কিছুদিন আগে নাদের মাঝির নাতি মাথাব্যথা ও জ্বর হওয়ার পরের দিনই অজ্ঞান হয়ে যায়, বারবার বমি, খিঁচুনি আর হাত-পা শক্ত হয়ে গিয়েছিল। নাদের ছুটে আসে ‘গ্রাম্য ডাক্তার’ বাবু ভাইয়ের কাছে। ‘হেরে নিয়া মোরা এহন কী করি কইয়েনত দেহি?’ এ প্রশ্নে বড়ই বিচলিত বাবু মাথা চুলকে বলে, ‘তোরা পোলাডারে নিয়া শহরে মেডিকেলে বড় ডাক্তার দেহা। শুনছি ঢাকাত ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্স বইল্যা এক বিরাট সুন্দর হাসপাতাল হইছে, সেখানে যা।’ চির উপকারী বাবু এদের সঙ্গে যায়। ‘জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে বাচ্চাটার। সঙ্গে খিঁচুনি, টিটেনাস নাকি? না, টিটেনাস না, খালেকের বড় মাইয়াডা মরল টিটেনাসে। ডাক্তার কইছে, টিটেনাসে এত জ্বর থাকে না।’ রোগীর অবস্থা দেখে ইমার্জেন্সি চিকিৎসক শুধু বললেন, দ্রুত করো। ট্রলিওয়ালা মালেক এত দ্রুত ট্রলি চালিয়ে এল, বাবুদের তাকে ধরতেই কষ্ট হলো, তখনই সিনিয়র চিকিৎসক এসে সব দেখেশুনে বললেন, ‘দীর্ঘকালের কান পাকা থেকেই সম্ভবত মস্তিষ্কে পুঁজ জমে গেছে, এমতাবস্থায় সিটিস্ক্যান করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ সিটিস্ক্যান করতে দুই হাজার টাকা লাগবে। পাশের গ্রামের খলিল এই হাসপাতালে ওয়ার্ডমাস্টারের কাজ করে। সে এসে বলল, ‘চল, তোগরে ডাইরেক্টর ছারের কাছে নিয়া যাই, তিনি বড়ই ভালা মানুষ।’ সব দেখেশুনে সহূদয় মিষ্টভাষী ডাইরেক্টর সাহেব বুঝিয়ে বললেন, ‘সিটিস্ক্যান ফ্রি করা যায় না, তবে আমি আপনার যাবতীয় অন্য পরীক্ষা ফ্রি করিয়ে দিলাম।’ একজন তরুণ চিকিৎসক রোগীর সঙ্গে গেলেন, স্ক্যান রুম থেকে চিকিৎসক তখনই ফোনে অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হতে বললেন। বয়সে তরুণ ডাক্তার সাহেব, সবাই তাকে CA সাহেব বলে। দেখেশুনে তিনি বললেন, ‘এটি ব্রেইন এবসেস অর্থাৎ মাথার ভেতরে ফোড়া। অবশ্যই অপারেশন করতে হবে।’ এ কথা শুনে বাচ্চার মা, দাদি একই সঙ্গে কান্না জুড়ে দিলেন। চিকিৎসক বললেন, আপনারা সন্ধানী থেকে এক ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করুন। অপারেশন শেষে সারা রাত রোগী ‘পোস্ট অপারেটিভ’ রুমে ছিল। পরের দিন, রোগীর অবস্থা ভালোর দিকে। বাচ্চাটিকে ওয়ার্ডের বেডে দিয়ে দিল। তার অবস্থা আগের তুলনায় ভালো। মুখে খাচ্ছে, কথা বলছে, জ্বরও কম, কিন্তু উঠে বসতে গেলে মাথা ঘুরায়। চিকিৎসক দেখেশুনে বললেন, ‘ভালো হয়ে যাবে, তবে বেশ কিছুদিন ইনজেকশন দিতে হবে।’ সাত দিন পর সেলাই কেটে চিকিৎসকেরা ছুটি দিয়ে দিলেন। ছুটির আগের দিন বাবু পায়ে পায়ে বড় চিকিৎসকের রুমে গিয়ে দাঁড়াল। ‘ছার, আমি একজন গ্রাম ডাক্তার, এই রোগ সম্পর্কে যদি আমায় একটু বলেন।’
হাসিমুখে একের পর এক তিনি বোঝাতে শুরু করলেন, কেন, কীভাবে এই রোগ হয়? উন্নয়নশীল দেশে এই সমস্যা বাচ্চাদের ভেতরে বেশি দেখা যায়। যদিও চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতির কারণে গত ২০ বছরে এই রোগের সংক্রমণ অনেকটা কমে এসেছে। জন্মগত হার্টের রোগ, যেমন ফ্যালোট ট্রেটালজি, ফুসফুসে ইনফেকশন, কান পাকা, সাইনুসাইটিস, দাঁতের ক্ষয়রোগের কারণে এবসেস হতে পারে। আবার মাথায় আঘাত লেগে হাড় ভেঙে ধুলা-ময়লা ভেতরে ঢুকে পুঁজ জমে হতে পারে। সাম্প্র্রতিককালে এইডস বা ক্যানসারের জন্য কেমোথেরাপি নিচ্ছেন এমন অনেকের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গিয়ে ব্রেইন এবসেস তৈরি হচ্ছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে কোনো সমস্যাই খুঁজে পাওয়া যায় না।
কী কী লক্ষণ থাকে?
সার্বক্ষণিক মাথাব্যথা, প্রথমে মাথায় চাপ চাপ অল্প ব্যথা থাকলেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, সঙ্গে জ্বর, বমি, শরীরের একদিকে দুর্বলতা ও খিঁচুনি থাকে। কী কী পরীক্ষা করে এই রোগ ধরা যায়?
ফোড়ার আকৃতি, অবস্থান, চাপের পরিমাণ—সবকিছুই সিটিস্ক্যান থেকে জানা যায়। এমনকি কত দিন ধরে পুঁজ জমে আছে, এটাও বোঝা যায়। এ ক্ষেত্রে একটি কন্ট্রাস্ট নামক ইনজেকশন দিলে ছবি আরও পরিষ্কার হয়। তবে কোনো কোনো সময় টিউমার নাকি ফোড়া—এ ব্যাপারে স্ক্যান থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া না গেলে এমআরআই বা এমআরএস পরীক্ষা করে সঠিক সিদ্ধান্তে আসা যায়।
চিকিৎসার জন্য অপারেশনই প্রধান উপায়। দুভাবে অপারেশন করা যেতে পারে। প্রথমত, ছোট ছিদ্র করে ব্রেইন ক্যানুলা নামক মোটা সুঁইয়ের মতো দেখতে যন্ত্র দিয়ে পুঁজ টেনে বের করা যায়। এখানে আধুনিক সময়ে স্টেরিওটেক্সি যন্ত্র ব্যবহারে সুফল পাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, পুরোনো ফোড়া অথবা বারবার পুঁজ জমে গেলে ক্রেনিওটোমি অপারেশন করা যায়। এ ক্ষেত্রে ফোড়ার ওপরে চামড়া উল্টিয়ে রেখে, হাড় সরিয়ে সম্পূূর্ণ পুঁজ ও তার দেয়াল বের করে দিলে আর জমার আশঙ্কা কমে যায়। অপারেশন শেষে হাড় ও চামড়া যথাস্থানে পুনরায় স্থাপন করা হয়।
একই সঙ্গে তার মূল রোগ, যেমন— কান পাকা, জন্মগত হার্টের রোগ, সাইনুসাইটিস বা ক্ষয়ে যাওয়া দাঁতের চিকিৎসাও করতে হবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহারের সময়কাল, প্রথম ছয় সপ্তাহ ইনজেকশন, পরে ছয় সপ্তাহ মুখে ওষুধ চালাতে হবে। অনেকেই চিকিৎসকের নির্দেশ উপেক্ষা করে ওষুধ বন্ধ করে দেন, যার কারণে আবারও ফোড়া হয় এবং ওষুধ আর ঠিকমতো কাজ করে না। খিঁচুনিরোধী ওষুধ এক থেকে দুই বছর ধরে চলতে থাকে। আচ্ছা স্যার, অপারেশন ছাড়া কোনো চিকিৎসা নেই? যদি খুব ছোট (২.৫ সেমির) কম ফোড়া প্রথমদিকে হলে ওষুধে চেষ্টা করা যেতে পারে, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপারেশন প্রয়োজন হয়।
কীভাবে এই রোগ
প্রতিরোধ করা সম্ভব?
দীপ্ত অথচ আবেগময় কণ্ঠে চিকিৎসক বলতে থাকেন, সঠিক সময়ে জন্মগত হার্টের রোগের অপারেশন, কানপাকা, সাইনুসাইটিস, ফুসফুসে ইনফেকশন প্রভৃতি রোগের চিকিৎসা করালেই এই প্রাণঘাতী কালরোগকে আমরা ঠেকিয়ে রাখতে পারব।
সুদীপ্ত কুমার মুখার্জি
নিউরোসার্জন, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল, খুলনা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১৬, ২০১২
Sagor
Khub valo hoy ni
Samrat
Sir.
আমার পায়খানার রাস্তার পাশে কিছু দিন আগে একটা ফোরা ওঠে। এখন আবার চুলকাই, আজ আবার ফোঁড়ার মাতো দেখলাম। কি করবো?
Bangla Health
পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন। ঝাল-মসলা খাবার এড়িয়ে শাকসবজি বেশী খাবেন। ফোঁড়া এতদিনে কমে না গেলে ডাক্তার দেখিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।
fardin
amr mathay 5ta achil ar moto hoise,achil gulo modhdhe onek muk ase,homio pethik 1 mas khawa por o kaj hoi nai pls amke ektu valo poramorso diye upokito korben.jody kono valo dr thake janaben
Bangla Health
ডাক্তার দেখান। ঔষধে কাজ না হলে অপারেশন করে ফেলতে পারেন।
তাকবীর
আমার পায়খানা রাস্তার পাশে অনেক বড়ো আকারের একটা ফোরা হয়েছিল। অপারেশন করে পুজ বের করা হয়েছে। এখন প্রতিদিন ড্রেসিং করে গজ দিয়ে দেয় ভিতরে। এবারে প্রায় 6দিন হলো। আর কত দিন গজ দিতে হবে? ব্যান্ডেজ না করলে কি তাড়াতাড়ি খা শুকাবে?