উষ্ণ গ্রীষ্মে আমাদের অনেক উৎসব থাকে, খাওয়া হয় অনেক মধুফল, বেড়ানো হয়, বাইরে যাওয়া হয়। গ্রীষ্মের দাবদাহে একটি কথা মনে রাখা ভালো, এ সময় বাইরে রোদে সময় কাটিয়ে, খেলায় ও ঘোরাঘুরিতে অংশগ্রহণ করে উত্তাপ ও নিরুদনের কাছ থেকে নিজেকে রক্ষা করা চাই। শীতের মাসে হার্ট অ্যাটাক বেশি হয় অনেকে বলেন, তবে গ্রীষ্মের সময় পানিশূন্যতা থেকে নিজেকে রক্ষা করলে হার্ট অ্যাটাক থেকে অনেক রক্ষা পাওয়া যায়, ঝুঁকিও কমে। সৌভাগ্যবশত উত্তাপ, উষ্ণতায়, হূদযন্ত্রে ও রক্তনালি নিজেদের মানিয়ে নেয়। ঘামতে ঘামতে নিরুদন হলেও হূদ্যন্ত্রহার যথাযথভাবেই বাড়ে এবং রক্তনালিও স্ফীত হয়, এভাবে শরীর হয় শীতল। তবু ঠিক প্রতিবিধান না নিলে গ্রীষ্মে পানিশূন্য হওয়া বিচিত্র নয়। এতে হার্টের ওপর পড়ে বাড়তি চাপ। হূদ্যন্ত্র অতিদ্রুত স্পন্দিত হতে থাকে, আরও প্রবলভাবে ধুকপুক করতে থাকে। কারণ, তখন দেহের রক্তের মোট আয়তন হ্রাস পাওয়ায়, রক্তনালি স্ফীত হওয়ায় রক্তচাপ কমে যায়; আর একে রোধ করার জন্যই হার্টের স্পন্দন বেড়ে যায়। তাই গ্রীষ্মের সময় হূদ্যন্ত্রের ওপর বাড়তি চাপ এড়াতে আছে পরামর্শ—
সজল হয়ে থাকুন, ইলেকট্রোলাইটও যেন শরীরে থাকে ঠিকঠাক
আমরা যখন ঘামি, তখন কেবল পানি হারাই তা-ই নয়; আমরা হারাই ইলেকট্রোলাইট। যেমন, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম। এই দুটো খনিজ শরীরের কাজকর্ম বজায় রাখার জন্য বড় প্রয়োজনীয়; হূৎছন্দ ঠিক রাখার জন্য বেশি প্রয়োজন এদের। শরীরে পটাশিয়াম মানের বেশি চড়াই-উতরাই হলে অস্বাভাবিক শ্লথ কিংবা শত হূৎছন্দ দুটোরই ঝুঁকি থাকে, হার্টের জন্য যা বড়ই বিপদের। তাই ইলেকট্রোলাইট পরিপূরণ, নিরুদন মোকাবিলার বড় একটি দিক।
হূদেরাগের ইতিহাস থাকলে বা কনজেসটিভ হার্ট ফেলিওর থাকলে বা এর ইতিহাস থাকলে তখন নিরুদনের কারণে বা পানির ওজন অতি বেশি বা অতি দ্রুত হারালে বা অর্জন করলে এর প্রভাব পড়ার জন্য হূৎছন্দ ও হূৎঘাতে ব্যতিক্রম হয় এবং শরীর এ ক্ষেত্রে ভীষণ প্রতিক্রিয়া করে।
উপসর্গের নিবিড় তদারকি চাই
বমি ভাব, মাথা ঝিমঝিম, শীতল ত্বক—এসব হলে বুঝতে হবে শরীরচর্চা বা ব্যায়াম বেশি হচ্ছে।
ওজন পরিবর্তন অনুসরণ করতে হবে
উষ্ণতম আবহাওয়ায় শরীরের ওজন পরিবর্তন খেয়াল করতে হবে। দিনের পর দিন দুই পাউন্ড বা এর বেশি ওজন হারালে বা অর্জন করলে এ যে পানির ওজনের কারণে, ব্যায়াম এত সহজে তা কমাতে পারে না। ডাক্তারের পরামর্শ নিলে ভালো গ্রীষ্মে ব্যায়ামের ব্যাপারে।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
শুভাগত চৌধুরী পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১৬, ২০১২
Leave a Reply