গত মাসে বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত হলো। এ বছর বিশ্ব কিডনি দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল বেশ চমকপ্রদ ‘বিস্ময়কর কিডনি। আশার কথা হলো, অসংখ্য মানুষ ক্রনিক কিডনি রোগে ভুগলেও একটু সজাগ-সচেতন থাকলে একে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞ মহলে ধারণা, এ রকম যে ক্রনিক কিডনি রোগ (সিকেডি) আছে এমন রোগীর ৯০ শতাংশকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না। আর সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১০ জনে একজনের রয়েছে ক্রনিক কিডনি রোগ। কয়েক দিন আগে এমন মন্তব্য করেছেন একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ ও ট্রান্সপ্লান্ট চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ আসিম। ক্রনিক কিডনি রোগ হলে কিডনি আস্তে আস্তে এর কার্যকারিতা হারায়, শরীরের বড় ক্ষতি হয়। তবে ঘন কালো মেঘের চারধারেও আছে রুপালি আলোর ইশারা-আর তা হলো, কিডনির রোগ প্রতিরোধ করা যায়। এর চিকিৎসাও করা যায়।
ডা. আসিম বললেন, প্রতিদিনই দুটো কিডনি ২০০ লিটার রক্ত পরিস্মাত করছে ও পরিষ্কার করছে। এ ছাড়া কিডনি দুটো দেহে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, রক্তকণিকা উৎপাদনে, রক্তের অ্লতা রক্ষায়, পানির সমতা রক্ষায় ও হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। কিডনি যে আশ্চর্য যন্ত্র, এতে সন্দেহ করার কী-ই বা আছে।
কম খরুচে দুটো সহজ টেস্ট করে ক্রনিক কিডনি রোগ শনাক্ত করা সম্ভব।
মূত্রে প্রোটিন মান ও রক্তে ক্রিয়েটিনিন মান নির্ণয়ঃ এ দুটি টেস্ট যাদের কিডনি রোগের ঝুঁকি আছে তারা করে নিলে শনাক্ত করা সহজ হয়।
ক্রনিক কিডনি রোগ আগাম চিহ্নিত করলে এবং চিকিৎসা করলে রোগীদের প্রান্তিক পর্যায়ে কিডনি নিষ্ত্র্নিয় হওয়ার পথে অগ্রসর হতে দেয় না। এ ছাড়া এ জন্য হৃদরোগ ও রক্তবাহ রোগের ঘটনাও কম হবে। বিশ্বজুড়ে অকালমৃত্যুর কারণ হিসেবে এসব কারণ তালিকার ওপর দিকে।
ডা. আসিমের পরামর্শ হলো, যাদের পরিবারে কিডনি রোগের ইতিহাস রয়েছে, যদি ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকে বা বারবার মূত্রনালিতে সংক্রমণ হয়, কিডনিতে পাথুরি থাকে, কিডনিতে প্রদাহ থাকে, তাদের অবশ্যই দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে।
কিছু উপসর্গ, যেমন-মূত্রে রক্তের উপস্থিতি, ফেনা ফেনা মূত্র, প্রস্রাব ঘোলা হওয়া, মূত্র নিঃসরণের সময় ব্যথা হওয়া, মূত্রে পাথর বের হওয়া, রাতে বারবার প্রস্রাব হওয়া, গোড়ালি ফোলা, পিঠে বা নিচ কোমরে ব্যথা, মুখ ফোলা-এগুলো কিডনি রোগের ইঙ্গিত দেয়।
কিডনি আমাদের কত কাজে আসে, একটু সহানুভূতিশীল আমরা কি হতে পারি না কিডনির প্রতি? শরীর সঠিক, সুস্থ রেখে, ওজন ঠিক রেখে, ধূমপান না করে, চিনির শরবত ও কোমল পানীয়ের বদলে যথেষ্ট পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করে, রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রেখে, রক্তের গ্লুকোজ মান ঠিক রেখে আমরা কিডনি দুটির প্রতি সুবিচার করতে পারি। আর কোনো প্রিয়জনের যদি কিডনি বিকল হয় আর সে জন্য যদি তা প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়, তখন নির্ভয়ে, আনন্দের সঙ্গে স্বস্তিতে কিডনি দান করার কাজটি যেন করা যায়-এ নিয়ে একটি আহ্বান করছেন প্রথিতযশা, মধ্যপ্রাচ্যে চিকিৎসাপেশায় নিয়োজিত এই ট্রান্সপ্লাট সার্জন।
আসুন, আমরা আরও সচেতন হই, অন্যকেও সচেতন করি-যত্ন নিই আমাদের কিডনি দুটোর।
——————
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা
প্রথম আলো, ৯ এপ্রিল ২০০৮
Leave a Reply