিভ্রমণের টার্নিং পয়েন্টও হতে পারে।
ব্যর্থতার গ্লানি খুব কষ্টের, তবে যদি সঠিক পথে পা বাড়াও তোমার খেলা, পড়াশোনা, ইন্টারভিউ কৌশল পরবর্তী সময়ে নতুন প্রতিভায় উচ্চমাত্রা পাবে।
দার্শনিকের মতো বলে ওঠো, ‘হ্যাঁ, মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটে, তা আমরা সহসা বুঝে উঠতে পারি না।’
সুসংবাদ
সব আবেগ জোয়ার-ভাটার স্রোতের মতো। জীবন নদীতে আসবে-যাবে।
কোনো কোনো লোক বেশি মাত্রায় সংবেদনশীল।
সামান্যতেই গলে যায়-পুড়ে যায়। তবে শুভ সংবাদ, এই সবাই সময়ের পরশে এ তরঙ্গ উতরাতে পারে।
ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা মেরুদণ্ড নিয়ে উঠে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়। ‘এবার হবে’—এমনতর আত্মবিশ্বাস শাণায়।
প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১২
Leave a Reply