ইদানীং শুনেছেন লাইফস্টাইল রোগের কথা। এ-ও শুনেছেন, একে ঠেকাতে গেলে লাইফস্টাইল বদলানো প্রয়োজন। দৈনন্দিন জীবন যাপনে পরিবর্তন আনা চাই। সুস্বাস্থ্যের লক্ষ্যে নিজেকে নির্ধারণ করা বড় কথা। সোনাদীপা বেশ গুরুত্বের সঙ্গে কথাটি নিয়েছেন।
কেনই বা নয়? তাঁর পরিবারে রয়েছে ডায়াবেটিসের জোরালো ইতিহাস। সেদিন ব্লাড টেস্ট করাতে গিয়ে তাঁর ধরা পড়ল প্রি-ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস-পূর্ব অবস্থা। তাঁর রক্তের সুগার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, তবে এত বেশি নয় যে ডায়াবেটিস বলা যেতে পারে। সম্প্রতি কিছু সমস্যাও তাঁর হয়েছে। তাঁর স্বামীর ধরা পড়েছে উচ্চ রক্তচাপ এবং তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুর স্বামী সম্ভাব্য হার্ট অ্যাটাক নিয়ে ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। সোনাদীপার বয়স ৪০ ছুঁই ছুঁই।
একবিংশ শতাব্দীতে এ দেশ কেবল নয়, এ অঞ্চলের লোকজন ‘লাইফস্টাইল ডিজিজ’ সম্বন্ধে শুনছে এবং এর শিকারও হচ্ছে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উঁচুমান কোলেস্টেরল ও উঁচুমান ট্রাইগ্লিসারাইড এবং ক্রমে বাড়ছে হার্ট অ্যাটাক। জীবনযাপনের এসব অসুখ এ অঞ্চলের লোকজনের হওয়ার প্রবণতা বেশি। তাই জরুরি প্রয়োজন জীবনযাপনে পরিবর্তন আনা। তাহলে জীবনযাপনের এসব রোগ ঠেকানো যাবে, নয়তো বিলম্বিত করা যাবে। জিনগত প্রবণতা হয়তো থেকেই যাবে, কিন্তু এর প্রকাশকে বিলম্বিত করার জন্য নিজেদেরও কিছু করার আছে।
কীভাবে রক্তের স্বাভাবিক সুগার মান অর্জন করা যায়, বজায়ও রাখা যায়?
দেহের প্রতিটি কোষে শক্তির জোগান দেয় গ্লুকোজ। রক্তস্রোতে গ্লুকোজের স্বাভাবিক মান বজায় থাকার জন্য একটি জটিল প্রক্রিয়া কাজ করে। রক্তের গ্লুকোজ মানের নিয়ন্ত্রণ করে হরমোন ইনসুলিন ও গ্লুকানন: অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হয় এ দুটো হরমোন।
হরমোনগুলো রক্তের সুগারকে সীমিত সীমার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে রাখে। এই নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ব্যর্থ হলে রক্তের সুগার মান কমে আসে বা খুব বেড়ে যায়।
যেসব খাবার খেলে রক্তের সুগার বেশি বাড়ে না, সেসব খাবার খেলে রক্তের সুগার সীমার মধ্যে বজায় থাকে। সে রকম খাবার হলো: ফল ও সবজি, গোটা শস্য, শুঁটকি, ডাল ও কৃশ প্রোটিন।
কম কম করে বারবার খেলে, দু-তিন ঘণ্টা পরপর কম পরিমাণ খেয়ে খেয়ে অতিভোজন এড়ানো যায় এবং ক্যালরি বেশি গ্রহণও ঠেকানো যায়। রক্তের সুগার খুব বেশি নিচু হওয়া বা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাওয়া ঘটে না, মোটমাট আদর্শ মান বজায় থাকে। খাবারে প্রোটিন ও আঁশ যোগ করলে গ্লুকোজের শোষণ বাধা পায় বা ধীরগতির হয়। রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণের জন্য যেমন স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্য চাই, তেমনি চাই ওজন বেশি হলে কমানো এবং ব্যায়াম করা।
স্বাভাবিক রক্তচাপ অর্জন করা ও বজায় রাখা
রক্তের স্বাভাবিক চাপ মানে ১২০/৮০ মিলিমিটার পারদ চাপ বা এর কম। রক্তচাপ ১৪০/৯০-এর বেশি হলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিগুলো হলো: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের পারিবারিক ইতিহাস, শরীরে বেশি ওজন বা স্থূল হওয়া, নিষ্ক্রিয় ও শুয়ে-বসে থাকা জীবন। রক্তনালির ভেতর চাপ বাড়লে হূদ্যন্ত্র বড়ই ভারগ্রস্ত হয়। ভীষণ কাজের চাপ পড়ে হূদ্যন্ত্রের ওপর। সেই সঙ্গে স্থূলতা, ডায়াবেটিস বা ধূমপান থাকলে উচ্চ রক্তচাপের রোগীর হূদেরাগ, স্ট্রোক বা কিডনি রোগের ঝুঁকি নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য খুব মূল্যবান হলো ব্যায়াম। মাঝারি ব্যায়াম। যেমন, দ্রুত হাঁটা, লিফটে না চড়ে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর কৌশল হতে পারে।
টেলিভিশন ও কম্পিউটার থেকে দূরে থাকা যতদূর সম্ভব, পারিবারিকভাবে চর্চা হতে পারে, বাচ্চারা যেন জীবনের শুরুতেই শুরু করে ব্যায়াম করা, খেলাধুলা করা, অভিভাবকদের তা-ও দেখতে হবে।
চর্বি ও কোলেস্টেরলবহুল খাবার এড়ানো। লবণ খুব কম খাওয়া। আমাদের দেশের লোকজন পাতে বেশ লবণ খায়। এমনিতেই নানাভাবে বেশি লবণ খাওয়া হয় আমাদের। বেশির ভাগ স্ন্যাকস ও প্যাকেটজাত খাবার লবণে ভর্তি।
স্বাভাবিক লিপিড প্রোফাইল অর্জন করা ও বজায় রাখা
লিপিড প্রোফাইল মাপলে জানা যাবে রক্তের মোট কোলেস্টেরল, এইচডিএল (হিতকর কোলেস্টেরল) এলডিএল (ক্ষতিকর কোলেস্টেরল) এবং ট্রাইগ্লিসারাইড মান।
মোট কোলেস্টেরল থাকা উচিত ২০০-এর নিচে, ২০০-২৩৯ হলো সীমা ছুঁই ছুঁই বেশি, ২৪০ হলো উঁচুমান।
উঁচুমান ট্রাইগ্লিসারাইড কেবল ‘ভাতখেকোদের রোগ’।
নিয়ন্ত্রণে রাখা চাই কোলেস্টেরল
স্বাভাবিক কোলেস্টেরল মান হলো হূদেরাগ ও স্ট্রোকের প্রধান ঝুঁকি, এ দুটো রোগ ক্রমেই বাড়ছে এ দেশে।
কোলেস্টেরল হলো নরম, চর্বির মতো, মোমসম পদার্থ, রক্তস্রোতে প্রবহমান: দেহের নানা কাজে নিয়োজিত কোলেস্টেরল। কিন্তু কোলেস্টেরল মান উঁচু হলে বিপত্তি।
একসময় পলিমাটির মতো কোলেস্টেরল জমতে থাকে ধমনির গায়ে, রুদ্ধ হয় ধমনিপথ। রক্ত চলাচল কমে আসে, হূৎপেশিতে দেখা দেয় রক্তের অভাব। মরণদশা হয় তখন এর—হার্ট অ্যাটাক।
এইচডিএল মান উঁচু হলে রাভ, হূদ্সুরক্ষা মজবুত হলো। হূদেরাগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জোরদার থাকল। এইচডিএল মান নারীদের থাকা উচিত ৫০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের বেশি এবং ৪০ মিলিগ্রামের বেশি পুরুষদের ক্ষেত্রে।
এলডিএল মান ১৩০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার হলো সর্বোচ্চ, এর বেশি থাকা ঠিক নয়।
এলডিএল মান ১৬০ মিলিগ্রাম মানে উঁচুমান—এতে হূদেরাগের ঝুঁকি খুব বেড়ে যায়।
স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে ও নিয়মিত ব্যায়াম করলে নিয়ন্ত্রণে থাকে রক্তের কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড মান। প্রয়োজনে ওষুধ।
শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২৫, ২০১২
Drimit
Sir,
Ami 1jon student. Amar age 20. Hight 5’1”. Weight 51 Kg. Aro 3/4 bochor purbe medicine er side-effect er karone amar kidney te 1tu problem hoy. But bapar ti amar baba maa amak jante dei ni. Hotaht kore medical report ti amar hate pore. Ami khub voy peye jai. Tobe ami jake love kori take baparti bolar pore o se amak chere chole jai ni. Kintu ekon j problem ta hoy majhe majhe hat paa fule jai, obos obos lage, matha betha kore, olpotei hapiye uthi. Amar lover chai ami whole body check-up kori. Adike baba maa k o bolte parchi na coz ora chole amar tutiony er takai. R amar lover er MBA exam cholche. O ekhono job kore na. Amar ki kora uchit bolben plz ..
Bangla Health
কিডনিতে একটু সমস্যা হয়তো কোন সমস্যাই নয়। আপনি হয়তো অযথা এটা নিয়ে ভাবছেন। আপনার যে সমস্যা মাঝে মাঝে হয় সেটা হয়তো শারীরিক দুর্বলতা এবং অত্যাধিক পরিশ্রমের জন্য হচ্ছে।
তবে আপনার বন্ধু আপনাকে সঠিক উপদেশ দিয়েছেন। আপনার উচিত হবে সারা শরীর চেকআপ করিয়ে নেয়া যে সব ঠিক আছে কিনা। ডাক্তার দেখানোটা লজ্জা বা ভয়ের কিছু নয় যে গোপন করতে হবে। বাবা-মার সাথে আপনার সমস্যাগুলো শেয়ার করেন। তারা আপনার ভালোই চাইবে।