গরু ও খাসির মাংস কাঁচা অবস্থায় লাল রঙের হয়ে থাকে। এ কারণে এই মাংসকে ‘রেড মিট’ বলা হয়। মাংস প্রোটিনের ভালো উৎস। এতে লৌহের পরিমাণও রয়েছে অনেক। আবার ভিটামিন ‘এ’ ও ‘বি’, ফসফরাস ও জিংক রয়েছে। স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্য এবং রক্তস্বল্পতা দূরীকরণে মাংস বেশ বড় ভূমিকা রাখে।
রেড মিট শরীরের উপকার করলেও অনেক ক্ষেত্রে এটি বিপজ্জনক রূপে দেখা দেয়। যাঁদের ওজন বেশি, তাঁদের অবশ্যই মাংস পরিহার করে চলতে হবে। এ ছাড়া হূদেরাগী, কিডনির রোগী, আলসার, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরলসম্পন্ন রোগীদের যত কম মাংস খাওয়া যায়, তত ভালো। আবার কোনোরকম অসুস্থতা নেই, কিন্তু ভবিষ্যতে যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়েন, সে জন্যও মাংস কম খেতে হবে।
গরু ও খাসির মাংসে সম্পৃক্ত চর্বি বেশি থাকে। এ ছাড়া কোলেস্টেরল থাকে কলিজা, মগজ, হূৎপিণ্ড ও চর্বিতে। খাসির মাংসে চর্বি বেশি থাকে। কারণ, খাসির মাংসের প্রতি পরতে চর্বির দেখা মেলে। আর গরুর মাংসের চর্বি বেশির ভাগ আলগাভাবে থাকে, যা সহজে পৃথক করা যায়। চর্বি কমিয়ে মাংস থেকে গেলে বাড়তি চর্বি ছাড়িয়ে মাংস সেদ্ধ করে পানি ফেলে রান্না করলে কিছুটা নিরাপদ হবে।
পেট ফাঁপা ও কিডনিতে পাথর হলেও মাংস একেবারে বাদ দেওয়া প্রয়োজন। বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে হলে কলিজা, মগজ, সংরক্ষিত মাংস ও মাংসের স্যুপ না খাওয়াই ভালো। এ ছাড়া লিভার, গলব্লাডার ও অগ্ন্যাশয়ের অসুখেও প্রাণীজ চর্বি বাদ দেওয়া উচিত। এক জরিপে দেখা যায়, মাংস বেশি খাওয়ার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হূদেরাগ, ক্যানসার, বিভিন্ন ধরনের ক্রনিক অসুখ বেশি দেখা যায়। এ কারণে প্রাণীজ আমিষ যত কম খাওয়া যায়, ততই মঙ্গল। প্রতিদিন ৯০ থেকে ১০০ গ্রামের বেশি প্রাণীজ আমিষ খাওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল, শিম, বাদাম, মটরশুঁটি প্রাণীজ আমিষের বিকল্প হতে পারে। পৃথিবীতে প্রায় ১৫০টি প্রাণীসংক্রান্ত রোগের মধ্যে বেশির ভাগই মাংস থেকে উৎপত্তি। এতে অবস্থানকারী রোগজীবাণু বিষ উৎপন্ন করে। রোগজীবাণু দ্বারা মাংস বিষাক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, রোগাক্রান্ত পশু বাজারে বিক্রি করা এবং নোংরা কসাইখানায় পশু জবাই করা। আবার যথাযথ নিয়মে সংরক্ষণ না করলেও মাংস দূষিত হয়ে পড়ে। অস্বাস্থ্যকর উপায়ে রান্না করা মাংস থেকে কৃমি হতে পারে। গরু ও মহিষের অর্ধসেদ্ধ মাংস থেকে ফিতাকৃমির সৃষ্টি হয়। ফলে পেটে ব্যথা, পেট খারাপ, মাথাধরা, খিঁচুনি ও জ্বর হতে পারে।
কাঁচা মাংসে সহজেই ব্যাকটেরিয়া জন্মে। দ্রুত ফ্রিজে সংরক্ষণ করলে এটি ধ্বংস হয়ে যায়। আবার ১৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপে রান্না করলেও খাদ্যে বিষ উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া মরে যায়।
টিনিয়া সেলিয়াম নামক একধরনের পরজীবী রেড মিটে থাকে, যা দেহে বিশেষ ধরনের টিউবার কিউলোসিসের (যক্ষ্মা) জন্ম দেয়। এই জাতীয় জীবাণু অন্ত্র, পাকস্থলী, যকৃৎ প্রভৃতি জায়গায় প্রবেশ করে আমাদের অসুস্থ করে তোলে। অর্ধসেদ্ধ মাংসই দেহে এ ধরনের রোগের বিস্তার ঘটায়। এ কারণে শিককাবাব ও বার-বি-কিউ খেতে গেলে সাবধান হওয়া প্রয়োজন।
সুতরাং, ঈদের আনন্দ পুরোপুরি পেতে হলে মাত্রাজ্ঞান রেখে এবং সতর্কতার সঙ্গে জীবাণুমুক্ত মাংস খাওয়া উচিত। একেবারে বাদ না দিয়ে সীমিত পরিমাণে খেলে তেমন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সুস্বাস্থ্যের জন্য পরিমিত আহারই উত্তম।
আখতারুন নাহার আলো
বিভাগীয় প্রধান, পুষ্টি বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১১
Rasel Ahmed-01
খুব ভাল খবর।। এরকম আর নতুন সব খবর চাই।।