চোখের রোগ বিভিন্ন রকমের। এর মধ্যে কিছু রোগ আছে যেগুলো প্রধানত মানুষের অন্ধত্বের জন্য দায়ী থাকে। তবে এই পরিচ্ছেদে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব না। এখানে চোখের অন্যান্য রোগ ও ইনফেকশন নিয়ে আলোচনা করব। এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরিণামেও মানুষ অন্ধ হতে পারে।
চক্ষু পল্লবের রোগ
জন্মগতভাবে চক্ষু পল্লবে ফাঁক থাকতে পারে। অল্প ফাঁক থাকলে কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন না হলেও চলে। তবে বেশি ফাঁক থাকলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চক্ষু পল্লব ঠিক করে নেয়া উচিত।
অ্যাপিক্যানথাস রোগও জন্মগতভাবে হতে পারে। এই রোগের বৈশিষ্ট্য হলো ত্বকের একটি খাড়া ভাঁজ নাকের গোড়া থেকে চক্ষু পল্লবের অন্তকোণ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। সাধারণত এর জন্য কোনো চিকিৎসা না করলেও চলে। তবে অনেকেই চেহারার সৌন্দর্যের কথা চিন্তা করে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অ্যাপিক্যানথাস মুক্ত হয়ে থাকেন।
ব্লেফারাইটিস
অক্ষিপল্লবের প্রান্তের প্রদাহকে ব্লেফারাইটিস বলে। এ রোগ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এ রোগ হলে অক্ষিপল্লবের প্রান্তে ছোট ছোট দানার মতো খুশকি হয়। রোগাক্রান্ত জায়গাটুকু লাল ও একটু ফোলা ফোলা লাগতে পারে। অনেক সময় সামান্য ঘায়ের মতো হতে পারে; যারা এই ব্লেফারাইটিসে আক্রান্ত হন, তাদের অনেকের মাথায় খুশকি দেখা যায়। চোখের খুশকি সঠিক চিকিৎসা ও চোখের স্বাস্থ্যকর অবস্থা সৃষ্টির মাধ্যমে সারানো যেতে পারে। অনেক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চোখের অ্যান্টিবায়োটিক স্টেরয়েড মলম নিয়মিতভাবে কিছুদিনের জন্য লাগাতে হতে পারে।
অঞ্জনি
চক্ষু পল্লবের কেশ প্রান্তের ফলিকল এবং জেইস গ্রন্থির পুঁজ সৃষ্টিকারী সংক্রমণকেই অঞ্জনি বলে। এই রোগে আক্রান্ত চক্ষু পল্লব লাল হয়ে ফুলে যায়, ব্যথা এবং পরের দিকে সাদা পুঁজবিন্দু দেখা দিতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিদিন দুইবার করে গরম সেক দিলেই অঞ্জনি সেরে যায়।
ক্যালাজিয়ন
এটি হচ্ছে বিমোমিয়ান গ্রন্থির প্রদাহজনিত গ্রানোমালা। দেখতে গন্ডিকাকৃতি এবং সাধারণত অক্ষিপল্লবের প্রান্ত হতে একটু দূরে হয়। ইনফেকশন না হলে ব্যথা হয় না। ছোট আকারের ক্যালাজিয়ন বিনা চিকিৎসায় সেরে যেতে পারে। অনেকক্ষেত্রে আবার বহুদিন অপরিবর্তিত অবস্থায় থাকে। অনেক সময় ক্যালাজিয়ন ফুলে ব্যথা হয় এবং ভেতরের বা ত্বকের দিকে ফেটে যায়। বড় ক্যালাজিয়ন হলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে। এই অস্ত্রোপচার অক্ষিপল্লবের ভেতর দিক কেটে করা হয়। ফলে অক্ষিপল্লবে কোনো কাটার দিক থাকে না।
অ্যানট্রোপিয়ন
এই রোগ হলে অক্ষিপল্লব পাপড়িসহ চোখের ভেতরে ঢুকে থাকে। নেত্রস্বচ্ছে পাপড়ির আঘাত লাগার ফলে চোখ খচখচ করে। মনে হয় চোখে কিছু পড়েছে এবং চোখের প্রদাহ দেখা দেয়। কর্ণিয়ার প্রদাহে, বার্ধক্যে ও বহুদিন চোখে ব্যান্ডেজ বাঁধা থাকলেও এ রোগ হতে পারে। অনেক সময় অক্ষিপল্লবে আঘাতজনিত কারণেও এ রোগ হয়ে থাকে। বার্ধক্যজনিত কারণে অ্যানট্রোপিয়ন সাধারণত নিচের অক্ষিপল্লবেই দেখা যায়। প্রাথমিক অবস্থায় পাপড়িসহ অক্ষিপল্লবেই দেখা যায়। প্রাথমিক অবস্থায় পাপড়িসহ অক্ষিপল্লব চোখের ভেতর থেকে বাইরে রাখতে পারলে এ রোগ ভালো হয়ে যেতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।
একট্রোপিয়ন
এ রোগে অক্ষিপল্লবের বাইরের দিক উল্টে যায়। বার্ধক্য ও অবসন্নজনিত কারণে এবং অরবিকুলারিস মাংসপেশির খিঁচুনির জন্য একট্রোপিয়ন দেখা দিতে পারে। এ রোগ সারাতে প্লাস্টিক সার্জারির দরকার পড়ে।
অক্ষিপল্লবের অন্যান্য রোগ
অনেক সময় অক্ষিপল্লব ঠিকমতো বন্ধ হয় না। এ অবস্থায় নেত্রস্বচ্ছ শুকিয়ে যেতে পারে বা ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। নেত্রস্বচ্ছ যাতে শুকিয়ে না যায়, সেজন্য চোখের সাধারণ মলম ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় সাময়িকভাবে চোখের পাতা সেলাই করে চোখ ঢেকে রাখা হয়। অক্ষিপল্লবে নানারকম টিউমার হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা সঠিক পরামর্শ দিতে পারেন।
অশ্রু ও অশ্রুথলির রোগ
অশ্রু নিষকাশন পথ বন্ধ হলে বা বেশি অশ্রুক্ষরণ হলে চোখ দিয়ে পানি পড়ে। তবে অশ্রু নিষকাশনের পথ বন্ধ হওয়ার কারণেই চোখ দিয়ে বেশি পানি পড়ে, বেশি অশ্রুক্ষরণের জন্য ততোটি নয়। অশ্রুগ্রন্থিতে রোগ হলে চোখের পানি কম হয়। ফলে চোখ শুকিয়ে যেতে পারে। যেমন- রিউম্যাটিজমে এ অবস্থা হয়ে থাকে। ভিটামিন ‘এ’র অভাব, ট্রাকমা, কেরাটোকন টিভাইটিজ সিক্কা ইত্যাদি রোগে অক্ষিশুষকতা দেখা দিতে পারে।
নবজাত শিশুদের অশ্রুথলি প্রদাহ
জন্মের পরে অনেক শিশুরই অশ্রুথলি এবং নাকের সংযোগকারী নালিকার ছিদ্র তৈরি হয় না। এর ফলে চোখ দিয়ে পানি পড়ে এবং অশ্রুথলিতে প্রদাহ হয়। সাধারণত নালিকার ছিদ্র উপত্বকায় সতূপ দ্বারা বন্ধ থাকার ফলেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শে চোখের কোণ এবং অশ্রুথলির ওপর চাপ প্রয়োগ দ্বারাই অধিকাংশ শিশু এ রোগ থেকে নিস্তার পায়। তবে অনেক ক্ষেত্রে এ রোগের চিকিৎসা হিসেবে অশ্রুথলি এবং নাকের সংযোগকারী নালিকার পথ পরিষকার করার প্রয়োজন হয়।
অশ্রুথলি প্রদাহ
অশ্রুথলিতে পুঁজ জমে লাল এবং তীব্র ব্যথা হয়ে প্রাথমিক অশ্রুথলি প্রদাহ হতে পারে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ না করলে ল্যাক্রিমাল অস্থিতে অস্টিওমাইলাইটিস হয়ে অস্থির ক্ষতিসাধনের মাধ্যমে ভেতরের দিকে ফিসটুলা হতে পারে। সঠিক চিকিৎসার অভাবে অক্ষিকোঠরের বা মুখমণ্ডলের সেলুলাইটিস, এমন কি কেভার্নাস সাইনাস থ্রমবোসিস হতে পারে। এক্ষেত্রে গরম সেক, চিকিৎসকের পরামর্শে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক এবং ব্যথা নিবারক ওষুধ ব্যবহারের প্রয়োজন। পুঁজ হলে বা জটিলতা দেখা দিলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী অশ্রুথলিতে প্রদাহ সাধারণত মধ্যবয়সের লোকদের বেশি হয়। রোগীদের মধ্যে স্ত্রীলোকের সংখ্যাই বেশি। এ অবস্থায় রোগীদের চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। মাঝে মাঝে অশ্রুথলির এলাকা ফুলে যেতে বা লাল হতে পারে। বেশিদিন স্থায়ী হওয়ার ফলে নেত্রস্বচ্ছে ক্ষত, নেতৃবত্মে প্রদাহ, বারবার ইনফেকশন হয়ে থাকে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শে অস্ত্রোপচার করাই বাঞ্ছনীয়।
নেত্রস্বচ্ছ প্রদাহ (চোখ ওঠা)
জীবাণুর আক্রমণ, অ্যালার্জিসহ বিভিন্ন কারণে নেত্রবত্মকলার প্রদাহ হতে পারে। এ অবস্থাকেই কনজাংটিভাইটিস বা সাধারণভাবে চোখ ওঠা বলে। বয়স নির্বিশেষে ছোট বড় সকলেই চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে বয়স্কদের বেলায় নেত্রবত্ম প্রদাহ অন্ধত্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায় না। চোখের ময়লা পরিষকার রাখলে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে চোখের ওষুধ ব্যবহার করলে চোখ ওঠা সেরে যায়। তবে রোগ হলে অজ্ঞতা এবং কুসংস্কারের জন্য শামুকের রস, গাছের কোনো তরল পদার্থ চোখে প্রয়োগের ফলে চোখের কোষকলার অনিষ্টসাধন হতে পারে। এমনকি এসব বস্তু চোখে লাগানোর ফলে নেত্রস্বচ্ছে ক্ষতি হয়ে অনেকে অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
নবজাতকের নেত্রবত্ম প্রদাহ
সদ্যপ্রসূত শিশুর চোখ ওঠা এবং শিশুর জন্মগ্রহণের তিন সপ্তাহের মধ্যে ‘চোখ ওঠা’ উভয়েই চক্ষু রোগের লক্ষণ। অধিকাংশ উন্নত দেশে এ সময়ের মধ্যে শিশু চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হলে স্বাস্থ্য বিভাগকে বিজ্ঞপ্তিকরণ আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক। এ থেকেই এ রোগের ভয়াবহতা অনুধাবন করা যায়।
নেত্রবত্ম প্রদাহের প্রধান লক্ষণ হলো
চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া এবং চোখে পিচুটি জমা। আঠালো পিচুটি পড়ার ফলে চোখের পাতা একে অপরের সাথে আটকে থাকতে পারে। এ অবস্থা বিশেষ করে লক্ষণীয় হয় শিশু যখন সকালে ঘুম থেকে ওঠে। পিচুটি না ছাড়িয়ে এ সময় চক্ষুপল্লব খোলা কষ্টসাধ্য হয়। পিচুটিকে অক্ষিপল্লব আটকে থাকার ফলে, চোখের কোষকলার মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই উষ্ণ পরিবেশে রোগজীবাণুর দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। এর ফলে শিশুর নেতৃস্বচ্ছের (কর্ণিয়া) কোষকলা বিনষ্ট হয়ে শিশু অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ছোট শিশুর নেত্রবত্ম প্রদাহের লক্ষণ দেখা দিলে কালবিলম্ব না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। এ রোগ যাতে এক শিশুর চোখ থেকে অন্য কারো চোখে সংক্রমিত না হতে পারে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। শিশুর চোখে হাত বা ওষুধ লাগানোর পর প্রতিবারই হাত সাবান দিয়ে নির্মল পানিতে উত্তমরূপে ধুয়ে ফেলা উচিত। আক্রান্ত শিশুর অক্ষিপল্লব কোনো অবস্থাতেই যাতে পিচুটিতে আটকে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পরিষকার তুলা দিয়ে এবং প্রয়োজনে ফুটিয়ে নেয়া ঠাণ্ডা পানিতে তুলা ভিজিয়ে চোখের পিচুটি পরিষকার করে দিতে হবে।
সাধারণ অ্যালাজিং-নেত্রস্বচ্ছের প্রদাহ
এ রোগ দেহের ভেতরের বা বাইরের কোনো অ্যালার্জির কারণে হয়ে থাকে। বাইরের অ্যালার্জেনের মধ্যে রয়েছে ফুলের পরাগ, ঘরের ধুলো, ওষুধ, গাছ-গাছড়া ইত্যাদি। ভেতরের অ্যালার্জেনের মধ্যে কোনো সংক্রমিত স্থানের জীবাণুর অংশবিশেষ, বিশেষত স্ট্যাফাইলোকক্কাস।
এ অবস্থায় চোখ দিয়ে পানি পড়তে পারে। আলোভীতি, অস্বস্তিবোধ, চোখ চুরকানি, চোখ লাল হওয়া, নেত্রস্বচ্ছের কেমোসিস ইত্যাদি দেখা যায়। চিকিৎসার প্রধান শর্ত হচ্ছে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী বস্তু দূর করতে হবে। এতে না সারলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
ভারনাল কনজাংটিভাইটিস
এ রোগ জীবাণুর জন্য নয় বরং নেত্রবত্মের (কনজাংটিভা) এক প্রকার হাইপার সেনসিটিভ রিঅ্যাকশন বহিস্থ অ্যালার্জেনের কারণে হয়ে থাকে। এ ব্যাধি সাধারণত গ্রীষ্ম এবং বসন্তকালে হয়ে থাকে। কোনো ফুলের পাপড়ির নির্যাস বাতাসে মেশার ফলে ধূলি বা ধূলিময় আবহাওয়া এ রোগের জন্য দায়ী। সাধারণত ছয় থেকে বিশ বছর বয়সের মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। এ ব্যাধির প্রধান উপসর্গ হচ্ছে চোখ চুলকানি, চোখ জ্বালা করা, আলোভীতি, পানি পড়া এবং চোখ লাল হওয়া। ভারনাল কনজাংটিভাইটিস চক্ষুপল্লবের ও চক্ষু গোলকের হয়। চক্ষুপল্লবের ভারনাল কনজাংটিভাইটিসে উপরের চক্ষুপল্লবের নিচে শক্ত উঁচু দানা দেখা যায়। দানাগুলোর রঙ নীলাভ সাদা। নিচের চক্ষুপল্লবেও এ ধরনের দানা দেখা যেতে পারে। চক্ষু গোলকের ভারনাল কনজাংটিভাইটিস লিম্বাসের চতুর্দিকে জিলাটিনের মতো ঘন তন্তু দ্বারা গঠিত। এ তন্তু বড় এবং ঘন হয়ে নেত্রস্বচ্ছের উপরে উঠতে পারে।
মনে রাখতে হবে যে এ রোগ অনেক সময় বেশি, আবার অনেক সময় কম হয়। এ রোগের জন্য কার্যকরী ওষুধ ব্যবহার করলে রোগ সেরে যায় বা বেশ কমে যায়। ওষুধ বন্ধ করলে রোগ আবার বেড়ে যেতে পারে বিশেষ করে চোখ চুলকানো এবং লাল হয়ে যাওয়া থেকে। পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য রোগীদের মধ্যে ওষুধ বেশি ব্যবহার করার প্রবণতা থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে কষ্ট হলেও ওষুধ যত কম ব্যবহার করা যায়, ততই ভালো। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের অতিরিক্ত ওষুধ ব্যবহারে চোখের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
নেত্রস্বচ্ছের সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাধি হচ্ছে নেতৃস্বচ্ছে ক্ষত। এ রোগের সুচিকিৎসা সঠিক সময়ে না হলে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
কর্ণিয়ার ডিস্টফি ও ডিজেনারেশন কেরাটোকোনাস
কেরাটোকোনাস হচ্ছে কর্ণিয়া অবক্ষয়। এর লক্ষণ জীবনের দ্বিতীয় দশকে দেখা যায়। এ রোগ কর্ণিয়ার কেন্দ্রবিন্দু পাতলা হয়ে যায় এবং সামনের দিকে ফুলে ওঠে। এর ফলে নেতৃস্বচ্ছ (কর্ণিয়া) মোচাকৃতি হয়ে যায়, ডেসমেটস পর্দা ফেটে যায় এবং নেতৃস্বচ্ছের অগ্রভাগে লম্বা লম্বা অস্বচ্ছতা দেখা যায়।
ঝাপসা দৃষ্টি হচ্ছে এ রোগের একমাত্র লক্ষণ। রোগী নিচের দিকে তাকালে নিচের চক্ষুপল্লবের ওপর নেতৃস্বচ্ছের দাগ পড়ে। নেত্রস্বচ্ছের ছিদ্র হতে পারে এ রোগ থেকে। এ অবস্থায় চোখে ব্যান্ডেজ বেঁধে রাখা দরকার। এ রোগের ফলে নেত্রস্বচ্ছ পরিবর্তন (কর্ণিয়া ট্রান্সপ্লান্ট) করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। প্রাথমিক অবস্থায় এবং যে কোনো কেরাটোকোনাস রোগকেই প্রথমে কনটাক্ট লেন্স দিয়ে দৃষ্টির উন্নতির জন্য চেষ্টা করা উচিত। এ রোগে নেতৃস্বচ্ছ পরিবর্তনে বেশ ভালো সুফল লাভ করা যায়।
কর্ণিয়ার পুষ্টিদৃষ্টতা রোগসমূহে দুই চোখই একসাথে আক্রান্ত হয়। রোগের লক্ষণ হয়তো এক চোখে বেশি বা এক চোখে কম দেখা দিতে পারে। নেতৃস্বচ্ছ কতটুকু আক্রান্ত হয়েছে এবং দৃষ্টির কতটুকু ক্ষতি হয়েছে এর উপরে চিকিৎসা নির্ভর করে। নেতৃস্বচ্ছের ডিসট্রাফিতে নেতৃস্বচ্ছ বেশি আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টি বেশি ঝাপসা হয়ে গেলে নেতৃস্বচ্ছ পরিবর্তন (কর্ণিয়া ট্রান্সপ্ল্যান্ট) করার প্রয়োজন হয়।
শ্বেত পটলের রোগ। শ্বেত পটলের প্রদাহ দুই প্রকারঃ (ক) এপিস্কেলারাইটিস (খ) স্কেলারাইটিস
এপিস্কেলারাইটিস
শ্বেত পটলের উপরে টিস্যুর প্রদাহকে এপিস্কেলারাইটিস বলে। এতে চোখ ভার ভার লাগে এবং সামান্য ব্যথা হতে পারে। ছোট মটরের দানা সমান উঁচু লাল দানা দেখা যায়। এ ধরনের দানার চারপাশ দিয়ে সামান্য কিছু জায়গা লাল হয়ে যায়। গরম সেক এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ৫-৭ দিনের জন্য চোখে লাগানোর ওষুধ ব্যবহার করলে এ অসুখ সেরে যায়। অনেক সময় দেখা যায় যে, কিছু দিন পরে আবার এ অসুখ দেখা দিয়েছে। তবে এটি কোনো মারাত্মক কিছু নয়।
স্কেলারাইটিস
শ্বেত পটলের প্রদাহকে স্কেলারাইটিস বলে। এ রোগে চোখে অসহ্য ব্যথা হয়। কপাল এবং মাথায় ব্যথা হতে পারে। রোগীর আলোর দিকে তাকাতে অসুবিধা হয়। চোখে অনেক সময় কম দেখে। শ্বেত পটলের প্রদাহে আক্রান্ত অংশ লাল হয়ে যায় এবং ফুলে ওঠে। এ রোগের ফলে অনেক সময় নেতৃস্বচ্ছ আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগের সঠিক চিকিৎসা সময় থাকতেই করা উচিত।
ইউভিয়াল ট্রাস্টের ব্যাধিঃ
ইউভিয়া প্রদাহ
এ রোগে আক্রান্ত হলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। রোগী চোখে এবং চোখের আশপাশে বেশ ব্যথা (বিশেষ করে রাতে) অনুভব করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইউভিয়া প্রদাহের কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। তবে সিফিলিস, যক্ষ্মার জীবাণু, অ্যালার্জি ইত্যাদি কারণে এ রোগ হতে পারে। স্টিলের ব্যাধি, বাতরোগ, গেঁটে বাত, বহুমূত্র, সমবেদী, নেত্রদাহ, সেপটিশিমিয়া ইত্যাদি ইউভিয়া প্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এ রোগ থেকে গ্লুকোমা (চোখের ভেতরের চাপ বৃদ্ধি), জটিল ছানি, থাইসিল, বালবি (চোখ সংকুচিত হয়ে ছোট হয়ে যাওয়া) ইত্যাদি জটিলতার ফলে অন্ধ হয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। কাজেই জটিলতার লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে সঠিক চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে হবে।
এ রোগের বেলায় কালবিলম্ব না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন। যদি ইউভিয়া প্রদাহের কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়, তবে যে কারণে এ রোগ হয়েছে তার চিকিৎসাও করতে হবে।
সর্বনেত্র প্রদাহ
এ রোগে রোগীর চোখের সমস্ত স্তরগুলো সাংঘাতিক পুঁজ সৃষ্টিকারী সংক্রমণ দ্বারা আক্রান্ত হয়। রোগীর চোখের রক্তবর্ণ এবং সমস্ত চোখ ফোলা দেখা যায়। রোগী চোখে ব্যথা অনুভব করে এবং কিছুই দেখতে পারে না।
চোখে ছিদ্রজনিত আঘাত, যে কোনো কারণে অস্ত্রোপচার, নেত্রস্বচ্ছে ছিদ্র, নেত্রস্বচ্ছে ক্ষত বা সংক্রমিত তঞ্চনাপশু (এমবোলাস) সর্বনেত্র প্রদাহ ঘটাতে পারে। প্রথমে চোখে সংক্রমণ হিসেবে শুরু হয়ে পরে গুরুতর আকারে ধারণ করে সর্বনেত্র প্রদাহ হয়। মনে রাখতে হবে যে এটি খুব মারাত্মক ব্যাধি। অতিসত্বর বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। যেহেতু সংক্রমণ অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে রুখতে না পারলে চোখ তুলে ফেলার প্রয়োজন হয়।
অভ্যন্তরীণ নেত্র প্রদাহ
এ রোগে চোখের ভেতরে প্রদাহ হয়। প্রধান সংক্রমণ হয় ইউভিয়াল ট্রাক্টে। সঠিক চিকিৎসা দ্রুতগতিতে করতে না পারলে চোখ রক্ষা করা কঠিন হয়ে যায়। চোখের ভেতরের চাপ কমতে থাকে এবং চোখ আস্তে আস্তে নরম হয়ে ছোট হয়ে যায়। এ অবস্থায় যখন পৌঁছে তখন আর কোনো চিকিৎসাই চোখের দৃষ্টি ফিরিয়ে আনতে পারে না। আকস্মিকভাবে অথবা অস্ত্রোপচারের ফলে রোগজীবাণু চোখের ভেতরে ঢুকে এ রোগের সৃষ্টি করে। শরীরের ভেতরে কোথাও কোনো রোগজীবাণু থাকলে এটি রক্ত দিয়ে চোখের মধ্যে প্রবেশ করেও অভ্যন্তরীণ নেত্র প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
এ রোগে চোখে অল্প অল্প ব্যথা হতে পারে। চোখ দিয়ে পানি পড়ে, চোখে আলোকভীতি হয়, চোখ লাল ও রাগান্বিত দেখায়। এ রোগে চোখের মণিকে সাদা দেখায় এবং চোখের দৃষ্টি নষ্ট হয়ে যায়।
জানা প্রয়োজন যে সর্বনেত্র প্রদাহের মতো এটি একটি মারাত্মক চক্ষু ব্যাধি। সরাসরি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে সংক্রামণ আয়ত্তে আনতে না পারলে চোখ তুলে ফেলতে হয়।
ভিট্রিয়াসের রক্তপাত
এ রোগে আক্রান্ত হলে রোগী হঠাৎ করে চোখে কিছুই দেখতে পারে না। এভাবে দৃষ্টি হারানোর কারণ হচ্ছে ভিট্রিয়াসে রক্তের উপস্থিতি। অক্ষিপটের ছিদ্র, চক্ষু গোলকে মারাত্মক আঘাত লাগলে, শরীরে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে, বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকলে। সাধারণত রক্তপাত খুব সামান্য হলে ভিট্রিয়াস থেকে রক্ত আপনা-আপনিই শোষিত হয়ে যায়। তবে বেশি রক্তপাত সহজে শোষিত হয় না। রক্ত অনেক দিন ভিট্রিয়াসে থাকলে পর্দার আকারে অক্ষিপটদাহ প্রবৃদ্ধি গঠন করতে পারে। আর এমন হলে রোগী চোখে কিছুই দেখতে পায় না।
রক্তপাতের কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। বিশেষ সূক্ষ্ম এবং উন্নতমানের যন্ত্রপাতির সাহায্যে বিশেষ ধরনের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রক্তাক্ত ভিট্রিয়াস পরিবর্তন করে পরিষকার স্যালাইন দিলে অনেক ক্ষেত্রেই দৃষ্টি ফেরানো সম্ভব। এ ধরনের অস্ত্রোপচার সব হাসপাতালে সম্ভব নয়।
প্রফেসর সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
নাম নাই
আমার বয়স ২৫। চশমা ব্যাবহার করছি প্রায় ১০বছর। আগে প্রতি বছর আমার পায়ার পরিবরতন হত। কিন্তু গত ৩ বছর যাবত আমার পায়ার পরিবরতন হচ্ছে না।(ডাক্তার দেখিয়েছি) এখন আমি কিভাবে বুঝব যে কখন আমার পায়ার পরিবরতন হচ্ছে বা ডক্তার দেখনো উচিত।
Bangla Health
প্রতিবছর একবার করে চেকআপ করে নেবেন।
Sohel Ahmed
ami sohel ami Savar theke lekhci and ami akjon Student . amar eye normal r tulonay onek boro . akhon kibabe amar eye other person r moto normal and chuto hobe ? please reply
Bangla Health
বড় চোখই তো সবাই পছন্দ করে। আপনার কি বড় হওয়ার জন্য বাইরে বেরিয়ে আসে?
Sohel Ahmed
ji . and amar eye a majemaje anjuni othe . so akhon amar ki kora odorkar . jodi kicu solution diten
Bangla Health
অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিদিন দুইবার করে গরম সেক দিলেই অঞ্জনি সেরে যায়।
sohel
ji . and amar eye a maje maje anjuni othe akhon amar ki kora proyojon . please reply
Bangla Health
পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত।
রনি
আমি দৈনিক ৬-৭ ঘন্টা কম্পিউটার চালায়।এতে কি আমার চুখের কোন ক্ষতি হবে । কি ক্ষতি হতে পারে এবং আমার কি করা উচিত,দয়া করে উত্তর দিবেন ।
Bangla Health
মনিটর থেকে একটু দূরে বসবেন। টানা চেয়ে না থেকে মাঝে মাঝে অন্যদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকবেন। বছরে একবার চোখের ডাক্তার দেখিয়ে নেবেন।