হাটু, কোমর আর গোড়ালিকে যদি সচল ও প্রানবন্ত রাখা না যায়, সুখে স্বস্তিতে না রাখা যায় তাহলে জীবনেও তো স্বস্তি আসে না।
বিজ্ঞানীরা বলেন জীবন-যাপনে একটু বদ বদল ঘটিয়ে একে অর্জন করা তেমন কঠিন ব্যাপার নয়। একটু বুড়ো হলে হাটুর গিটে ব্যথা হলো, অস্তিত্ত আথ্রাইটিস বয়সের সঙ্গে আসতেই পারে। হঠাৎ আঘাত লাগলো, গিটে দীঘদিন বেশি ব্যবহার করা, টানটান লাগা এরকম কত সমস্যা হতে পারে গিটে।
আথ্র্যাইটিসঃ এ ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক গাইড’(ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক প্রেস, ২০০৬) এই গ্রন্থ লিখে খ্যাত রিউমাটোলজিস্ট ডাঃ জন ক্লাউ বলেন, তবে এসব রোগ প্রতিরোধ করা যায়, উপসর্গ স্বস্তিতে আনা যায়, প্রয়োজন দৈনন্দিন জীবনাচরনে পরিবর্তন।’
নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে তবে সযতনেঃ
সপ্তহে তিন থেকে পাঁচদিন নিয়মিত ব্যায়াম করলে হাড়ের গিট থাকে সুস্থ। যে সব ব্যায়ামে শরীকের চাপ কম পড়ে যেমন সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা। হাটুতে সমস্যা থাকলে, দৌড় ঝাঁপ, সিঁড়ি বেয়ে উঠা, ভারি জিনিস বহন করা, এড়ানো ভালো কারণ এতে হাটুর উপর চাপ পড়ে।
প্রদাহ প্রতিরোধ করার জন্য সুখাদ্য প্রয়োজনঃ
চর্বিযুক্ত লাল গোস্ত খাওয়া যাবে না কারণ এতে হাড় দুর্বল হয়ে যায় এবং ক্যালসিয়াম ক্ষয় ঘটে। যে সব খাবার প্রক্রিয়াজাত হয় এগুলো এড়ানোভালো, যেমন মিলে ছাটা সাদা চাল, ময়দার রুটি, এবং নাস্তা, এমন খাবার যাতে আছে ট্রান্সফ্যাটি এসিড এবং সম্পৃক্ত চর্বি। এসব খাবার খাওয়া ঠিক না কারণ এসব খাবার খেলে শরীরে প্রদাহ বাড়ে। এর পরিবর্তে এমন খাবার খাওয়া ভালো, যাতে রয়েছে প্রদাহরোধী গুনাগুন যেমন ফলফলারি, শাক সবজি, গোটা দানা শস্য, বাদাম ও উদ্বিজ্জতেল। খেতে হবে প্রচুর তৈলাক্ত মাছ, গভীর সমুদ্রের শীতল পানির মাছ।
ক্ষীণদেহ থাকতে হবে হাটুর সুরক্ষার জন্যঃ
অনেকে বলেন মোটা তাজা। সঠিক নয়। বরং মোটা রোগা বলাই ভালো। মোটা হলে অসুখ শরীরে বাসা বাঁধে বরং। শরীরে বাড়তি ওজন কমিয়ে িম থাকতে পারলে, হাটুর উপর চাপ কমে। হাড়ের নিচের ব্যথা বেশি হয় হাটুতো। দেহের উচ্চতার সঙ্গে ওজনের অনুপাত হলো বডিমাম ইনডেক্স বা বি·এম·আই (ইগও),এই পরিমাপ থেকে জানা যায় শরীরের ওজন সঠিক রয়েছে কিনা। বি·এম·আই ২৫ এর নিচে থাকলে ভালো। বিজ্ঞজনদের অভিমত।
শক্তিশালী করে তুলতে পা দুটোকেঃ
লেগ প্রেস ও লেগ কার্ল (খবম ঢ়ৎবংং ও ষবম পঁৎষ) এ দুটো সহজ ব্যায়াম করে পায়ের দুটো প্রধান পেশী কুয়াড্রিসেপস(য়ঁফৎরপবঢ়ং) ও হ্যামষ্টিং (যধসংঃৎরহমং) কে শক্তিশালী করে তুলুন। এদুটো ব্যায়মে হাটুর উপর অতিরিক্ত চাপ পড়েনা। ক্লাও বলেন ব্যায়াম করে এ দুটো পেশীকে মজবুত রাখলে হাটুর অনেক সুরক্ষা হয়।
স্ট্রেচিং প্রয়োজনঃ
হাটুর উপর টান টান পেশির চাপ অনেকটা কমাতে পারে স্ট্রেচিং ব্যায়াম। হ্যার্মাষ্টিং পেশী টান টান থাকলে একটা ব্যায়াম করা যেতে পারে । চিৎ হয়ে শুয়ে পড় ন এক হাত দিয়ে একটি হাটু ধরে একে যত কাছে সম্ভব বুকের কাছে আনুন। এ ভাবে রাখুন কয়েক সেকেন্ড। বিপরীত হাটুর এমনি ব্যায়াম করুন। সপ্তাহে তিন থেকে পাচঁ দিন। প্রতিদিন পাঁচবার এ ব্যায়াম করুন।
সঠিক দেহভঙ্গী চাইঃ
ভালো আর্গোনোমিকস্ চর্চা করা উচিত। কম্পিউটারের সামনে বেঠিক ভঙ্গীতে বসলে হাতে, ঘাড়ে ও পিঠে চাপ পড়ে, টান পড়ে। চেয়ারের উচ্চতা যেমন এমন থাকে যাতে পা দুটোর পাতা চ্যাপ্টা ভাবে থাকে মেঝেতে। মাথা ও পিঠ যেন ঠিক ভঙ্গীতে থাকে, কার্বদুটো যেন শিথিল ভঙ্গীতে স্বাভাবিক অবস্থানে থাকে। শির যেন উচুুতে থাকে। প্রতিঘন্টার পরপর পাঁচ মিনিটের বিরতি নেবেন কমপিউটার থেকে। এসব চর্চা, জীবনাচরনে অনেক স্বস্থি দেবে হাড়ের নিটকে জীবনভর।
————————–
অধ্যাপক ডাঃ শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক,ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস বারডেম, ঢাকা
দৈনিক ইত্তেফাক, ০৫/০৪/২০০৮
Leave a Reply