যার সারা জীবন চশমা লাগেনি তার চল্লিশের পর নিকটে দেখার চশমা লাগাটা একটা প্রাকৃতিক নিয়ম। ইংরেজিতে বলে চৎবংনুড়ঢ়রধ আর বাংলায় চোখে ‘চালশে ধরা’। জন্ম থেকে চল্লিশ বছর (কারো ৩৭ কারও বা ৪৫, বাধা ধরা কোনো নিয়ম নেই) পর্যন্ত আমাদের চোখের ভেতরের লেসটা, যেটা সব দৃশ্যবস্তুকে ফোকাস করে পরিষ্কার দেখতে সাহায্য করে। এটা একটা অটো ফোকাস ক্যামেরার মতো কাজ করে এবং আকাশের প্লেন থেকে হাতের ঘড়ির কাঁটা পর্যন্ত নিমিষেই ফোকাস করতে পারে। তবে পার্থক্য এই যে ক্যামেরার লেস একটু আগে বা একটু পেছনে গিয়ে ফোকাস করে কিন্তু আমাদের চোখের লেসটা আগে পিছে না গিয়ে নিজেই আশপাশের কয়েকটা পেশির সাহায্যে মোটা-পাতলা হয়ে ফোকাস করতে সাহায্য করে। কিন্তু বয়সের সঙ্গে অন্যান্য সব অঙ্গের মতো লেসটাও একটু শক্ত হয়ে আসে এবং নিজে থেকেই মোটা-পাতলা হওয়ার শক্তি আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলে, যেজন্য চশমার পাওয়ার বাড়তে থাকে।
এ পর্যন্ত নিকট দৃষ্টির জন্য একমাত্র চশমাই ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। চশমা ছাড়া ভালো দেখার জন্য মাত্র গত ক’বছর পর্যন্ত এসেছে কন্ট্যাক্ট লেস ও সব শেষে ল্যাসিক। আর ল্যাসিক আসার পর মানুষ কন্ট্যাক্ট লেসের কথা বেশি বলছে না কারণ এ লেস খোলা পরার ঝামেলা ও প্রতিদিন পরিচর্যা করার সমস্যা অনেক। তাছাড়া নিকট দৃষ্টির জন্য কন্ট্যাক্ট লেস হয় না, অবশ্য অনেকে এক চোখে নিকটে দেখার জন্য কন্ট্যাক্ট লেস ব্যবহার করেন-যাকে বলে গড়হড়ারংরড়হ। এ প্রসঙ্গে পরে আসছি।
এবার আসা যাক ল্যাসিকের কথায়। নিকট দৃষ্টির জন্য ল্যাসিক কীভাবে সাহায্য করতে পারে। প্রথম কথা হলো চল্লিশের পর আমাদের চোখের পাওয়ার দুরে এবং কাছে এক নয়। প্রত্যেক দুরত্বের জন্য একেকটা আলাদা পাওয়ার, যেমন দুরের জন্য একটা কম্পিউটারে কাজ করার জন্য একটা (Mid-distance) ও নিকটের জন্য একটা। সাধারণ জীবনের জন্য এই তিনটাই যথেষ্ট। প্রথমে মনে রাখতে হবে ল্যাসিক (ও কন্ট্যাক্ট লেস) শুধু একটা পাওয়ার ঠিক করতে পারে। তাই প্রশ্ন হলো ল্যাসিক চালশে পড়া চোখে (Presbyopic) কীভাবে সাহায্য করতে পারে।
দুই চোখের পাওয়ার কম-বেশি Correction করিয়ে রোগীকে খুশি করা বর্তমানে খুবই একটা সাধারণ বিষয়। এই বয়সের দলে দুই শ্রেণীর মানুষ আছেঃ
(ক) দুরে চশমা লাগে না শুধু নিকটে লাগে
(খ) কারো দুরে ও নিকটে দুটোই লাগে।
এবার বলব এই দু’শ্রেণীর মানুষের জন্য দু’রকমের ব্যবস্হার কথা। সবশেষে জানবেন ক ও খ গ্রুপের কার জন্য কোনটা ভালো। এই দুই ধরনের চিকিৎসায়ই দুই চোখের পাওয়ার সম্পুর্ণ ঈড়ৎৎবপঃ না করে দুই দিকে কম-বেশি ঈড়ৎৎবপঃরড়হ করিয়ে দুরে কাছে নধষধহপব করিয়ে দেয়া। দেখা গেছে এতে চল্লিশোর্ধ মানুষরা অসম্ভব খুশি। এই দুই পদ্ধতি হলো
ক. মনোভিশন
এক কথায় এক চোখে দুরের জন্য আর অন্য চোখে কাছের জন্য ব্যবহার করা। এটা করালে দুরে এক চোখে খুব ভালো ও নিকটে অন্য চোখে খুব ভালো দেখা যায়। এই যে দুরে বা নিকটে এক চোখে দেখা সে দেখা দুই চোখ মিলে পরিষ্কার দেখার মতো এত আরামদায়ক যদিও নয় তবুও দেখা গেছে, যে সব সময় চশমা বয়ে নিয়ে বেড়ান থেকে মুক্তি, চশমাবিহীন ও ঝামেলাহীন সামাজিক জীবন বহু মানুষের কাছে খুবই গ্রহণযোগ্য। আপনি এই ধরনের চিকিৎসা করাবেন কিনা এটা সম্পুর্ণ নির্ভর করে আপনার নিজের চাহিদার ওপর, এখানে ডাক্তারের কোনো অভিমত নেই। তবে চোখের ব্যাপারে এটা খারাপও নয়। আর একটা কথা, দুই চোখে সমান দেখার জন্য আপনি একটা চশমা নিজের কাছে রেখেও দিতে পারেন, যদি বেশিক্ষণ লেখাপড়া বা চোখের কাজ করতে চান তাহলে মনোভিশনে চোখে একটু ক্লান্তি আসতে পারে। তখন দুই চোখে সমান দেখার জন্য চশমাটা সাময়িকভাবে ব্যবহার করতে পারেন। মনোভিশন চশমাবিহীন সামাজিক জীবনের জন্য খুবই জনপ্রিয়। বিশেষ করে যাদের দুরের চশমা এমনিতেই লাগে না।
খ. পাওয়ার কম-বেশি করান
এবার বলব বিশেষ করে তাদের কথা যাদের দুরে এবং কাছে দুটোতেই মোটামুটি পাওয়ার আছে। এরা নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে যে কোনো একটা পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে-
মনোভিশন অথবা দু’চোখেই দুরের জন্য পুরো পাওয়ার ঈড়ৎৎবপঃরড়হ করাতে পারেন এবং শুধু নিকটের জন্য চশমা (দু’চোখেই)। মনে রাখবেন, দুরের পাওয়ার ঠিক করালে নিকটের পাওয়ারও আগের থেকে কমে অর্ধেক হয়ে যাবে, দু’দিকেই লাভ। এতে সুবিধা হলো, সকালে উঠেই আর চশমা হাতড়াতে হবে না। দুরে দেখতে চশমা লাগবে না। নিকটেও মোটামুটি বড় লেখা পড়তে পারবেন যেটা আগে একেবারেই পারতেন না। তবে খুব ছোট লেখা পড়তে একটা চশমা পকেটে রাখতে হবে।
আসল কথা হলো ল্যাসিকের মাধ্যমে দুরের পাওয়ার সম্পুর্ণ সারিয়ে দেয়ার পরও আমরা এখন চোখের যে কোনো নিকটের পাওয়ারকে কম-বেশি করিয়ে রোগীকে খুশি করতে পারি।
চোখের পাওয়ার সম্বন্ধে নানান কথা খুলে বলার পরও সবচেয়ে ভালো ব্যবস্হা হলো ডাক্তারের চেম্বারের চেয়ারে বসে চোখের সেই সব পাওয়ার একের পর এক বসিয়ে ডাক্তার সাহেব যদি ভালোভাবে বুঝিয়ে দেন যে অপারেশন করালে ঠিক কি হবে তাহলে আপনার জন্য ফবপরংরড়হ নেয়া সহজ হবে। তাই ল্যাসিক সেন্টারে গিয়ে এসব পাওয়ারের খুঁটিনাটি আলোচনা করা সবচেয়ে নিরাপদ।
সবশেষে মনে রাখবেন ল্যাসিক করিয়ে চল্লিশোর্ধ বয়সে যাদের দুরে ও নিকটে দু’রকমের পাওয়ার তাদেরও মোটামুটি চশমা থেকে মুক্তি দেয়া সম্ভব।
———————–
ডা. রশীদ হায়দার
আমার দেশ, ১লা এপ্রিল ২০০৮
Leave a Reply