যাঁরা ধূমপান করছেন, ছেড়ে দিন এ বদভ্যাস। ধূমপান ছাড়তে ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট
নিজের অভিজ্ঞতা, নিজের ভেতর থেকে আসা অনুভূতি মিশিয়ে উচ্চারিত বাক্যগুলো প্রেরণার উৎস তো হতেই পারে। যখন সেটা হয় একদা প্রিয় কোনো অভ্যাস বর্জন, তা বেশ সত্য বটে। মানুষের প্রাণ নিঃশব্দে হরণ করার মতো সবচেয়ে ‘শান্তিময়’ অস্ত্র যে ধূমপান তা তো স্বীকৃত এখন সর্বত্র। ধূমপান করতেন একসময়, ছেড়েছেন এমন অনেক মানুষের অভিজ্ঞতা ও মূল্যবান সংবোধ ভাগাভাগি করার মতো বিষয় বটে।
সত্যি বলতে, নিজেও ধূমপান করতাম একসময়। সিগারেটের ধোঁয়ার বলয় বানাতে ভালো লাগত, ধূম্রজাল রহস্যের সৃষ্টি করত মনে। মনে হতো ধূমপান এক বড় আনন্দ, মগজ খোলতাই করার মূল চালিকাশক্তি। বুদ্ধির গোড়ায় সঞ্জীবনী শক্তি যেন। কিন্তু একদিন দুম করে ছেড়েও দিলাম। কী হলো? ভেবেছিলাম ধূমপান প্রত্যাহারের পর বড় কষ্ট হবে। কিন্তু কী হলো? কিছুই হলো না। ধূমপান থেকে মুক্তি মিলল অক্লেশে। নিরানন্দ হয়নি মন মোটেও। বুদ্ধির গোড়ায় শক্তিদায়িনী ধোঁয়ার প্রয়োজন হলো না। বুদ্ধি তো খুলে আছে, খোলতাইও হচ্ছে ধূম্রবিহীন, প্রচেষ্টা সফল হচ্ছে ধূম্রবিহীন। নিজে অনেক সুস্থ, সজীব, সুবাসিতও (!) বটে।
সিগারেটের গন্ধ শরীরে নেই, শ্বাস-প্রশ্বাসও বেশ আনন্দময়, সাবলীল। কী আনন্দ! যাঁরা ধূমপান করছেন তাঁদের বলি, ছেড়ে দিন এ বদভ্যাস, দুম করে ছেড়ে দিন; মনের ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট। নিকোটিনের বিষ থেকে মুক্তি নিন ইচ্ছাশক্তি দিয়ে।
ঘটুক নিজের মুক্তি আলোয় আলোয়।
জেনেশুনে বিষপান কেন? প্রাণের আশা ছেড়ে প্রাণ সঁপবেন কেন সিগারেট-বিড়ির কাছে? আত্মমর্যাদা এভাবে ক্ষুণ্ন করা কেন? ধূমপান যে ক্যানসার, হূদেরাগ ও আরও জটিল রোগের মূল কারণ, তা জেনেও কেন এ বিষপান?
এই মন্দ আসক্তির বাঁধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে অবাধ ও বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস গ্রহণ কী যে আনন্দ!
সিগারেটের পেছনে এই যে অর্থ ব্যয়, তা অন্য কোনো ভালো কাজে বিনিয়োগে কী যে আনন্দ, করে দেখুন। যাঁরা ধূমপান করছেন, তাঁদের জন্য এক আনন্দময় মুক্তি অপেক্ষা করছে; সজীব, সজীব হয়ে বেঁচে থাকার আনন্দ অপেক্ষা করছে—ত্বরা করে অগ্রসর হোন, সবাই, ছাড়ুন ধূমপান। নতুন বছরের জন্য অপেক্ষা কেন? কেন নয় আজই?
দিনে দুই প্যাকেট সিগারেট পান, খুকখুক কাশি, বুকে কষ্ট, কী যে কষ্ট! এ থেকে মুক্তি মিলতে পারে সামান্য ইচ্ছায়!
যাঁরা ছেড়েছেন, তাঁরা মনে করেন আজ আমরা অধূমপায়ী; ধূমপান এককালে করেছি তা মনে করতে চাই না। হয়তো কষ্ট হয়েছিল কারও কারও, অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে হয়েছিল—শয্যার এক পাশে নুয়ে শুয়ে থাকা শরীর, ঝুলছে ঠোঁটের কোণে জ্বলন্ত সিগারেট, অল্প অল্প অগভীর শ্বাস, আর বেজায় কাশি—কেন মনে করা এই নরকের অভিজ্ঞতা?
ধূমপায়ী সেই লোক মানসিক চাপে পড়লেই সিগারেট ধরাতেন, সিঁড়ি বেয়ে কয়েক পা উঠলেই হাঁপরের মতো ফুসফুস চিৎকার করে উঠত, এখন ধূমপান ছেড়ে দিয়ে নতুন জীবন তাঁর, সম্পূর্ণ নতুন জীবন, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি এখন একজন ক্রীড়াবিদ; দৌড়ান সপ্তাহে পাঁচ দিন, বেঞ্চ প্রেস করেন ১১৫ পাউন্ড। তিনি বলেন, আর কোনো দিন সিগারেট-বিড়ি ছোঁবেন না।
বছর খানেক আগে আরেক ভদ্রলোক ভেবেছিলেন তাঁর নিউমোনিয়া, পরে দেখা গেল ব্রংকাইটিস আর ইমফাইসেমার মতো কষ্টকর শ্বাসরোগ। নিজে থেকে শ্বাসক্রিয়া চালানোর ক্ষমতা ক্রমেই খর্ব হয়ে যাওয়া। রাতে ঘুমুতে ভয় হতো তাঁর, প্রতিটি শ্বাসের জন্য সে কী কষ্টকর প্রয়াস; কাশি, বুকে শোঁ শোঁ শব্দ, নিজেকে নিজে ‘মাইনাস’ করার প্রবণতা! সিগারেট ছেড়ে তা থেকে মুক্তি মিলেছে তাঁর।
একটা কথা বলি: যাঁরা ধূমপান ছেড়ে দেবেন তাঁরা শৈশবে—ধূমপানমুক্ত শৈশবে—সজীব টাটকা ফুসফুস দিয়ে আসা-যাওয়া শ্বাস যেভাবে উপভোগ করতেন, সিগারেট ছাড়ার পর সে আনন্দ ফিরে পাবেন। শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়ার সংকল্প করেছেন: ভাবুন নিজের শৈশবের সতেজ ফুসফুসের স্মৃতি, অক্লান্ত প্রাণশক্তি, কী অবলীলায় শ্বাস দেওয়া-নেওয়ার অবিস্মরণীয় মুহূর্তগুলো ভাসবে স্মৃতিতে।
জেনেশুনে বিষপান আর নয়।
ছাড়ুন আজই। প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তি। দুম করে ছেড়ে দিন। আমিও একদিন এভাবেই ছেড়ে দিয়েছিলাম। ভালো আছি। সজীব-সবুজ তারুণ্য সন্ধান করছেন? ছেড়ে দিন ধূমপান। সংকল্প করুন, কাজে দেখান।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ৩০, ২০১২
J+L
Dear sir,lekhata pore onek valo laglo.amar age 31.ami1995 shaal theke smoke kori average 10-15ta.jodeo smoke charar jonno ai porjonto onek chesta korechi kintu parchina.amar jibon’a jokhon valobasa elo thokon ami ektana 2 years smoke koriny.kintu sei valolagar manushti jokhon amar jibon theke harea gelo thokon ami abar’o smoke’er proti aashokto hoye pori! Er 2 years por abar smoke chere dei, kintu 2 month porjonto thakar por abaro ashokto hoye pori.
Ami shotti smoke charte chai.kintu keno pari na?
Ki korle ami permanently smoke charte parbo.ans please.thank you.
Bangla Health
যে কোন নেশা ছাড়তে মনের ইচ্ছাই যথেষ্ট। এর সাথে পাশে-পাশের মানুষদেরও সাহায্য দরকার যাতে তারা আপনাকে উৎসাহিত করে। অনেক সময় কিছু বন্ধুবান্ধব আছে যারা জোর করে হাতে এসব ধরিয়ে দেয়, বলে যে একটুতে কিছু হবে- এধরনের বন্ধুবান্ধব থেকে দূরে থাকবেন। নিয়মিত ব্যায়াম করেন, ভালো কোন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। আর ঔষধের দোকানে একধরনের লজেন্স পাওয়া যায়, যাতে হালকা পরিমান নিকোটিন থাকে। ধূমপান করার ইচ্ছে হলে এ ধরনের লজেন্স মুখে দিলে কাজে দেয়।