খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা সদরে গতকাল শুক্রবার নিবন্ধন ও চিকিৎসকহীন ক্লিনিকে সন্তান প্রসবের জন্য অস্ত্রোপচারকালে মা ও তাঁর গর্ভের শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা সদরের নার্গিস সার্জিক্যাল ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির পরিবার, এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের রেজাউল সরদারের স্ত্রী নূরজাহান বেগমকে (২০) সন্তান প্রসবের জন্য বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। এ সময় ক্লিনিকের মালিক নার্গিস পারভীন, তাঁর ভাই ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক মহসীন খান ও সেবিকা আনোয়ারা খাতুন নূরজাহানের সন্তান প্রসব করানোর চেষ্টা চালান। পরে নূরজাহানের অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে ভোর পাঁচটার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ইউনুস আলীকে আনা হয়। ইউনুস ইনজেকশন দিয়ে ওই নারীর শরীর অবশ করে অস্ত্রোপচার শুরু করেন। এর কিছু সময়ের মধ্যেই তাঁর খিঁচুনি শুরু হয় এবং মৃত্যু ঘটে। ওই সময় তড়িঘড়ি করে মরদেহ ক্লিনিক থেকে বের করে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ নার্গিস, মহসীন ও আনোয়ারাকে আটক করে।
নিহত নূরজাহানের বড় বোন রোজিনা বেগম বলেন, ‘রাতে নূরজাহানকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার সময় নার্গিস তাঁদের বলেন, এত রাতে হাসপাতালে চিকিৎসক থাকে না। তোমরা আমাদের ক্লিনিকে ভর্তি করো। পরে সাড়ে ছয় হাজার টাকা চুক্তিতে তাঁকে ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ক্লিনিকের লোকেরা স্যালাইন ও অন্যান্য ওষুধ দিয়ে নূরহাজানের প্রসব করানোর চেষ্টা করেন। ভোর রাতে হাসপাতালের চিকিৎসক এনে অস্ত্রোপচারকালে নূরজাহান মারা যায়।’
ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক মহসীন খান বলেন, ‘রাত দুইটার দিকে গুরুতর অবস্থায় নূরহাজানকে ক্লিনিকে আনা হয়। এ সময় চিকিৎসক ইউনুসকে ডেকে আনি। তিনি চিকিৎসা শুরুর কিছু সময় পর ওই নারীর অবস্থা খারাপ হলে তাঁকে অন্য জায়গায় নিতে বলি।’ তবে তিনি ক্লিনিকের নিবন্ধন ও নিজস্ব চিকিৎসক না থাকার কথা স্বীকার করেন।
চিকিৎসক ইউনুস আলী বলেন, ‘ওই নারী ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার পর আমি গিয়ে অস্ত্রোপচারের জন্য অবশ করতে তাঁকে ইনজেকশন দিই। এর কিছু সময়ের মধ্যেই তাঁর খিঁচুনি ওঠে। এবং অল্প সময়ের মধ্যে রোগী মারা যায়। রোগী মারা যাওয়ার কারণে তার গর্ভের সন্তানও মারা গেছে।’
ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মসিউর রহমান বলেন, নিহতের পরিবার ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করতে রাজি হয়নি। এ কারণে আটক ওই তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, ক্লিনিকের মালিক পক্ষকে রক্ষা করতে একটি গোষ্ঠী থানায় গিয়ে তদবির করে ও আটকদের ছাড়িয়ে আনে। এ ছাড়া ওই পক্ষ নিহতের পরিবারকে বোঝায়, মামলা করলে তাদের ঝামেলায় পড়তে হবে। এ কারণে নিহতের পরিবার থানায় মামলা করেনি।
খুলনার সিভিল সার্জন গোলাম মোর্তুজা শিকদার বলেন, ‘ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ শুনে গত ২ জুন সেখানে যাই। পরে তাদের কোনো নিজস্ব চিকিৎসক বা সেবিকা না দেখে ক্লিনিক কেন বন্ধ করা হবে না তা জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যুর ঘটনা শুনেছি। ক্লিনিকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০৯, ২০১২
Leave a Reply