অ্যালার্ম বেজে থামল। স্নুজ বোতাম টিপলেন দুবার, তিনবার। টলমলে পায়ে এগোলেন স্নানঘরের দিকে, ধারাজলের নিচে দাঁড়ানোর জন্য। চুল ধুলেন, শরীর ধুলেন, স্নান হলো, শরীর মোছা হলো, এরপর প্রাতঃকৃত্য—পোশাক পরা, সামান্য প্রসাধনী, প্রাতরাশ, চা-পান, এরপর কর্মস্থলের দিকে দৌড়…।
সকালে শাওয়ারের নিচে স্নান কেবল একটি রীতি বা চর্চা নয়, অনেকের কাছে অবশ্য প্রয়োজনীয় কর্মও বটে।
অস্টিন, টেক্সাসের লেক অস্টিন স্পা রিসোর্টে স্পা ডিরেক্টর লাইনে ভারট্রিস বলেন, ‘অনেক সময়ই তা হয়ে ওঠে না। ছোট একটু চেষ্টায় এই শাওয়ার নেওয়ার সময় হতে পারে উজ্জীবনের সময়—মন ও শরীর চাঙা হয়ে উঠতে পারে দিন শুরুর জন্য।’
তিনি বলেন, ‘এর সবচেয়ে ভালো দিক হলো এ জন্য বেশি সময় লাগে না—সকালে অল্প সময় ব্যয় বড় গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তখন সময় বড় মূল্যবান।’
এই ধারাজলে স্নান হয়ে ওঠে পবিত্র, স্নিগ্ধ দিন শুরুর কাল।
শরীর পরিচ্ছন্ন করার জিনিসগুলো সুগন্ধি-সুবাসিত হলে মনকে করে প্রফুল্ল, উপভোগ করা যায় ধারাজলে স্নানের সময়টুকু।
স্পা সুপারভাইজার ভিকি কেইনস বলেন, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, বডিজেল বা সাবান—যা-ই ব্যবহার করা হোক, এ যেন বড় সুবাসিত। চমৎকার গন্ধ যেন থাকে এগুলোতে। নয়তো ধারাজলের নিচে দাঁড়ানোর আগে জ্বালিয়ে নিন স্নানঘরে তিন-চারটি সুবাসিত মোমবাতি, স্নানের শেষে প্রসাধনীর গন্ধ ও এই গন্ধ মিলে ম-ম করে যেন চারদিক!
পালাক্রমে গরম ও শীতল জলে স্নান, রক্ত চলাচল করে উজ্জীবিত, জাগ্রত করে শরীরকেও। ভেজা স্নানঘর থেকে এলেন শুকনো ভূমিতে—ধারাজলে স্নানে যে উজ্জীবিত হলেন, এর সুফলকে ধরে রাখার জন্য শরীরে মেখে নিন হাইড্রেটিং ময়েশ্চারাইজার বা বডিঅয়েল।
ত্বক আর্দ্র থাকতে থাকতেই যেন তা করা হয়; এতে ত্বকের আর্দ্রতা পড়ে আটকা, দিনভর তাই শরীর থাকে সিল্কের মতো মসৃণ। আর্দ্রকরণের পর টাওয়েল দিয়ে সামান্য শুষে নিতে পারেন। ত্বক যদি বেশি শুষ্ক থাকে, তাহলে ব্যবহার করুন জেল ময়েশ্চারাইজার, শুকিয়ে নিন—এরপর লোশন বা ক্রিম প্রয়োগ করুন। আর্দ্রতা পড়ে আটকা।
ফ্রিজে রাখা শীতল জলে চুমুক দিতে পারেন।
বাথরোব ও টাওয়েল যদি স্নানের আগে রোদে থাকে, গরম থাকে, স্নানের পর তা জড়ালে বড় আরাম!
আছে অ্যারোমাথেরাপি। আজকাল এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞও রয়েছেন।
Pure Skin : Organic Beauty Basics (Chronicle Books) লিখে খ্যাত বারবারা ক্লোজ বলেন, ‘অ্যারোমাথেরাপির সাহায্যে মেজাজকে তাৎক্ষণিক চনমনে করে ফেলা যায়।’
শ্রান্ত হলে: ফেনল তেল বা জিনজার অয়েল ৮-১০ ফোঁটা মিশিয়ে নিন এক আউন্স জলপাই তেলের সঙ্গে, নিন একটি ওয়াশক্লথ; সারা শরীরে লাগান, রক্ত চলাচল বাড়বে। চাপগ্রস্ত হলে ভালো হয় লেভেন্ডার তেল। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র স্নিগ্ধ করে। হাতে নিন দু-তিন ফোঁটা। ঘষুন। নাকের সামনে ধরুন প্যাকটি। গভীর শ্বাসের সঙ্গে নেন ভেতরে। আরাম পাবেন।
মন খারাপ: শাওয়ারের আগে, শাওয়ারের সময় ও পরে শ্বাসের সঙ্গে নিন দু-এক ফোঁটা লেমন বা গ্রেপফ্রুট তেল। সাইট্রাস সেল্ট হলো ‘সুখ তৈল’—আত্মার উত্তোলনে বড় সহায়ক।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১১
Leave a Reply