নিয়মিত মিলে ছাঁটা সাদা চাল খাওয়া এশিয়ার দেশগুলোতে যে চালু রয়েছে, তাতে বেড়ে যায় ডায়াবেটিস টাইপ-২-এর ঝুঁকি, নতুন গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য। গবেষকেরা চারটি গবেষণার তথ্য-উপাত্ত লক্ষ করেছেন, দুটি গবেষণা হয়েছে, দুটি এশিয়ার দেশ চীন ও জাপানে এবং দুটি হয়েছে পশ্চিমা দেশ আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায়। গবেষণার শুরুতে সব অংশগ্রহণকারী ছিলেন ডায়াবেটিসমুক্ত।
গড়ে এশিয়ার দেশগুলোর লোকজন প্রতিদিন চারটি সার্ভিং (প্রতিবার খাওয়া) সাদা চাল খেয়েছিলেন: পশ্চিমা দেশের লোকজন খেয়েছিলেন সপ্তাহে পাঁচটি সার্ভিংয়ের কম। গবেষণায় দেখা গেল, প্রতিদিন যাঁরা যত বেশি সার্ভিং সাদা চাল খেয়েছিলেন, তাঁদের টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি তত বাড়ে। প্রসঙ্গক্রমে বলি, টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হলো স্থূলতার।
নতুন গবেষণা অনুযায়ী, প্রতিদিন সাদা চাল যত বেশি খাওয়া হয়, ডায়াবেটিস ঝুঁকি বাড়ে ১০ শতাংশ (প্রতি সার্ভিং খাওয়া বাড়াতে) নতুন গবেষণা তথ্য প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি প্রখ্যাত ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে।
সাদা চাল কী করে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়, গবেষণায় তা সন্ধান করা হয়নি; তবে গবেষক কিউ সান এর পেছনে কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সাদা চাল গ্লাইসিমিক ইনডেক্সের বিচারে অনেক উঁচুতে; এর মানে হলো, সাদা চাল খেলে রক্তের সুগার হঠাৎ উঠে যায় তুঙ্গে। সাদা চালে আঁশও খুব কম; আমরা জানি খাদ্যে আঁশ থাকলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। ডা. সান বর্তমানে হিউস্টনে হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের মেডিসিনের ইনস্ট্রাকটর।
কেবল সাদা চালই নয়, অন্যান্য সাদা শ্বেতসারবহুল শর্করাও—যেমন ময়দা, সাদা পাস্তা ও সাদা আলু। বেশি খেলে রক্তের সুগার উঠে যায় তুঙ্গে।
তাই সাদা চালের বদলে বাদামি চাল ডা. সানের পরামর্শ। ঢেঁকিছাঁটা বাদামি চাল। ময়দার বদলে আটার রুটি। তবে এর মানে এই নয় যে সাদা চাল একেবারেই বর্জন করতে হবে। কদাচিৎ উৎসবে খেলে চলে। সপ্তাহে এক দিন একবেলা সামান্য সাদা চাল খেলে সমস্যা নেই। সুমিত, পরিমিত যেকোনো আহার স্বাস্থ্যবান্ধব।
নিউইয়র্ক সিটির লেনক্স হিল হাসপাতালে এনডোক্সিনোলজিস্ট ডা. স্পাইরস মেজিটিস বলেন, সব সাদা শর্করা খাদ্য অতিরিক্ত খেলে বাড়ে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি।
যাঁদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি, তাঁদের ক্যালরি গ্রহণ কমাতে হবে, ভারী ও স্থূল হলে ওজন কমাতে হবে এবং সাদা শর্করার বদলে খেতে হবে মোটা শস্যখাদ্য।
খেতে হবে অল্প এবং সাদা চাল ও ময়দার পরিবর্তে মোটা শস্য। লাল চাল ও আটা।
নিউইয়র্কের নর্থশোর এলআইজি হেলথ সিফটেমে ডায়াবেটিস কেয়ারের পরিচালক ডা. ট্র্যামি ব্রিন বলেন, যা খেলেন এবং কী পরিমাণ খেলেন, তা কেবল পুরো সমীকরণের অংশমাত্র। ডায়াবেটিসের ঝুঁকির ব্যাপার হলে বংশগতিও বড় বিবেচ্য বিষয়।
কেবল একটি জিনিস বিচার্য নয়; কী খেলেন, কী করলেন এবং বংশগতি—সবগুলোই বিবেচ্য। আমরা বংশগতিকে বদলাতে পারব না, তাই খাদ্য কীভাবে আমাদের সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করছে, আহার অভ্যাসের কী চল রয়েছে, সংস্কৃতিতে একে নিয়ে ভাবা হলো গুরুত্বপূর্ণ।
তবে ভিন্নমতের সুরও আছে। কনি ডিকম্যান একজন বিশেষজ্ঞ। তাঁর বক্তব্য, সাদা চাল সত্যি সত্যি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায় কি না, তা আরও পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন। সেন্ট লুইতে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি বিভাগের পরিচালক কনি ডিকম্যান বলেন, ওপরের গবেষণা নিতান্ত পর্যবেক্ষণমূলক। গবেষণার মাধ্যমে কার্যকরণ সম্পর্ক তেমন স্পষ্ট হয়নি। সাদা চাল খেলে সত্যি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে, এর জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ১৮, ২০১২
Leave a Reply