চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখ জ্বালা, চোখে বালুর মতো কিছু পড়েছে বলে মনে হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখের কোণে পিঁচুটি জমা, চোখে চুলকানি, চোখের পাতা ফুলে যাওয়া, আলোর দিকে তাকাতে সমস্যা হওয়া, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া—এসবই চোখ ওঠা বা কনজাংকটিভাইটিস রোগের লক্ষণ। চোখের সাদা অংশ, যাকে কনজাংকটাইভা বলে, এর প্রদাহকে বলে চোখ ওঠা বা কনজাংকটিভাইটিস। সাধারণত এক চোখে শুরু হয় রোগটি। পরে দুই চোখই আক্রান্ত হয়। চোখ ওঠা বা কনজাংকটিভাইটিস রোগ ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, অ্যালার্জিসহ বেশ কয়েকটি কারণে হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসজনিত কারণে হওয়া চোখ ওঠা রোগ বড়ই ছোঁয়াচে।
সরাসরি হাতের স্পর্শ, ফোমাইট, বাতাস, এমনকি হাত-মুখ ধোয়া ও অজু-গোসলের সময় পুকুর, নদী বা সুইমিংপুলের পানির মাধ্যমেও জীবাণুগুলো ছড়াতে পারে। কনজাংকটিভাইটিসে আক্রান্ত চোখে আঙুল বা হাত লাগালে হাতে লেগে থাকা জীবাণু রুমাল, তোয়ালে, গামছা, টিস্যু পেপার, কলম, পেনসিল, বইয়ের পাতা, খাতা, টেবিল, চেয়ার, দরজার সিটকিনি, কলের ট্যাপ ইত্যাদিতে লেগে থাকতে পারে। এগুলোকে তখন চিকিৎসার পরিভাষায় বলে ফোমাইট। রুমাল, তোয়ালে, গামছা, টিস্যু পেপার দিয়ে আক্রান্ত চোখ মুছলেও এগুলোতে জীবাণু লেগে থাকবে। এসব ফোমাইটের মাধ্যমেও জীবাণু ছড়িয়ে যেতে পারে অন্যের চোখে। এবং এসব কারণে একজনের চোখ ওঠা রোগ হলে তা মহামারি আকারে অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। শিশু বা বৃদ্ধ কেউই বাদ যায় না। তবে স্কুল বা অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অনেকে একসঙ্গে থাকে বলে তাদের একজনের কনজাংকটিভাইটিস হলে অন্যদের মধ্যে রোগটা ছড়িয়ে পড়ে খুব দ্রুত। ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে হলে চোখ ওঠার লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে শুরু করে সাত-আট দিন বা চিকিৎসা শুরু করার দু-তিন দিন পর্যন্ত এ রোগ অন্যজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটাকে বলে সংক্রমণের সময়কাল। আর ভাইরাসজনিত কারণে হলে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগে থেকে শুরু করে লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সাত থেকে ১০ দিন পর পর্যন্ত ভাইরাসগুলো অন্যদের মধ্যে ছড়াতে পারে। জীবাণু ঢোকার পাঁচ-সাত দিন পর চোখ ওঠার লক্ষণ প্রকাশ পায়। দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া কনজাংকটিভাইটিস যদিও তেমন কঠিন রোগ নয়, সাত থেকে ১০ দিনে ভালো হয়ে যায়, তবু এ রোগটি একেবারে কম কষ্টকর নয়।
চোখ ওঠা বা কনজাংকটিভাইটিস প্রতিরোধের উপায় আছে। সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া প্রতিরোধের খুব একটা ভালো উপায়। যার চোখ উঠেছে, সেও যেমন ঘন ঘন হাত ধোবে; যার হয়নি, রোগীর সংস্পর্শে আসা এমন সুস্থ লোকেরও তেমনি ঘন ঘন হাত ধুয়ে নিতে হবে। রোগীর ব্যবহূত রুমাল, তোয়ালে, গামছা, টিস্যু পেপার, চোখের ড্রপ, চোখের কসমেটিকস ইত্যাদি অন্যে ব্যবহার না করার মাধ্যমেও রোগটি প্রতিরোধ করা যাবে অনেকাংশে। আর রোগীর ব্যবহূত রুমাল, তোয়ালে, গামছা ইত্যাদি ধুয়ে ফেলতে হবে তাৎক্ষণিকভাবে। টিস্যু পেপার ফেলে দিতে হবে নিরাপদ স্থানে। রোগী বা সুস্থ সবারই চোখে হাত বা আঙুল না লাগানো অথবা চোখ না কচলানো—এসব অভ্যাসও প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে বেশ। চোখ ওঠা চোখে ভুলে আঙুল দিলে বা কচলালে সঙ্গে সঙ্গেই হাত ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। তাতে বিভিন্ন বস্তুতে রোগজীবাণু লেগে যাওয়ার আশঙ্কা কমে, কোনো বস্তুকে ফোমাইটে রূপান্তর করার আশঙ্কা কমে। আর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটাও জরুরি।
মো. শহীদুল্লাহ
বিভাগীয় প্রধান, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ, কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১২
shadin
দুইদিন যাবত আমার চোখ অনেক লাল হয়ে রয়েছে। ঘুমালে হাল্কা ময়্লা জমে এখন কি করতে পারি
Bangla Health
খুব সম্ভবত চোখ উঠেছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। রোদে-ধূলাবালিতে যাবেন না। ব্যথা হলে ডাক্তার দেখিয়ে নেবেন। আর যেহেতু ছোঁয়াচে রোগ, তাই অন্যের যাতে না হয় সেজন্য অন্যের কাছে যাবেন না।
রাকিব
চোখ উঠা রোগের কোনো প্রাথমিক চিকিত্সা আছে কি?
Bangla Health
প্রাথমিক চিকিৎসা বলতে বাড়তি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা উচিত।
পোস্টটিতেই সব বলা আছে। আরেকবার পড়ে নিন।