হৃদরোগ এখন সমস্যা পৃথিবীজুড়ে। উন্নয়নশীল দেশেও এটি বড় সমস্যা। সবচেয়ে সচরাচর হৃদরোগ হলো করোনারি হূদেরাগ এবং এ থেকে হার্ট অ্যাটাক। তবে সুসংবাদ হলো, জীবনযাপনে পরিবর্তন এনে, হূদ্স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে আমরা অনেক কমিয়ে আনতে পারি করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি।
লবণঝাঁকুনি ঝেড়ে নুন খাওয়া ছাড়ুন
শিল্পোন্নত দেশ, যেমন—আমেরিকায় প্রতিদিন লোকজন তিন হাজার ৫০০ গ্রাম নুন অবলীলায় খাচ্ছেন: এর তিন-চতুর্থাংশ আসে প্রক্রিয়াজাত খাবার ও রেস্তোরাঁর খাবার থেকে। সে দেশের ন্যাশনাল হার্ট ও লাং ইনস্টিটিউট বলছে, নুন খাওয়া অর্ধেকে নামিয়ে আনলে প্রতিবছর হৃদরোরাগ ও রক্তনালি রোগে দেড় লাখ মৃত্যু ঠেকানো যাবে।
সোডিয়াম গ্রহণ কমাতে হলে এর বদলে খেতে হবে ফল, সবজি, লো-ফ্যাট দুধজাত খাবার। আমাদের দেশেও ফাস্টফুড, রেস্তোরাঁয় খাবার খাওয়া বাড়ছে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে, তাই সাবধান হওয়া উচিত অবিলম্বে।
যোগ করুন হূদ্স্বাস্থ্যকর চর্বি
মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ওমেগা-৩ মেদঅম্লসমৃদ্ধ খাবার খেলে কমে আসে রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড। খুব উঁচু মাত্রায় ওমেগা-৩ মেদঅম্ল আছে শীতল পানির মাছ, যেমন—বুনো স্যামন মাছ, ম্যাকরিল, সার্ডিনস, হেলিবাট বা হেবিং। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শ: প্রতি সপ্তাহে মাছের অন্তত দুটি সার্ভিং।
তাই মাছ খান স্বচ্ছন্দে। মাছে-ভাতে বাঙালি। সামুদ্রিক মাছ, মিঠা পানির মাছ যা-ই হোক। মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট খেলে দেখা যায় কমে হূদ্ক্ষতিকর এলডিএল, বাড়ে হূদিহতকর এইচডিএল। এই ফ্যাটের ভালো উৎস হলো অ্যাভোকেডো, বাদাম, বাদাম মাখন, জলপাই তেল।
যোগ করুন বেশি বেশি আঁশ
প্রতিদিন ৩৫-৪০ গ্রাম আঁশ হবে লক্ষ্য। আঁশ কমায় কোলেস্টেরল: একসঙ্গে বন্ধনাবদ্ধ হয়ে নিষ্ক্রান্ত করে শরীর থেকে। কেনটাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা থেকে দেখা গেছে, যাঁদের খাবারে নিয়মিত আঁশ থাকে, তাঁদের এলডিএল কমে যায় ২৫ শতাংশ। আঁশ খেলে ওজন হ্রাসেও বেশ সুবিধা হয়, আঁশসমৃদ্ধ খাবার পেট ভরাট করে সহজে, তাই দিনে কম খেলেও তৃপ্তিসুখ মেলে কম সময়েই।
মসলা যোগ করুন আনন্দে
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্যে মসলা যোগ করলে তা হূদিহতকর। লঙ্কা বেশ মজবুত করে হূদ্যন্ত্রকে। ধমনি ও কৈশিকাকেও। কমায় কোলেস্টেরলও। জার্নাল অব ডায়াবেটিস কেয়ার-এ প্রকাশিত নিবন্ধে দেখানো হয়েছে, অর্ধেক চা-চামচ দারচিনি প্রতিদিন কমায় এলডিএল কোলেস্টেরল। অনেক লতাগুল্মে আছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। ধনেপাতা, মেথিশাক, পুদিনাপাতা, আমেরিকার ওমেগানো এসব বেশ সমৃদ্ধ। রসুন খেলে কমে রক্তের কোলেস্টেরল। আদা হলো রক্তকে পাতলা করার ওষুধ, প্রদাহরোধীও বটে।
বেছে নিন খাদ্য, যাতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট
হূদ্সুস্বাস্থ্যনির্ভর করে উন্মুক্ত, নমনীয় ধমনির ওপর, যেগুলো দিয়ে দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে পারে রক্ত। গাঢ় চকলেট, কোকো, উদ্ভিজ্জ, যেমন—রেড ওয়াইন ও সবুজ চা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। রক্তস্রোতে মুক্তমূলকদের এটি ক্ষতি রোধ করে।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
“পাতে লবণ খাওয়া এখনই ছেড়ে দিন, উচ্চ রক্তচাপ ও হূদেরাগের ঝুঁকি কমবে”
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ১৪, ২০১২
Leave a Reply