কয়েক দিন ধরেই শুভর (ছদ্মনাম) মন ভালো নেই। কান দুটো কেমন যেন ভারী হয়ে আছে, চুলকাচ্ছে, ভেজা ভেজা লাগছে। কটন বাড দিলে কালো ময়লা আসছে। খুবই অস্বস্তিকর অনুভূতি। বন্ধুরা টের পেলে কী যে হয়!
অন্যদিকে ছোট বাচ্চাটাকে নিয়ে পুষ্পিতার (ছদ্মনাম) চিন্তার শেষ নেই। কয়েক দিন ধরে মাঝে মাঝে ব্যথা বলছে। কান পরিষ্কার করলে ভেজা কাগজের মতো কী যেন বের হচ্ছে। বাচ্চার কান পরীক্ষা না করালেই নয়, ভাবছেন পুষ্পিতা।
আসলে স্থান-কাল-পাত্র ভিন্ন ভিন্ন হলেও সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে কানে ছত্রাকের সংক্রমণ হওয়ার জন্য। যার নাম অটোমাইকোসিস।
ষড়্ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। এখানে রোদ, আর্দ্রতা, স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া স্বাস্থ্যসচেতনতার অভাব ছত্রাক সংক্রমণের জন্য অনুকূল হিসেবে বিবেচিত হয়। তা ছাড়া ডায়াবেটিস ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি থাকলে ছত্রাক সংক্রমণ সহজতর হয়।
ছত্রাক সংক্রমণ: কারা দায়ী?
বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক দিয়ে সংক্রমণ হতে পারে।
এদের মধ্যে কোনোটি দেখতে কালো, কোনোটি বাদামি, সাদা আবার কোনোটি ভেজা কাগজের মতো আঠাল।
ছত্রাক সংক্রমণ হলে কেমন করে জানা যাবে আসলেই কি সংক্রমণ হয়েছে অথবা কী ধরনের ছত্রাক সেখানে আছে। ছত্রাক সংক্রমণ হলে রোগীরা যেসব সমস্যার কথা বলে বা যেসব লক্ষণ আমরা পাই সেগুলো হলো:
কানে অস্বস্তিকর অনুভূতি হওয়া।
কানে ব্যথা হওয়া।
কান বন্ধ হয়ে যাওয়া।
কান চুলকানো।
কানে সামান্য কম শুনতে পাওয়া।
কান ভেজা ভেজা লাগে। কান থেকে মাঝেমধ্যে তরল পদার্থের নিঃসরণ হওয়া। তবে এর পরিমাণ সাধারণত বেশি হয় না।
এসব লক্ষণ নিয়ে রোগী যখন নাক কান গলা রোগের চিকিৎসকের কাছে আসে তখন কান পরীক্ষা করলে যা পাওয়া যাবে:
কান বলতে বাইরে থেকে যেটা দেখি সে অংশটা সাধারণত স্বাভাবিক থাকে। খুব বেশি সংক্রমণ হলে কানের চামড়া আক্রান্ত হতে পারে।
কানের ছিদ্র থেকে পর্দা পর্যন্ত প্রায় ইঞ্চি খানেক লম্বা যে পথ সেখানে ছত্রাকের দলা পাওয়া যেতে পারে।
যদি ছত্রাকের সঙ্গে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ হয় তাহলে সেখানে তরল পদার্থ নিঃসরণ হয়। এমনকি দুর্গন্ধ হতে পারে। ছত্রাকের দলা কালো, বাদামি, সাদা অথবা ভেজা কাগজের মতো দেখতে হবে।
কানের পর্দা স্বাভাবিক থাকবে। তবে কখনো কখনো সংক্রমণের তীব্রতার ওপরে নির্ভর করে লাল হতেও পারে।
কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন আছে কি?
আছে। সময় ও সুযোগ থাকলে পরীক্ষা করা যেতে পারে।
অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে জীবাণুমুক্ত পদ্ধতিতে কান থেকে ছত্রাকের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে কালচার ও সেনসিটিভিটি পরীক্ষার জন্য পাঠানো যেতে পারে।
যেসব রোগীর বারবার কানে ছত্রাকের সংক্রমণ হয়, তাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ নির্ণয় করা যেতে পারে। কারণ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে কানে ছত্রাকের সংক্রমণের হার বেশি।
রোগনির্ণয় তো হলো, এবার চিকিৎসা দেওয়ার পালা।
চিকিৎসা দেব। কীভাবে দেব? কী করব?
একজন নাক কান গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ভালো করে রোগের বিবরণ শুনে, কান পরীক্ষা করে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে ধীরে ধীরে কান থেকে ছত্রাকের দলা বের করবেন। কানটা শুকনো করবেন।
তারপর ছত্রাকরোধী মলম বা ড্রপ দেবেন। বাজারে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন রকমের ওষুধ পাওয়া যায়। পুরো মাত্রায় পুরো মেয়াদে যথাযথভাবে ওষুধ ব্যবহার করলে পুরোপুরি রোগমুক্ত হওয়া যায়। কান সেরে যাবে।
এর পাশাপাশি ডায়াবেটিক থাকলে তার যথাযথ চিকিৎসা করতে হবে, নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ওষুধ ব্যবহার শেষে পুনরায় কান পরীক্ষা করাতে হবে। এর পাশাপাশি কানে ব্যথা হলে ব্যথানাশক বড়ি খেতে হবে। যদি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ হয়, তাহলে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে।
কানে চুলকানি কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের এন্টিহিস্টামিন বড়ি থেকে সঠিক ওষুধটি বেছে নিতে হবে।
প্রতি ক্ষেত্রেই একজন যোগ্যতাসম্পন্ন নাক কান গলা রোগ বিশেষজ্ঞের সরাসরি তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা গ্রহণ এবং ফলোআপ করতে হবে। অন্যথায় হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
কানে ছত্রাকের সংক্রমণ হতে রক্ষা পেতে হলে সব সময়ের জন্য আমাদের যা করণীয় তা হলো:
দেশলাইয়ের কাঠি, কটন বাড, মুরগির পাখা, ঝাড়ুর শলা, কাপড়, কলমের ক্যাপ প্রভৃতি দিয়ে কান খোঁচানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
রাস্তাঘাটে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যারা কান পরিষ্কার করে তাদের দিয়ে কান পরিষ্কার না করানো।
নোংরা ময়লা পানিতে গোসল না করা।
ডুব দিয়ে গোসল না করা।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা।
মো. নাজমুল ইসলাম
সহকারী অধ্যাপক, নাক কান গলা রোগ বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১১, ২০১২
kaner porda sukie gele ki ta thik kora sombob…
আগে পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
kaner porda nosto hoe gese onek age vitore sukie gese ekhon kono opration er maddome thik kora sombob….
শুকিয়ে গেলে অপারেশনে কাজ নাও হতে পারে। হেয়ারিং এইডে কাজ হবে কিনা, পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
আমার কানে গোসল করার সময় পানি গেছে এখন কিছুতেই বেরকরতে পারছিনা
দয়া করে বলবেন কি করা যায়
এতদিনে কি ঠিক হয়েছে?
Hi.sir ami sani bolchi sir amar sob somoy jor feel hoy jor niramoyer kuno upay takle plz amake ans: diben
খাওয়া দাওয়া ঠিক রাখুন আর ফিটনেস বাড়াতে ব্যায়াম করুন। তাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। এ ধরনের হালকা সমস্যা হবে না।
সার আমার দুই কনেল লতি(যেখানে কানের ছিদ্র করে) ওখানে অনেকদিন ধরেই দেখা যায় ভেতরে কিছু গুটি আছে।ওগুলো মাঝে মাঝে পেকে য়ায় ও পরে সের যায় এবং আবার হয়। দুই কানেই।এটাকি কোনো সমস্যা? যদি তাই হয় তবে ওসুধের নাম বলবেন। ধন্যবাদ
ঠাণ্ডা লাগার ধাত থাকলে অনেক সময় এমন হয়। শারীরিক ফিটনেস বাড়ান। এতে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে। ফলে এ ধরনের সমস্যা কমে হবে।