কী কী পরীক্ষা করা উচিত
হার্টঅ্যাটাকের পর রোগীর উপসর্গ অনুযায়ী নিয়মিত ইসিজি ফলোআপ, ইকোকার্ডিওগ্রাফি এবং ইটিটি করানো উচিত। প্রয়োজনবোধে ক্টে এমপিআই বা থ্যালিয়াম স্টক্ষ্যানিং করানো যেতে পারে। উপরোক্ত পরীক্ষার আলোকে কখনো কখনো করোনারি অ্যানজিওগ্রামও করা হয়ে থাকে।
করোনারি অ্যানজিওগ্রাম কী
করোনারি ধমনীর রোগ বা বস্নকেজ হয়েছে কিনা তা নির্ণয়ের জন্য করোনারি অ্যানজিওগ্রামকে গোল্ড ল্ট্যান্ডার্ড ধরা হয়। এটি কোনো সার্জিক্যাল অপারেশন নয়, লোকাল অ্যানেস্থেসিয়ার মাধ্যমে রোগীর পায়ের কুঁচকি বা হাতের ধমনীর মাধ্যমে ক্যাথেটার (সরু প্লাস্টিক টিউব) প্রবেশ করানো হয়। তারপর অল্প পরিমাণ কন্ট্রাস্ট মিডিয়া বা ডাই প্রবেশ করিয়ে বুকের এক্সরে ছবি নেয়া হয়। এর মাধ্যমেই করোনারি ধমনীতে শতকরা কত ভাগ বস্নকেজ হয়েছে তা জানা যায়।
হার্টঅ্যাটাকের পর কখন রোগী স্বাভাবিক কাজ করতে পারেন
হার্টঅ্যাটাকের কতদিন পর রোগী স্বাভাবিক কাজকর্ম বা কাজে যোগদান করতে পারেন তা নির্ভর করে কাজের মানের ওপর অর্থাৎ কতটা স্ট্রেসফুল কাজ। এছাড়া হার্টঅ্যাটাক যেটা হয়েছিল তা কতটা ভয়াবহ ছিল তার ওপর। দেখা গেছে, হার্টঅ্যাটাকের পর কারো কারো জীবনের প্রতি ভালোবাসা আরো বেড়ে যায়। কারো কারো আরেকটি হার্টঅ্যাটাকের ভয় পেয়ে বসে। তবে একথা সত্য, হার্টঅ্যাটাকের রোগীদের শতকরা দশ ভাগ এক বছরের মধ্যে আরেকটি অ্যাটাকের সম্মুখীন হন। তবে রোগী যদি ভালোভাবে চিকিৎসকের ফলোআপে থাকেন, এই ঝুঁকি বছরে তিন থেকে চার ভাগ কমানো সম্ভব। পরবর্তী হার্টঅ্যাটাক প্রতিরোধে সঠিক রিহ্যাবিলিটেশন পরিকল্কপ্পনা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে শরীর এবং মনের যম্নম্ন নেয়া সল্ফট্টব। সাধারণত হার্টঅ্যাটাকের পর যদি কোনো জটিলতা না হয় তবে রোগীকে ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। আস্তে আস্তে ছোটখাটো কাজের মাধ্যমে হার্টকে প্রস্টৗুত করা হয়।
অধিকতর জটিল হার্টঅ্যাটাক নয়, এমন রোগীর ক্ষেত্রে ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে রোগী স্বাভাবিক কাজকর্মে যোগদান করতে পারেন। তবে স্ট্রেস হয় এমন কাজ করা উচিত নয়। যেমন গাড়ি চালানো এ সময়টাতে না করাই উত্তম।
করোনারি অ্যানজিওপ্লাস্টি
এটি একটি মেডিকেল পব্দতি, যার মাধ্যমে সরু রক্তনালীকে প্রশস্ত করা হয়। যে পথে অ্যানজিওগ্রাম করা হয়েছিল, সেই একই পথে ক্যাথেটারের সঙ্গে বেলুন প্রবেশ করানো হয়। বেলুন ফুলিয়ে করোনারি ধমনীর সরু অংশটুকু প্রশস্ত করা হয়। এতে করে ধমনীর ভেতর রক্তের প্রবাহ স্বাভাবিক হয়ে যায়। ধমনীর এই প্রশস্টৗতাকে ধরে রাখতে স্টেন্ট (stent) বা রিং বসানো হয়। বিভিন্ন ধরনের স্টেন্ট ব্যবহৃত হয়। Bare Metal stent এবং Drug eluting stent (DES) ড্রাগ কোটেড স্টেন্ট অপেক্ষাকৃত ব্যয়সাপেক্ষ তবে বেশি কার্যকর বলে পরীক্ষিত।
অ্যান্টিপ্ট্বাটেলেট ড্রাগ বল্পব্দ করবেন না
আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিপ্লাটেলেট ড্রাগ (Blood thinner)বন্ধ করবেন না। বেয়ার মেটাল স্টেন্টের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ছয় মাস এবং ড্রাগ কোটেড স্টেন্টের ক্ষেত্রে কমপক্ষে এক বছর অ্যাসপিরিন এবং ক্লোপিডোগ্রেল ওষুধ চালিয়ে যাবেন। শুধু তাই নয়, জটিল অ্যানজিওপ্লাস্টির ক্ষেত্রে কখনো কখনো ক্লোপিডোগ্রেল ওষুধটি ২/৩ বছরও চালাতে হয়। নতুবা স্টেট থ্রম্বোসিস হয়ে ধমনী পুনরায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সমস্যা দেখা দেয় রোগীর শরীরে অন্যান্য অপারেশনের প্রয়োজন হলে। অনেক সার্জন অপারেশনের পাঁচদিন আগে থেকেই এ ওষুধ দুটো বল্পব্দ করে দেন কারণ বস্নাড থিনার ওষুধের উপস্থিতিতে অপারেশনের সময় বেশি রক্তপাত হয়। কিন্তৗু এতে করে মারাত্মক স্টেন্ট থ্রম্বোসিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এক্ষেত্রে যদি অপারেশন জরুরি না হয়ে থাকে তবে নহ্ন্যনতম ছয় মাস বা এক বছর পর অপারেশন করা উচিত। ইমার্জেন্সি হলে কমপক্ষে একটি ওষুধ অর্থাৎ অ্যাসপিরিন বা ক্লোপিডোগ্রেল চালিয়ে যেতে হবে।
————————
ডাঃ এস এম মোস্তফা জামান
সহকারী অধ্যাপক, হ্নদরোগ বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
দৈনিক ইত্তেফাক, ১২ এপ্রিল ২০০৮
Leave a Reply