বাচ্চাকে নিরাপদে ওষুধ সেবন খুব সহজ কাজ নয়। বিশেষত ছোট্ট শিশুর ওষুধের ডোজ খানিক কম বা বেশি হলে তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে এসব কথা শোনার পর। শিশুকে ওষুধ সেবনের আগে নিশ্চিত হওয়া চাই, কোনটার প্রয়োজন আছে, কোনটার নেই। মা-বাবার জানা উচিত, শিশুর আরোগ্য লাভে ওষুধ ব্যতিরেকে অনেক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা আছে, যা ওষুধের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর যেমন, ফ্লুতে আক্রান্ত শিশুকে— যথেষ্ট বিশ্রাম দিন, এতে তার শরীর ক্ষতি সামলিয়ে ওঠার পথ পাবে। প্রচুর পরিমাণে পানীয় ও তরল খাবার খাওয়ানো (পানীয় জল, জুস)—ডায়রিয়া, বমি ঘনঘন, শ্বাস-প্রশ্বাসে ও সর্দিজল ঝরাজনিত পানিস্বল্পতা দূর হবে।
নাসারন্ধ্রে স্যালাইন ড্রপস দেওয়ার সাহায্যে নাকের জ্যামের উপশম হবে।
নিরাপদে ওষুধ সেবনের পদক্ষেপগুলো
ওষুধের নাম ও কার্যক্ষমতা জেনে নেওয়া। কত পরিমাণে, দৈনিক কতবার, কত দিন পর্যন্ত ওষুধ চলবে। ওষুধ কি মুখে খাওয়ার, ইনহেলার বা চোখে, কানে, পায়ুপথে কিংবা ত্বকের মাধ্যমে ব্যবহূত হবে? এ ওষুধ নিয়ে কি কোনো বিশেষ নির্দেশনা আছে, যেমন—খাওয়ানোর আগে বা পরে। ওষুধ কীভাবে সংরক্ষণ করা হবে। সচরাচর প্রতিক্রিয়াগুলো কী কী? অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া।
শিশুর যদি কোনো ডোজ বাদ যায় তাহলে কী হবে?
কখনো না— প্যারাসিটামলের মতো ওষুধ শিশুর ব্যথা লাঘবে প্রায়ই দেওয়া হয়। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া শিশুকে ওষুধ সেবন না করানোই উত্তম। শিশুবয়সের ওষুধের ডোজ তার ওজন অনুযায়ী বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নির্ধারিত হয়।
ছয়মাসের নিচের বাচ্চাকে প্রেসক্রিপশন ব্যতিরেকে কাশির ওষুধ না খাওয়ানো উত্তম। শিশুকে কখনো এসপিরিন দেবেন না, বিশেষত ভাইরাসজনিত অসুখের সময়। এতে প্রাণঘাতী ‘রি সিনড্রোম’র শিকার হতে পারে সে।
নিজে নিজে শিশুর সমস্যা নির্ণয় করতে যাবেন না, চিকিৎসককে সব জানানো ভালো। বোতলে থেকে যাওয়া ওষুধ ফেলে দিন। ওষুধ গ্রহণের আগে ওষুধের মেয়াদকাল ভালোভাবে দেখে নিন।
বড়দের ওষুধ কখনো বাচ্চাদের দিতে নেই। একই বোতলের ওষুধ দুই বাচ্চার জন্য ব্যবহার করতে নেই। প্রত্যেক শিশুর আলাদা আলাদা ডোজ থাকে।
একই কেমিক্যালস হলেও দুই ব্র্যান্ডের ওষুধ না খাওয়ানো উচিত। ওষুধের প্যাকেট ছেঁড়া, খোলা, মেয়াদোত্তীর্ণ কি না, যাচাই করে দেখুন। স্থানীয় ফার্মাসিস্টের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলুন, তিনি আপনাদের পরিবারের সদস্যদের ব্যবহূত ওষুধ সম্পর্কে ধারণা রাখেন।
ওষুধ সেবন করানোর আগে—
ওষুধ প্রেসক্রিপশন মতো কি না দৃষ্টি রাখুন, বিশেষত একসঙ্গে কয়েকটা ওষুধ থকলে ঘুম ঢুলঢুলু—চোখে বিভ্রান্ত হতে পারেন। খাবারের সঙ্গে ভরা পেটে ওষুধ সেবন।
খাবার বা দুধ পানের সঙ্গে সেবনের কথা বলা হলে বুঝতে হবে খালি পেটে এ ওষুধ পাকস্থলীকে উত্ত্যক্ত করবে অথবা এ খাবার ওষুধ শোষণে সুফল আনে।
খাবারের আগে বা খালি পেটে ওষুধ সেবন—এখানে ওষুধ খাবার গ্রহণের এক ঘণ্টা আগে অথবা খাবার গ্রহণের দুই ঘণ্টা পর সেবন করানো হয়, কেননা খাবার শিশুর ওষুধ শোষণে বাধা সৃষ্টি করে অথবা খাবার ওষুধের গুণাগুণ নষ্ট করে দেয়।
সঠিক মাত্রার ডোজ শিশুকে খাওয়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নানা পদ্ধতিতে তা করা যায়। যে শিশু এখনো পান করতে অভ্যস্ত নয়, তাকে ডোজিং সিরিঞ্জ ব্যবহার করে, প্লাস্টিক ড্রপার, ছোট ডোজিং কাপের সাহায্যে সঠিক ডোজ খাওয়ানো চাই। কখনো রান্নাঘরের চামচ ব্যবহার করে ওষুধ খাওয়ানো ঠিক নয়। নির্দেশনায় সতর্কীকরণ না থাকলে ছোট বাচ্চাকে অল্প নরম খাবারের সঙ্গে পুরো ওষুধের ডোজ মিশিয়ে খাওয়ানো যায়। তবে বেবি বোতলে মিশিয়ে কখনো খাওয়ানো উচিত নয়।
সতর্কতা
কখনো শিশুকে ‘দেখো দেখো চকলেট খাবে এবার’ এ রকম বলে ওষুধ সেবন করাবেন না। এটা পরবর্তী সময়ে ব্যাক ফায়ার হয়ে আসবে। একান্ত সময়ে শিশু মজা পেয়ে বেশি মাত্রার ডোজ খেয়ে পয়জনিংয়ের শিকার হবে।
খাওয়ানোর পর পর বমি করে ফেললে দ্বিতীয়বার সেবন না করিয়ে ফার্মাসিস্ট বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
র্যাশ, বমি, ডায়রিয়া—এসব প্রতিক্রিয়া দেখা গেলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।
ওষুধ সেবনের পর পর যদি শ্বাসে শাঁই শাঁই শব্দ হয়, শ্বাসকষ্ট হয়, তবে ইমারজেন্সিতে চলে যান।
নিরাপদে ওষুধ সংরক্ষণ। শিশুর কৌতূহলী চোখ ও হাতের নাগালের বাইরে থাকুক সব ওষুধ।
অব্যবহূত ওষুধও শিশুর নাগালের বাইরে রাখুন। পরিবেশ দূষিত না করে সেদিক লক্ষ রেখে এ ওষুধ দূষিত সামগ্রীর ব্যবস্থাপনা মতো ডিসপোজেল করবেন।
প্রণব কুমার চৌধুরী
ছবিটি প্রতীকী। মডেল: মা সাদিয়া খন্দকার ও মেয়ে সামরীন জামান
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১৮, ২০১২
Srikanta
amar cheler age 11 month or ekhono dath (teeth) beroi ni ki bapar bujhte parchi na. amar ki kora uchit.
Bangla Health
আরো কিছুদিন দেখুন।