বড় লেবু, মোসাম্বি বা এর রস ওষুধের সঙ্গে ক্রিয়া করতে পারে। গ্রেপফ্রুটে অথবা এসব লেবুতে যে পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি আছে, তা বাদ দেওয়া যাবে না। কমলা ও লাইম থেকে তা আহরণ করুন।
ওষুধের ক্রিয়ার সঙ্গে খাবারের সম্পর্ক তো আছে। তাই চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করে নিলে ভালো। উচ্চ রক্তচাপ, দুশ্চিন্তা বা অনিদ্রার ওষুধ খেলে এর সঙ্গে ক্রিয়া করতে পারে বড় লেবু বা মোসাম্বির মতো ফল।
কাঁচা সবজি: দাঁতগুলো যদি হয় সংবেদনশীল ও ক্ষয়ে যাওয়া অথবা ফোকলা যদি হয় কেউ, তাহলে কাঁচা সবজি তো খাওয়া ঠিক নয়। সে জন্য এর মধ্যে যে ভিটামিন ও আঁশ তা বাদ দেবেন না। সবজি রান্না করুন নরম হওয়া পর্যন্ত। গাজর, মিষ্টিকুমড়া বা বিট সেদ্ধ করে, স্যুপে, ঝোলে বা স্টুতে দিয়েও খাওয়া যেতে পারে।
শিম, মটরশুঁটি: কিছু মানুষ শিম এড়িয়ে যায়। কারণ, এগুলো খেলে পেটে ব্যথা হয়, অনেক সময় গ্যাস হয়। কিন্তু খাবার থেকে তো তা বাদ দেওয়া যাবে না। শিম, মটরশুঁটি, বরবটি—এসব বাদ দিলে কি চলে? আঁশের একটি চমৎকার উৎস এগুলো। এ ছাড়া আছে প্রোটিন ও লোহা। এতে চর্বিও খুব কম। তাই খাবারে শিম যোগ করতে হবে কম করে করে, ধীরে ধীরে। গ্যাস বেশি হলে খেতে হবে সাধারণ ওষুধ।
দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য: বয়স হলে, বুড়ো হলে দুধ বা দুগ্ধজাত দ্রব্য হজম করতে অসুবিধা হতে পারে।
তবে এ জন্য সব দুগ্ধজাত দ্রব্য বাদ দেওয়া কেন? কেন বাদ দিতে হবে এর অন্তর্গত প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম? বরং কম করে খেলে পেটে সহ্য হবে। কিছু দুগ্ধজাত দ্রব্য সহ্য হয় বেশি।
যেমন—দই বেশ সহ্য হয়। চর্বিহীন সরল দই ও লো ফ্যাট পনির বেশ পুষ্টিকর। ল্যাকটোজমুক্ত দুগ্ধজাত দ্রব্যও ব্যবহার করা যায়।
ক্যাফিন: ক্যাফিন সবার জন্য সমস্যা না হলেও অনেকে এটি গ্রহণের পর উদ্বিগ্ন বা বদমেজাজি হয়ে উঠতে পারেন।
ক্যাফিন বাড়াতে পারে হূদ্ঘাতের হার, ঘটাতে পারে ঘুমের সমস্যা। ক্যাফিন গ্রহণ না করতে চাইলে ধীরে ধীরে কমিয়ে এরপর বন্ধ করুন। দ্রুত বন্ধ করলে মাথা ধরা, বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
ক্যাফিনেটেড পানীয়ের বদলে ধীরে ধীরে নিন পানি, হারবাল চা ও ডি ক্যাফ।
মাংস: মাংসের ছোট টুকরোও দাঁতে লাগে, হজম হয় না। বেশ চর্বি। সবচেয়ে ভালো হলো মাছ। মাছে-ভাতে বাঙালি।
খুব লোনা খাবার: বয়স চল্লিশের বেশি হলে, সিডিসির পরামর্শ, প্রতিদিন এক হাজার ৫০০ মিলিগ্রাম সোডিয়ামের বেশি গ্রহণ করা ঠিক হবে না। খুব বেশি সোডিয়াম গ্রহণ করলে বাড়ে রক্তচাপ। হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। বড় কারণ হলো প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেমন—হিমায়িত খাবার, স্ন্যাকস, নোনতা খাবার, ফার্স্ট ফুড, আচার, সালাদ ড্রেসিং, লাঞ্চমিট প্রভৃতি। সোডিয়ামমুক্ত ‘লো সল্ট’ ‘নো সল্ট’ বিকল্প খোঁজা উচিত।
বাঁধাকপিজাতীয় সবজি: এসব সবজি অনেকে এড়িয়ে চলেন। কারণ, এগুলো খেলে পেটে প্রচুর গ্যাস হয়। কুসিফেবাস সবজি যেমন—ব্রকোলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি—এসব খেলে গ্যাস হয় বটে তবে এগুলোয় আছে প্রচুর ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন, আঁশ, ক্যালসিয়াম, লৌহ ও ফলেট। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এসব সবজি খেলে ক্যানসারের ঝুঁকিও কমে। তাই একেবারে বাদ নয়, কম কম করে যোগ করা যায় খাওয়ায়। সঙ্গে প্রচুর জল পান।
ফল: তাজা ফলে আছে প্রচুর ভিটামিন, আঁশ ও অন্যান্য পুষ্টি উপকরণ। তবে দাঁতে অসুবিধা, চিবোতে সমস্যা। প্রতিদিন একটি আপেল বা পেয়ারা খেতে সমস্যা হয়। তাহলে খেতে হবে নরম ফল, যেমন—কমলা, জাম, কলা, তরমুজ প্রভৃতি। ফ্রুট জুস, ফুট স্মুথিও ভালো।
টাটকা অঙ্কুর: মুলা কুচি, মুগের অঙ্কুর ও অঙ্কুরিত ছোলায় উঁচুমাত্রায় ভিটামিন বি ও অন্যান্য পুষ্টি আছে। তবে বুড়োদের জন্য অঙ্কুুরিত খাবার মানানসই নাও হতে পারে। তাই খেতে হবে রয়ে-সয়ে।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১৫, ২০১২
Leave a Reply