ইউটিআই বা মূত্রপথের সংক্রমণের প্রত্যেকেরই রোগের উপসর্গ থাকে না। তবে অধিকাংশ লোকের কিছু উপসর্গ বা লক্ষণ থাকে। এসব উপসর্গের মধ্যে রয়েছে ঘনঘন প্রস্রাব করার তাড়া এবং প্রস্রাব করার সময় মূত্রথলি বা মূত্রনালি এলাকায় ব্যথা ও জ্বালাপোড়া অনুভব করা। এক পর্যায়ে দেখা যায় আপনি প্রস্রাব করছেন না অথচ ক্লান্ত, বিচলিত হয়ে পড়েছেন এবং ব্যথা অনুভব করছেন। সচরাচর মহিলারা তলপেটে অস্বস্তিকর চাপ অনুভব করেন এবং কিছু পুরুষ মলনালি পায়খানায় ভরে ওঠার অভিজ্ঞতা লাভ করেন। মূত্রপথের সংক্রমণের অনেক রোগী অভিযোগ করেন যে তাদের ঘনঘন প্রস্রাবের পরিবর্তে খুব সামান্য পরিমাণ প্রস্রাব হচ্ছে। প্রস্রাব দুধের মতো অথবা ঘোলা হতে পারে। এমনকি লালচে হতে পারে যদি প্রস্রাবে রক্ত থাকে। যদি জ্বর থাকে তাহলে বুঝতে হবে সংক্রমণ কিডনিতে ছড়িয়েছে। কিডনির অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে পিট ব্যথা অথবা পাঁজরের নিচের দুই পাশে ব্যথা, বমিবমি ভাব, অথবা বমি।
শিশুদের ক্ষেত্রে মূত্রপথের সংক্রমণকে অধিকাংশ মা-বাবাই উপেক্ষা করেন অথবা এটাকে অন্য সমস্যা বলে মনে করেন। যদি শিশু খিটখিটে হয়ে যায়, স্বাভাবিকভাবে খেতে না চায়, দীর্ঘদিন জ্বর থাকে, পাতলা পায়া না হয় কিংবা স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে তার মূত্রপথে সংক্রমণ হয়েছে।
এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসককে দেখাতে হবে। যদি শিশুর প্রস্রাবের ধরনে কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, তাহলেও অবশ্যই চিকিৎসককে দেখাবেন।
ঘন ঘন প্রস্রাব ও দীর্ঘ স্থায়ী কিডনি রোগঃ
মূত্র পথের সংক্রমণের কারণে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ হতে পারে। আমরা জানি যে, অধিকাংশ মূত্রপথের সংক্রমণে ঘনঘন প্রস্রাব হয়। দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগেও ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। অবশ্য এটা সাধারণতঃ হয় রাতের বেলা। এছাড়া এ রোগে ক্ষুধামন্দা, বমিবমি ভাব, অল্পতে ক্লান্ত হওয়া, গায়ের রঙ কালচে হওয়া, চোখের পাতা ও পা ফুলে যাওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়। সাধারণতঃ কিডনির প্রদাহ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের জন্য দায়ী। এ ক্ষেত্রে পরবর্তীকালে কিডনি বিকল হয়ে যায়। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা যায় এবং সঠিক চিকিৎসা প্রদান করা যায় তাহলে কিডনি বিকল বিলম্বিত করা সম্ভব। দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো যারা এ রোগে ভুগছেন, তারা হার্টস্ট্রোক ও ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। এদের মৃত্যুর হার সাধারণ মানুষের চেয়ে ১০-১০০ গুণ বেশি।
দৈনিক ইত্তেফাক, ০৬ জানুয়ারী ২০০৮
লেখকঃ ডাঃ মিজানুর রহমান কল্লোল
চেম্বারঃ কমপ্যাথ লিমিটেড
১৩৬, এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা।
Leave a Reply