বাইরে বের হচ্ছেন? স্থান কি কোনো ফাস্টফুডের দোকান? একটু দাঁড়ান। বাইরে খাব না, হাঁটতে বের হব—গতকাল রাতেই নিজের সঙ্গে এ নিয়ে বোঝাপড়া করে নিয়েছিলেন। কিন্তু আজ বেমালুম ভুলে গিয়েছেন। এটা অবশ্য প্রায় প্রতিদিনের ঘটনা। রোজই এমন শর্ত দেওয়া হয় নিজেকে, রোজই সেটা ভঙ্গ করা হয়। ফলাফল, ওজন ক্রমাগত বেড়েই যাচ্ছে।
ওজন করছে না তোয়াক্কা
‘ডায়েট ও ব্যায়াম করব।’ এমন ভাবার সঙ্গে সঙ্গেই কাজ শুরু করে দিন। না, তখনই জুতা পরে দৌড়াতে হবে না। কিন্তু কিছু ছোট পদক্ষেপই অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে। ক্যালরি বেশি আছে—এ ধরনের খাবার দূরে সরিয়ে রাখুন। ভাতের পরিমাণ কমিয়ে দিন। সালাদ ও সবজির পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। পরোটার বদলে হাতে বানানো রুটি খান। বাইরের খাবারের প্রতি ঝোঁক কমান। আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতে হবে বাসায় বানানো খাবারের প্রতি। আগ্রহ বাড়াতে হবে শাকসবজি ও ফলমূলের দিকে। পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার আরও জানান, বাইরের খাবারে মসলা ও তেল বেশি থাকে। তাতে পেটে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই খাবারগুলো অনেক সময় অপুষ্টিকর ও জীবাণুযুক্ত হয়। কাটা ফল, শসা ও গাজর মুখে দেওয়ার আগে ধুয়ে নিতে হবে।
তবে বাইরের মুখরোচক খাবার বাদ দিতে হবে বলে মন খারাপের কোনো কারণ নেই। আপনার পছন্দের খাবারগুলো বাসায় তৈরি করে খেতে পারেন। সেটা স্যান্ডউইচ হোক আর পিৎজ্জাই হোক। তৈরি করে নিতে পারেন নানা ধরনের শরবত। কষ্ট একটু হবে, কিন্তু তাজা খাবার তো খেতে পারছেন।
ব্যায়াম করার পদক্ষেপগুলো নিয়ে ফেলুন। বাসায় নিজের কাজগুলো নিজেই করুন। আলমারি গোছানো, কাপড় ইস্তিরি করা, গ্লাসে পানি ঢেলে খাওয়া প্রভৃতি।
প্রতিদিন ঘুমানোর দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা আগে রাতের খাওয়ার পাট চুকিয়ে ফেলার পরামর্শ দিলেন পারসোনা হেলথ জিমের প্রধান প্রশিক্ষক ফারজানা খানম। তিনি জানান, জীবনকে সঠিক নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। তাড়াতাড়ি ঘুমানো, সকালে ওঠা, রাত সাড়ে আটটার মধ্যে খাবার খাওয়া এবং প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ব্যায়াম শুরু করার আলসেমিতে পেয়ে বসলে জিমে ভর্তি হতে পারেন। উৎসাহ বেড়ে যাবে অনেকাংশে।
মায়েদের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে অনেক। শিশুরা বায়না করলেই বাইরের খাবার ও পানীয় কিনে দেবেন না। বকাঝকা না করে ভালোভাবে এর ক্ষতিকর দিক বোঝাতে হবে।
সঠিক উপায় জেনে নিন
ইচ্ছামতোন খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন অথবা ব্যায়াম করে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন। গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রওশন আরা বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষই আলাদা। এ কারণে প্রত্যেকের খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের পদ্ধতি আলাদা হবে। কোনো বেলায়ই খাবার বাদ দেওয়া যাবে না। অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার কম খেতে হবে, কিন্তু ক্ষুধার্ত থাকা যাবে না। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। হাঁটার সময় প্রথম ২০ মিনিটে কোনো ক্যালরি ক্ষয় হয় না। এ সময় শুধু ওয়ার্মআপ হয়। তারপর শুরু হয় ক্যালরি ক্ষয়। প্রতিদিন একই সময়ে ব্যায়াম করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। কারডিও ব্যায়াম দিয়ে শুরু করতে হবে। অর্থাৎ হাঁটা, সাঁতার কাটা অথবা জগিং। পাশাপাশি ফ্রি হ্যান্ড, ইয়োগা ও অ্যারোবিক্স করতে পারেন। তবে এর জন্য দরকার হবে সঠিক জ্ঞান ও ধারণা। দরকার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ। নিজে থেকে কিছু করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
সাবধানতা
অনেকেরই হাঁটু, কোমর ও পিঠে ব্যথা থাকে। হূদরোগ ও ফুসফুসে সমস্যা থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের ব্যায়ামের আগে চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে। কারণ, ব্যায়ামের সময় এসব জায়গায় চাপ সৃষ্টি হয়। রওশন আরা জানান, যদি হাঁটুতে অস্টিয়ো আর্থরাইটিস থাকে, তাহলে হাঁটার সময় অসুবিধা হয়। এ ক্ষেত্রে যতক্ষণ স্বচ্ছন্দে হাঁটা যাবে, ততক্ষণই হাঁটতে হবে। ২০ মিনিট হাঁটার পর যদি ব্যথা শুরু হয়, তাহলে বিরতি দিয়ে পরে আবার ২০ মিনিট হেঁটে নেবেন। ব্যায়াম ততক্ষণই করা উচিত, যতক্ষণ শারীরিকভাবে কোনো কষ্ট না হয়।
না খেয়ে থাকার প্রবণতা থেকে পেপটিক আলসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে দুই ঘণ্টা পর পর খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে। এমন কোনো খাবার আপনার খাদ্যতালিকায় রাখবেন না, যেটায় আপনার সমস্যা হয়। অনেকের দুগ্ধজাতীয় খাবার খেলে সমস্যা হয়। অনেকের এ সমস্যা হতে পারে টক খেলে। খাবার তালিকা তৈরির সময় আপনার পরামর্শককে এ সমস্যাগুলো অবশ্যই জানাবেন।
হাঁটার সময় হালকা ওজনের জুতা বেছে নিন। এর তলা যেন সমান না হয়। নিচে কার্ভ আছে, এমন জুতা পরে হাঁটতে হবে। ঘাম শুষে নেবে—এমন পোশাক বেছে নিলে ভালো হবে।
দরকার অনুপ্রেরণা ও সচেতনতা
হয়তো গত মাসে আপনার ওজন ছিল ৫৯ কেজি। এ মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১ কেজিতে। কারণ, বাইরে খাওয়া বেড়ে গেছে। ব্যায়ামও আর নিয়মিত করা হচ্ছে না। প্রতিদিনই ভাবছেন, আগামীকাল থেকে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ শুরু করব। উল্টাপাল্টা খাওয়া বন্ধ করব অথবা ব্যায়াম করব। রোজকার রুটিনে সবকিছুই করা হচ্ছে, কিন্তু এগুলো আর করা হচ্ছে না। সব অনুপ্রেরণা ঢাকা পড়ে যাচ্ছে আলসেমি আর অবহেলায়।
বারডেমের পুষ্টি বিভাগের প্রধান আখতারুন নাহার বলেন, ‘কাল নয়, আজ থেকেই শুরু করুন। তার চেয়েও ভালো হয়, যখন ভাবছেন তখন থেকেই শুরু করা। সঠিক ও পরিমিত খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত ছোটবেলা থেকেই।’
নিজেকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার বিষয়টি নিজে থেকেই তৈরি করতে হবে। খাদ্যাভাসে পরিবর্তন ও ব্যায়ামের ইতিবাচক বিষয়গুলো চিন্তা করতে হবে। পারসোনা হেলথ জিমের প্রধান প্রশিক্ষক ফারজানা খানম জানান, মানসিক শান্তি, শারীরিক সুস্থতা ও দুশ্চিন্তামুক্ত হওয়ার জন্য ব্যায়াম অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। বয়স ৪০ পার হলে অনেক ধরনের শারীরিক অসুবিধা দেখা দেয়। আগে থেকে যত্ন নিলে এবং সচেতন হলে নিজেকে সুস্থ রাখা যাবে অনেকাংশে।
রয়া মুনতাসীর | তারিখ: ২৮-০৮-২০১২
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো
Leave a Reply