আগামী ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। এ বছর বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসের প্রতিপাদ্য ‘যত দিন বাঁচব, যক্ষ্মাকে রুখব’ (স্টপ টিবি ইন মাই লাইফ)।
যক্ষ্মার রক্ষা আছে: একটা সময় ছিল যখন বলা হতো যক্ষ্মা হলে রক্ষা নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি পাল্টেছে। আধুনিক চিকিৎসা বিকশিত হয়েছে। ছয় মাস নিয়মিত ওষুধ সেবন করলে যক্ষ্মা সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়।
কাশতে কাশতে হাসি বন্ধ: কারও যদি তিন সপ্তাহ ধরে কাশি হয়, না কমে, এমনকি কাশি সারানোর ওষুধ খাওয়ার পরও। সঙ্গে জ্বর, শরীরের ওজন কমে যাওয়া। রাতে রাতে জ্বার আসা, ক্ষুধামান্দ্য—এসব লক্ষণ থাকলে বুকের এক্স-রে আর কাশি পরীক্ষা করলে নিশ্চিত হওয়া যাবে রোগটি যক্ষ্মা কি না।
দেশজুড়ে বিনা মূল্যে চিকিৎসা: যক্ষ্মা রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য দেশজুড়ে সরকারিভাবে রয়েছে বিনা মূল্যে সম্পূর্ণ চিকিৎসার ব্যবস্থা। এক হাজারেরও বেশি স্থানীয় ল্যাবরেটরি রয়েছে রোগনির্ণয়ের জন্য, বিনে পয়সার। আর চিকিৎসার জন্য রয়েছে ডটস কর্নার।
ডটস চিকিৎসা—সামনে বসে ওষুধ খাওয়া: ডটস—ডাইরেক্টলি অবজারভড ট্রিটমেন্ট শর্টকোর্স অর্থাৎ সেবাদানকারীর সামনে বসে ওষুধ খাওয়ার পদ্ধতি বাংলাদেশে চালু হয়েছে ১৯৯৩ সাল থেকে। বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত এই পদ্ধতি। দেশজুড়ে এনজিওকর্মীরা প্রাথমিকভাবে রোগী বাছাই করে স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে পাঠান। সেখানে রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা হয়। যাদের রোগ ধরা পড়ে তাদের দেওয়া হয় সরাসরি চিকিৎসা। ছয় মাস ধরে স্বাস্থ্যকর্মীদের সহযোগিতায় একটানা ওষুধ সেবন করতে হয়। যাতে চিকিৎসা সম্পূর্ণভাবে শেষ করা হয় সে জন্যই এ ব্যবস্থা। নচেত কিছুদিন ওষুধ খাওয়ার পর যখন রোগী ভালো বোধ করেন তখন ওষুধ খাওয়া বন্ধ কর দেন। বিনা পয়সায় পাওয়া যায় তাই কদর কম। এতে হিতে বিপরীত হয়। দেখা দেয় ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স। ওষুধের কার্যকারিতা কমে যায়। পুনরায় যক্ষ্মা দেখা দেয়। পরের বারের চিকিৎসায় ওই ওষুধগুলো ঠিকভাবে কাজ করে না। একে বলে এমডিআর টিবি বা মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট যক্ষ্মা।
এমডিআর প্রতিরোধে নিয়মিত ওষুধ খান: যক্ষ্মার জন্য বেশ কয়েকটি ওষুধ আছে। নিয়মিত খেতে হয় কমপক্ষে ছয় মাস। কখনো কখনো চিকিৎসকের পরামর্শমতো আরও বেশি সময় খাওয়া লাগে। ডটস কর্নারে বিনা মূল্যে ওষুধ পাওয়া যায়। এরপর শুরু করে টানা ছয় মাস খেতে হবে। বাদ দেওয়া যাবে না। সুস্থ মনে হলেও খেয়ে যেতে হবে। কারণ এমডিআর যক্ষ্মার চিকিৎসা আরও ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। তাই যক্ষ্মার ওষুধ নিয়মিত এবং সম্পূর্ণ কোর্স খেতে হবে।
যত দিন বাঁচব, যক্ষ্মাকে রুখব: বাংলাদেশে যক্ষ্মা শনাক্তকরণের হার শতকরা ৭০ ভাগ। তবে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের আওতায় যে চিকিৎসা হয় তা ধরা হলে এই হার আরও বেশি হবে। আর শনাক্তকৃত যক্ষ্মারোগীদের শতকরা ৯৫ ভাগ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান। গ্লোবাল ফান্ড আর সরকারের সহযোগিতায় বাংলাদেশে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি আন্তর্জাতিক সুনাম কুড়িয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব দেশের প্রধানমন্ত্রীকে এ জন্য অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। কাজেই এবারের স্লোগানটি বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য যথাযথ। আসুন, সচেতন হই, রোগীর চিকিৎসা সম্পূর্ণ করি—বলি, ‘যত দিন বাঁচব যক্ষ্মাকে রুখব।’
ইকবাল কবীর
সহকারী অধ্যাপক, রোগতত্ত্ব বিভাগ, নিপসম
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২১, ২০১২
Leave a Reply