সমস্যাঃ আমার বাবার বয়স ৫১ বছর। দুই বছর ধরে গলার ক্যান্সারে ভুগছেন। গত বছর ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার পর তাঁকে একজন অনকোলজি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে প্রথমে তিন কিস্তি (১৫-২০ দিন পরপর তিনটি করে) কেমোথেরাপি এবং পরে এক মাস সপ্তাহে টানা পাঁচ দিন রেডিওথেরাপি ও এক দিন কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর অবস্থার উন্নতি না হয়ে দিন দিন অবনতি হচ্ছে। দুই মাস আগে তাঁর রেডিওথেরাপি শেষ হয়েছে এবং বর্তমানে তাঁর চিকিৎসা বন্ধ আছে। এখন আমাদের করণীয় কী? বাংলাদেশে কি গলার ক্যান্সারের চিকিৎসা করা যায়?
মো. আলমগীর খন্দকার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
পরামর্শঃ শ্বাসনালি ও খাদ্যনালির উপরিভাগে অবস্থিত মুখগহ্বর, ফ্যারিংস, ইসোফেগাস, ল্যারিংস, নাক ও সাইনাসের ক্যান্সারকে একসঙ্গে থ্রোট বা গলার ক্যান্সার হিসেবে ধরা হয়।
আপনার বাবার ক্যান্সারের সঠিক স্থান ও হিস্টোপ্যাথলজি টাইপ জানলে পরামর্শ দিতে সুবিধা হতো।
টিউমারের আকার, লিমফ নোডে আক্রান্ত হওয়া এবং রোগ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ার ওপর নির্ভর করে ক্যান্সারকে মূলত চারটি স্তরে ভাগ করা যায়। প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরকে প্রাথমিক এবং তৃতীয় ও চতুর্থ স্তরকে অ্যাডভান্সড স্টেজ হিসেবে গণ্য করা হয়।
সাধারণত গলার চিকিৎসায় ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু সার্জারি অথবা রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। অ্যাডভান্সড স্টেজে যৌথভাবে সার্জারি ও রেডিওথেরাপি প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে কেমোথেরাপিও ব্যবহার করা যেতে পারে।
এসব চিকিৎসায় যে রোগগুলো ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেগুলোতে কিউরেটি চিকিৎসা দেওয়া হয়। যেখানে রোগ একেবারে ভালো করা সম্ভব হবে না বলে মনে হয়, সেখানে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, খাদ্য গিলতে কষ্ট ইত্যাদি উপসর্গ কমানোর জন্য প্যালিএটিভ চিকিৎসা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে অনেক ক্যান্সার সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত করে চিকিৎসা দিলে ফলাফল সন্তোষজনক হতে পারে। রোগ দেরিতে ধরা পড়লে বা ছড়িয়ে গেলে ক্যান্সার ভালো করা কঠিন হয়ে যায়।
এসব চিকিৎসার ফলাফলে ভিন্নতা দেখা দিলেও হতাশ না হয়ে সব ক্যান্সারের চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
আপনার বাবার চিকিৎসার জন্য আবার নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
——————–
পরামর্শ দিয়েছেন
অধ্যাপক ডা. আবুল হাসনাত জোয়ারদার
নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
প্রথম আলো, ৯ এপ্রিল ২০০৮
Leave a Reply