বাচ্চার খাদ্য ও পরিপাকতন্ত্র বেশ জটিলভাবে সাজানো। এ যদি ঠিকঠাক কাজ করে, তাহলে শিশু স্বাস্থ্যবান থাকে, হাসিখুশি থাকে। কিন্তু এখানের গোলমালে যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য, বমিভাব—বমি, ডায়রিয়া এসব সমস্যা জট পাকালে শিশু বেশ কাহিল হয়ে যায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য: মলত্যাগে শিশু যদি ব্যথা পায়, তবে কোষ্ঠবদ্ধতা বলা চলে। অনেক শিশু দু-তিন দিন অন্তর পায়খানা করে। চার দিন বা বেশি সময় ধরে মলত্যাগ না হলে কোষ্ঠবদ্ধতা বলা হয়। যদিও এ পর্বে অনেক শিশু স্বাভাবিক থাকে। সাধারণভাবে শিশু যদি কম জলপান করে, তার খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ফলমূল, শাকসবজি না থাকে, তবে কোষ্ঠবদ্ধতা তৈরি হয়।
প্রতিরোধ
কমপক্ষে দৈনিক তিনবার শিশু ফলমূল, শাকসবজি গ্রহণ করবে। তবে কখনো দৈনিক দুই আউন্সের বেশি ফলের রস খাওয়ানো উচিত নয়।
বেশি জলপান।
দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত খাবার, আইসক্রিম, পনির, কলা, সেদ্ধ গাজর এসব কোষ্ঠকাঠিন্য ঘটায়, তাই কম পরিমাণে খাবে।
শিশুকে কায়িক শ্রম ও ব্যায়ামে উৎসাহিত করা।
শিশু যেন নিয়মমাফিক বিশেষ করে ব্রেকফাস্টের পর টয়লেটে যায় ও কমপক্ষে ১০ মিনিট অবস্থান করে।
কখনো না: চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিরেকে কখনো শিশুকে সাপোজিটরি, এনেমা ও মুখে খাবার কড়া ল্যাক্সেটিভ যেন ব্যবহার করা না হয়।
ডায়রিয়া: একেক শিশুর মলত্যাগের ধরন একেক রকম। বুকের দুধে নির্ভরশীল অনেক শিশু প্রতিবার বুকের দুধ পান করার পর পায়খানা করে। অনেক বাচ্চা দৈনিক চার থেকে ১০ বার পর্যন্ত টয়লেটে যায়, আবার অনেকে প্রতি তিন দিনে একবার টয়লেট করে। মলে মিউকাস থাকা দোষের না। ডায়রিয়া হলে শিশুর পায়খানা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা জলতরল ভাব নেয়।
নানা কারণে ডায়রিয়া
খাবারে পরিবর্তন, যা শিশুর খাদ্য পরিপাকতন্ত্র সহ্য করে উঠতে পারেনি। বেশি জুস খাওয়ালেও হতে পারে। তবে এ রকম ডায়রিয়া বেশি সিরিয়াস প্রকৃতির নয়।
ইনফেকশন। ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া অণুজীবাণু-ঘটিত। রোটা ভাইরাস। ফুড পয়জনিং। ডায়রিয়ার মাধ্যমে দেহ রোগজীবাণুকে শরীর থেকে বের করে দিতে চেষ্টা করে।
জিয়ারডিয়া ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া আন্ত্রিক সংক্রমণে শিশু ভোগে, যদি শিশুকে পরিষ্কার ফুটানো পানি না খাওয়ানো হয়, দুগ্ধপান-দুগ্ধজাত খাদ্য জীবাণুমুক্ত না থাকলে, হাত ধোয়ার অভ্যাস শিশুতে গড়ে না উঠলে।
এ ছাড়া আইবিএস, সিলিয়্যাকে ভোগা শিশু ডায়রিয়ায় ভোগে।
বমিভাব ও বমি: বমিভাব ও বমি শিশু বয়সের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে। পাকস্থলীর খাবার জোরের সঙ্গে এবং বারবার বেরিয়ে আসে। নানা কারণে হতে পারে।
বেশি বা জোর করে বাচ্চাকে খাওয়ানো।
বুকের দুধ ও অন্যান্য খাবার গ্রহণের পর বার্পিং করা না হলে।
ঘরে পরোক্ষ ধূমপান।
স্টম্যাক ফ্লু অর্থাৎ গ্যাসট্রোএনটেরাইটিস। সঙ্গে জ্বর, পাতলা পায়খানা থাকে। বমি সাধারণভাবে ১২ ঘণ্টার মধ্যে সেরে যায়, তবে ডায়রিয়া বেশ কয় দিন ধরে চলে।
শিশুর গলাব্যথা (স্ট্রেপ থ্রোট), নিউমোনিয়া, ইউটিআই, মেনিনজাইটিস, পাইলোরিক স্টেনোসিস, রি-ই সিনড্রোম এসব অসুখে বমি হয়।
হেড ইনজুরিতে বমি হতে পারে। তখন ত্বরিত পরামর্শ চাইতে হবে।
প্রতিরোধ
রোটা ভাইরাসের টিকাদানে ডায়রিয়া প্রতিরোধের সুরক্ষা তৈরি হয়।
পানিস্বল্পতা প্রতিরোধে প্রথম থেকে নিয়ম মেনে ওআরএস খাওয়ানো।
প্রণব কুমার চৌধুরী,
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৮, ২০১২
Leave a Reply